মনোনয়নপত্র দাখিলের সঙ্গে জমা দেওয়া সরকারদলীয় সাবেক মন্ত্রী ও এমপিদের এবারের প্রার্থিতার হলফনামায় আয় বৃদ্ধির অবিশ্বাস্য চিত্র পাওয়া গেছে। হলফনামা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খানের সম্পদ বেড়েছে প্রায় ১৮০ গুণ, সরকারদলীয় এমপি ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের সম্পদ বেড়েছে প্রায় ৯১ গুণ, মির্জা আজমের সম্পদ বেড়েছে প্রায় ৮০ গুণ। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হকের ৫ বছরে ১২ কোটি ৩০ লাখ টাকার সম্পদ বেড়েছে।
এ ছাড়া সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত
সেনগুপ্ত, সরকারদলীয় এমপি সুকুমার রঞ্জন ঘোষেরও অস্বাভাবিক আয়ের পরিমাণ দেখা গেছে হলফনামায়।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেন ১১০৭ জন। এর মধ্যে ৫ ও ৬ ডিসেম্বর বাছাইয়ের পরে ৮৪৭ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী এসব প্রার্থীর হলফনামায় উন্নয়ন প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন, তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিবরণ ও তাদের ওপর নির্ভরশীলদের আয়ের হিসাব দেখানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, কোনো প্রার্থীর হলফনামার তথ্যে গরমিল প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। এই তথ্য নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে। দেশের যে কোনো নাগরিকের এই তথ্যের ভিত্তিতে আইনের আশ্রয় নেওয়ার সুযোগও রয়েছে।
মির্জা আজম : জামালপুর-৩ আসনের এমপি মির্জা আজম ২০০৮ সালে প্রার্থিতা দাখিলের সময় হলফনামায় তার যে সম্পদের বিবরণ দিয়েছিলেন তার মূল্য ছিল ২৪ লাখ ৩৬ হাজার ৮৭৭ টাকা। এ বছর হলফনামায় যে বিবরণ দিয়েছেন তাতে সম্পদের পরিমাণ ১৯ কোটি ৪৮ লাখ ২৫ হাজার ৪২৫ টাকা। অর্থাৎ গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে তার সম্পদ বেড়েছে প্রায় ৮০ গুণ।
২০০৮ সালে হলফনামায় সম্পদের বিবরণে মির্জা আজম তার বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ২৫ হাজার টাকা ও স্ত্রীর আয় ছিল ৯ হাজার ৬০০ টাকা। এবারে তার আয় হয়েছে ৬৬ হাজার টাকা ও স্ত্রীর কোনো আয়ের কথা উল্লেখ নেই। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানতে এবার আয় দেখানো হয়েছে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৭৮৫ টাকা। গতবার তা উল্লেখ ছিল না। ব্যাংকে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ এবার দেখানো হয়েছে ১১ লাখ ১৮ হাজার ৪১৪ টাকা। স্ত্রীর নামে কোনো টাকা জমা নেই। ২০০৮ সালে তার হাতে নগদ ছিল ২৩ লাখ ৩২ হাজার ৬২৫ টাকা ও স্ত্রীর ছিল ১৯ লাখ ৫৬ হাজার ৬৮ টাকা। এবারে নিজের হাতে ১৮ লাখ ও স্ত্রীর হাতে ১৮ লাখ ৪ হাজার ৭১৯ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। বন্ড, ঋণপত্র ও শেয়ার ২০০৮ সালে না থাকলেও এবার তার নামে বিভিন্ন কোম্পানির ২ লাখ ৭০ হাজার শেয়ার দেখানো হয়েছে। যার মূল্য ৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে বিভিন্ন কোম্পানির ৫ হাজার ৮৫০টি শেয়ার দেখানো হয়েছে, যার মূল্য ১৯ লাখ টাকা। সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে ২০০৮ সালে কোনো বিনিয়োগ না থাকলেও এবার দেখানো হয়েছে নিজ নামে ২৪ লাখ ও স্ত্রীর নামে ৬০ লাখ ৬২ হাজার ৯২২। স্ত্রীর নামে আগে ২০ ভরি স্বর্ণ থাকলেও এবারে দেখানো হয়েছে ৬২ ভরি। অকৃষি জমির মূল্য ২০০৮ সালের হলফনামায় ৬ লাখ ৯ ৬৫২ টাকা দেখানো হলেও এবার দেখানো হয়েছে ২ কোটি ৮৯ লাখ ২৫ হাজার ৬৬২ টাকা। আগে একটিও না থাকলেও এবার আবাসিক বা বাণিজ্যিক দালানের সংখ্যা দেখানো হয়েছে ৯টি, যার মূল্য ১ কোটি ২১ লাখ ৯৮ হাজার ৩৯১ টাকা। ঢাকায় এবারে একটি বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য দেখানো হয়েছে ৩ কোটি ৭১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৯৩ টাকা, যা ২০০৮ সালের হলফনামায় প্রযোজ্য নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।
আবদুল মান্নান খান : ঢাকা-১ আসনের এমপি প্রার্থী সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান। ২০০৮ সালে দেওয়া হলফনামার তুলনায় এবারের হলফনায় সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীর আয় বেড়েছে প্রায় ১৮০ গুণ। গতবারের সম্পদ বিবরণীর মাত্র ৩ লাখ ২১ হাজার টাকার আয়ের বিবরণী পাঁচ বছরের ব্যবধানে পেঁৗছেছে ৫ কোটি ৮৫ লাখ ২৪ হাজার টাকায়। বার্ষিক আয় কৃষি খাতে দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার টাকা। পুঁজিবাজার বা সঞ্চয়পত্র থেকে আগে তার আয় না থাকলেও এবারে আয় ১ লাখ ১১ হাজার টাকা। পেশাগত আয় প্রায় সাড়ে তিনগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৭৩ হাজার। আগে মৎস্য খাত ও রেমিট্যান্স থেকে কোনো আয় না থাকলেও এবার হলফনামায় তা দেখানো হয়েছে আয় ১ কোটি ৪৪ লাখ ৬৩ হাজার টাকা।
২০০৮ সালে নিজের ও স্ত্রীর হাতে নগদ মোট ৭৬ হাজার টাকা থাকলেও এবার নিজের হাতেই নগদ আছে ৪০ লাখ ও স্ত্রীর কাছে ১৫ লাখ টাকা। আয়ের ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারের কথা উল্লেখ করা হলেও এ খাতে কত টাকা তিনি তা উল্লেখ করেননি। তবে পুঁজিবাজারে স্ত্রীর নামে রয়েছে ২ লাখ টাকা। অতীতে সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী আমানত হিসেবে নিজের ও স্ত্রীর নামে কিছু না থাকলেও এবার নিজের নামে রয়েছে ৪৩ লাখ টাকা, স্ত্রীর নামে সাড়ে ৬ লাখ টাকা। মোটরগাড়ির দাম ৪৪ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ৬০ লাখ টাকার একটি অ্যাপার্টমেন্টও।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ৫ একর কৃষি জমি। নিজ নামে ২০০৮ সালের হলফনামায় গুলশানে ১ লাখ টাকার ও স্ত্রীর নামে গুলশানে মোট ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকার অকৃষি জমির অর্জনকালীন মূল্য উল্লেখ ছিল। এবারের হলফনামায় তার নিজের ৩১ লাখ ৭৪ হাজার টাকার কৃষি জমি এবং স্ত্রীর নামে অকৃষি জমির দাম ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন অতীতে নেই উল্লেখ করা হলেও এবার 'নেই'র স্থলে উল্লেখ আছে ১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এ ছাড়া তার মাছের খামার যুক্ত হয়েছে পাঁচটি।
ফজলে নূর তাপস : ঢাকা-১০ আসনের এমপি শেখ ফজলে নুর তাপসের সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৯১ গুণ। গতবারের ৩ কোটি ৮১ লাখ ৪৮ হাজার ১১৩ টাকার সম্পদের পরিমাণ পাঁচ বছরের ব্যবধানে বেড়ে হয়েছে ৩৪৭ কোটি ১৫ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। হলফনামার সম্পদ বিবরণীতে এ বছর তার বার্ষিক আয় ২ কোটি ১১ লাখ ৮৬ হাজার। এর মধ্যে পেশাগত আয় ১ কোটি ১৪ লাখ। অন্যান্য আয়ের খাত কৃষি, শেয়ার, অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া। ২০০৮ সালের হলফনামায় তার কৃষি খাতে কোনো আয় ছিল না। এবার তার পেশাগত আয় বেড়েছে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ৬ কোটি ২ লাখ ৭৬ হাজার টাকা, যা ২০০৮ সালের হলফনামায় ছিল মাত্র ৮৯ লাখ ৪৯ হাজার ৯১৭ টাকা। তখন তার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মাত্র ১ লাখ ৯৮ হাজার ১৯৬ টাকা থাকলেও এবার তা দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ২ লাখ ৩৯ হাজার টাকায়। পুঁজিবাজারে আগে তার বিনিয়োগ ছিল ৩ লাখ ৩০ হাজার, যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ কোটি ১৪ লাখ। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ৩১ লাখ ২০ হাজারের স্থলে হয়েছে ৩ কোটি ৩ লাখ। স্বর্ণালঙ্কারের দাম প্রায় চারগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ। ইলেকট্রনিকস ও আসবাবপত্রে দাম ৭ লাখ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ। স্ত্রীর নামে ব্যাংকে আগে কোনো টাকা না থাকলেও এবার আছে ২৪ লাখ ৭২ হাজার। পুঁজিবাজার ও সঞ্চয়পত্রে স্ত্রীর নামে বিনিয়োগ আড়াই লাখ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ লাখ টাকা। তাপসের সব স্থাবর সম্পদই যৌথ মালিকানায়। যৌথ মালিকানার এসব সম্পদের মধ্যে রয়েছে কৃষি জমির পরিমাণ ২ বিঘা সাড়ে ১০ কাঠা (দাম উল্লেখ নেই)। মতিঝিলে একটি ভবন (দাম উল্লেখ নেই)। ১০ কাঠা অকৃষি জমির দাম ২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, যার একই পরিমাণের অর্জনকালীন মূল্য ২০০৮ সালের হলফনামায় ছিল ৪৬ লাখ ৫৪ হাজার ৭৯ টাকা। ২০০৮ সালের হলফনামায় কোনো অ্যাপার্টমেন্ট উল্লেখ না থাকলেও এবার অ্যাপার্টমেন্টের দাম দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৪ লাখ। চা ও রাবার বাগান অতীতে না থাকলেও এবার দাম উল্লেখ করা হযেছে ১২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এ ছাড়া স্ত্রীর নামে ধানমণ্ডিতে একটি পল্গটের দাম ১ কোটি ৬৬ লাখ, রাবার ও চা বাগানের দাম ১ কোটি ২ লাখ।
রুহুল হক : সাতক্ষীরা- ৩ (দেবহাটা, আশাশুনি এবং কালীগঞ্জের একাংশ ) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক। বর্তমানে তার স্ত্রীর আয়ের কোনো উৎস নেই। তবে গত ৫ বছরে তার নিজের তুলনায় স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে কয়েক গুণ। তাই বলে একেবারে থেমে ছিল না নিজেরটাও। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে রুহুল হকের দেওয়া হলফনামার তথ্যমতে, কৃষি খাত থেকে তার বার্ষিক আয় ১০ হাজার টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫ হাজার টাকা, বাড়ি ভাড়া দ্বিগুণ হয়ে ৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং ব্যবসা থেকে আয় ৩৩ হাজার ৩০০ টাকা কমে ২২ লাখ ২৩ হাজার ৪০০ টাকা হয়েছে। তবে নতুন করে শেয়ার থেকে তার বার্ষিক আয় হচ্ছে ৩৪ হাজার ২০ হাজার ৭৪১ টাকা। পেশা থেকে কোনো আয় না থাকলেও চাকরি থেকে তিনি গত পাঁচ বছরে আয় করেছেন ৬ লাখ ৩৭ হাজার ২০০ টাকা। তার ওপর নির্ভরশীল, এমনকি তার স্ত্রীর নামেও কোনো আয় নেই বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
তবে অস্থাবর সম্পদের তালিকায় নিজের হাতে নগদ ২১ লাখ ৯৬ হাজার ১৭৪ টাকা কমে ২৯ হাজার ৪৩২ টাকা ও স্ত্রীর হাতে নগদ ৩৭ লাখ ৬২ হাজার ২২৪ টাকা বেড়ে ৪৯ লাখ ৩৪ হাজার ১৯৪ টাকা আছে। নিজের নামে ৩০ জুন পর্যন্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আছে ২ কোটি ৬২ লাখ ৮৩ হাজার ৫২৩ টাকা ও স্ত্রীর নামে ৭ কোটি ৫৩ লাখ ১১ হাজার ২৪০ টাকা, যা ২০০৮ সালের হলফনামায় ছিল যথাক্রমে ৮৭ লাখ ৭২ হাজার ৭৮ টাকা ও ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৩০ টাকা। শেয়ার ও বন্ডে নিজের নামে আগে ১ কোটি ১৯ লাখ ৬০ হাজার ও স্ত্রীর নামে ৬০ লাখ ২০ হাজার টাকা থাকলেও এবার শুধু নিজের নামে এ খাতে আছে ২ কোটি ৮০ লাখ ৩৩ হাজার ৫০৮ টাকা। সঞ্চয়পত্রে এবার প্রায় দ্বিগুণ হয়ে নিজের নামে হয়েছে ২ কোটি ৩০ লাখ ৬৫ হাজার ৯২২ টাকা ও স্ত্রীর নামে ৩৪ লাখ ২৫ হাজার ৫৬৫ টাকা। নিজের নামে পুরাতন গাড়ির দাম উল্লেখ আছে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
স্থাবব সম্পত্তির তালিকায় এবার ২০০৮ সালের সম্পত্তিই উল্লেখ আছে। তবে পরিবর্তন হয়েছে তার বাড়ির অর্জনকালীন মূল্য! ২০০৮ সালে বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্টের অর্জনকালীন মূল্য ১ কোটি ২৮ লাখ ৭৬২ টাকা উল্লেখ করা হলেও এবার তিনি দিয়েছেন অর্ধেক মূল্য মাত্র ৫৬ লাখ টাকা। তবে এবার তিনি স্ত্রী ইলা হকের কাছে দেনা আছেন ১ কোটি টাকা।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত : সুনামগঞ্জ-২ আসনে আ'লীগের দলীয় প্রার্থী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের আয়ের উৎস কৃষি খাত, বাড়ি ভাড়া, শেয়ার ও পরিতোষিক ভাতা। কৃষি খাতে তার আয় প্রায় তিনগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার টাকা। বাড়ি ভাড়া থেকে মাত্র ৫৫ হাজার ৩৭১ টাকা আয় বেড়ে হয়েছে ৫ লাখ ২০ হাজার ৯১৮ টাকা। অতীতে মৎস্য খামারের ব্যবসা থেকে তার বার্ষিক ৬ লাখ ৪৮ হাজার ২০০ টাকা আয় হলেও এবার তার ব্যবসা থেকে কোনো আয় নেই। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে তার আয় কমেছে। এ খাতে ২০০৮ সালে তার ওপর নির্ভরশীলদের বার্ষিক ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩৫৫ টাকা আয় হলেও এবার কোনো আয়ের উল্লেখ নেই।
অস্থাবর সম্পদ_ নিজের নামে অতীতে ২৯ লাখ ৫২ হাজার ৪৯৯ টাকা ব্যাংকে থাকলেও এবার ওই ঘরটি ফাঁকা রাখা হয়েছে। স্ত্রীর নামে ৪ লাখ ৯৯ হাজারের স্থলে বসেছে ৬ লাখ ৯১ হাজার ৯০৬ টাকা আর নির্ভরশীলদের ২ লাখ ৯২ হাজার ২৪ টাকার স্থলে বসেছে ক্রসচিহ্ন। শেয়ার বাজারে নিজের নামে ১ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার ৮০০ টাকা থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৩ লাখ ৭২ হাজার ৮০০ টাকা। স্ত্রীর নামে অপরিবর্তিত আছে ৪৬ লাখ ১১ হাজার ৪০০ টাকার শেয়ার। তবে সঞ্চয়পত্রে নিজের নামে ১১ লাখ ২০ হাজার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ২৫ হাজার ও স্ত্রীর নামে ৫৩ লাখ ৯৫ হাজার ৯৬০ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৪ লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ টাকা। নিজের নামে ৩০ লাখ টাকার গাড়ির স্থলে হয়েছে ৯৫ লাখ ৯২ হাজার ৫৬৮ টাকা।
স্থাবর সম্পত্তিতে তার কৃষি জমির পরিমাণ কমেছে ৪২ একর, অকৃষি জমির ক্ষেত্রে অতীতে দশমিক ৯১ একর লেখা থাকলেও এবার উল্লেখ করেছেন '২টি'র মূল্য ২২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। দালান বা আবাসিক ভবনের অর্জনকালীন মূল্য ২০০৮ সালে ৫১ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৪ টাকা উল্লেখ করলেও এবার বলেছেন ৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা! আগে তার ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা মূল্যের দুটি টিনশেড পাকা ঘর থাকলেও এখন সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন ৫৪ লাখ ৫ হাজার ১৮৪ হাজার টাকা। তার ২৮ একরের দুটি চা বাগানের মূল্য ২০০৮ সালে ২০ লাখ ৪৪ হাজার ৬৯ টাকা উল্লেখ থাকলেও এবার তা নেই উল্লেখ করা হয়েছে।
সুকুমার রঞ্জন ঘোষ : মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের এমপি সুকুমার রঞ্জন ঘোষের পেশা ব্যবসা। তিনি ৬টি প্রতিষ্ঠানের মালিক। তার আয়ের উৎস হিসেবে দেখানো হয়েছে ব্যবসা থেকে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা। তার ওপর নির্ভরশীলদের আয় ৩৮ লাখ ৩০৬ টাকা। সঞ্চয়পত্র থেকে আয় এক লাখ ২৩ হাজার ৭৩১ টাকা। এই খাতে নির্ভরশীলদের আয় ৩৮ লাখ ৩০৬ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজ হাতে নগদ ৭ লাখ ৭৭ হাজার ৭৪৯ টাকা। স্ত্রীর কাছে ৩১ লাখ ৩ হাজার ৫৫৬ টাকা। নির্ভরশীলদের রয়েছে ৫৭ লাখ ৪৫ হাজার ৭২৬ টাকা। ব্যাংকে জমা নিজ নামে ১৪ লাখ ৭১০ টাকা। স্ত্রীর নামে ৯৮ লাখ ৮৭ হাজার ৩১০ টাকা। নির্ভরশীলদের ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৯২ টাকা। তালিকা ছাড়া শেয়ার আছে ৮ হাজার ৪১৫টি, যার মূল্য ১২ লাখ ১৫ হাজার টাকা। তালিকাভুক্ত শেয়ার আছে ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৯৭৩টি, যার মূল্য ৩৫ লাখ ৫৯ হাজার ৭৩০ টাকা। স্ত্রীর নামে শেয়ার আছে ১০ লাখ ৮১ হাজার ৬৩৬ টাকার। সঞ্চয়পত্র নিজ নামে ৭ লাখ ৯৫ হাজার ৬৪৫ টাকা ও স্ত্রীর নামে ২ কোটি ১৮ লাখ ৩২ হাজার ৯৬৯ টাকার। কোম্পানি ও নিজ নামে গাড়ির মূল্য ৭৭ লাখ ৯৯ হাজার ৫৪৯ টাকা। স্ত্রীর নামে এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের গাড়ি আছে। স্বর্ণ নিজের ৫ ভরি, স্ত্রীর ১২ ভরি।
স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে কৃষি জমির মূল্য ৩৬ লাখ ৮৩ হাজার ৯১৬ টাকা। নির্ভরশীলদের নামে জমি ১৫ লাখ টাকার। অকৃষি জমি নিজ নামে গাজীপুরে ২৭ শতাংশ, নিকুঞ্জে ৩ কাঠা, মালিবাগে আড়াই কাঠা এবং স্ত্রীর নামে গাজীপুরে সাড়ে ৩২ শতাংশ, খিলগাঁওয়ে আড়াই কাঠা, জোয়ারসাহারায় ১০ কাঠা। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া দালান একটি, যার মূল্য ৪০ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে বসুন্ধরা শপিংমলে একটি দোকান, যার মূল্য দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ টাকা এবং ধানমণ্ডিতে ৪৮ লাখ ৪৭ হাজার ২৯ টাকার একটি বাড়ি রয়েছে। নির্ভরশীলদের নামে ধানমণ্ডিতে ১৮ লাখ ৮১ হাজার ৬০০ টাকা মূল্যের আরও একটি বাড়ি আছে তার। তবে কোম্পানির যৌথ অংশীদার হিসেবে বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ২৭ কোটি ৫৮ লাখ ৫৪ হাজার ৮০০ টাকার তার দায়দেনা রয়েছে
এ ছাড়া সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত
সেনগুপ্ত, সরকারদলীয় এমপি সুকুমার রঞ্জন ঘোষেরও অস্বাভাবিক আয়ের পরিমাণ দেখা গেছে হলফনামায়।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেন ১১০৭ জন। এর মধ্যে ৫ ও ৬ ডিসেম্বর বাছাইয়ের পরে ৮৪৭ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী এসব প্রার্থীর হলফনামায় উন্নয়ন প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন, তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিবরণ ও তাদের ওপর নির্ভরশীলদের আয়ের হিসাব দেখানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, কোনো প্রার্থীর হলফনামার তথ্যে গরমিল প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। এই তথ্য নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে। দেশের যে কোনো নাগরিকের এই তথ্যের ভিত্তিতে আইনের আশ্রয় নেওয়ার সুযোগও রয়েছে।
মির্জা আজম : জামালপুর-৩ আসনের এমপি মির্জা আজম ২০০৮ সালে প্রার্থিতা দাখিলের সময় হলফনামায় তার যে সম্পদের বিবরণ দিয়েছিলেন তার মূল্য ছিল ২৪ লাখ ৩৬ হাজার ৮৭৭ টাকা। এ বছর হলফনামায় যে বিবরণ দিয়েছেন তাতে সম্পদের পরিমাণ ১৯ কোটি ৪৮ লাখ ২৫ হাজার ৪২৫ টাকা। অর্থাৎ গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে তার সম্পদ বেড়েছে প্রায় ৮০ গুণ।
২০০৮ সালে হলফনামায় সম্পদের বিবরণে মির্জা আজম তার বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ২৫ হাজার টাকা ও স্ত্রীর আয় ছিল ৯ হাজার ৬০০ টাকা। এবারে তার আয় হয়েছে ৬৬ হাজার টাকা ও স্ত্রীর কোনো আয়ের কথা উল্লেখ নেই। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানতে এবার আয় দেখানো হয়েছে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৭৮৫ টাকা। গতবার তা উল্লেখ ছিল না। ব্যাংকে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ এবার দেখানো হয়েছে ১১ লাখ ১৮ হাজার ৪১৪ টাকা। স্ত্রীর নামে কোনো টাকা জমা নেই। ২০০৮ সালে তার হাতে নগদ ছিল ২৩ লাখ ৩২ হাজার ৬২৫ টাকা ও স্ত্রীর ছিল ১৯ লাখ ৫৬ হাজার ৬৮ টাকা। এবারে নিজের হাতে ১৮ লাখ ও স্ত্রীর হাতে ১৮ লাখ ৪ হাজার ৭১৯ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। বন্ড, ঋণপত্র ও শেয়ার ২০০৮ সালে না থাকলেও এবার তার নামে বিভিন্ন কোম্পানির ২ লাখ ৭০ হাজার শেয়ার দেখানো হয়েছে। যার মূল্য ৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে বিভিন্ন কোম্পানির ৫ হাজার ৮৫০টি শেয়ার দেখানো হয়েছে, যার মূল্য ১৯ লাখ টাকা। সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে ২০০৮ সালে কোনো বিনিয়োগ না থাকলেও এবার দেখানো হয়েছে নিজ নামে ২৪ লাখ ও স্ত্রীর নামে ৬০ লাখ ৬২ হাজার ৯২২। স্ত্রীর নামে আগে ২০ ভরি স্বর্ণ থাকলেও এবারে দেখানো হয়েছে ৬২ ভরি। অকৃষি জমির মূল্য ২০০৮ সালের হলফনামায় ৬ লাখ ৯ ৬৫২ টাকা দেখানো হলেও এবার দেখানো হয়েছে ২ কোটি ৮৯ লাখ ২৫ হাজার ৬৬২ টাকা। আগে একটিও না থাকলেও এবার আবাসিক বা বাণিজ্যিক দালানের সংখ্যা দেখানো হয়েছে ৯টি, যার মূল্য ১ কোটি ২১ লাখ ৯৮ হাজার ৩৯১ টাকা। ঢাকায় এবারে একটি বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য দেখানো হয়েছে ৩ কোটি ৭১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৯৩ টাকা, যা ২০০৮ সালের হলফনামায় প্রযোজ্য নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।
আবদুল মান্নান খান : ঢাকা-১ আসনের এমপি প্রার্থী সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান। ২০০৮ সালে দেওয়া হলফনামার তুলনায় এবারের হলফনায় সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীর আয় বেড়েছে প্রায় ১৮০ গুণ। গতবারের সম্পদ বিবরণীর মাত্র ৩ লাখ ২১ হাজার টাকার আয়ের বিবরণী পাঁচ বছরের ব্যবধানে পেঁৗছেছে ৫ কোটি ৮৫ লাখ ২৪ হাজার টাকায়। বার্ষিক আয় কৃষি খাতে দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার টাকা। পুঁজিবাজার বা সঞ্চয়পত্র থেকে আগে তার আয় না থাকলেও এবারে আয় ১ লাখ ১১ হাজার টাকা। পেশাগত আয় প্রায় সাড়ে তিনগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৭৩ হাজার। আগে মৎস্য খাত ও রেমিট্যান্স থেকে কোনো আয় না থাকলেও এবার হলফনামায় তা দেখানো হয়েছে আয় ১ কোটি ৪৪ লাখ ৬৩ হাজার টাকা।
২০০৮ সালে নিজের ও স্ত্রীর হাতে নগদ মোট ৭৬ হাজার টাকা থাকলেও এবার নিজের হাতেই নগদ আছে ৪০ লাখ ও স্ত্রীর কাছে ১৫ লাখ টাকা। আয়ের ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারের কথা উল্লেখ করা হলেও এ খাতে কত টাকা তিনি তা উল্লেখ করেননি। তবে পুঁজিবাজারে স্ত্রীর নামে রয়েছে ২ লাখ টাকা। অতীতে সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী আমানত হিসেবে নিজের ও স্ত্রীর নামে কিছু না থাকলেও এবার নিজের নামে রয়েছে ৪৩ লাখ টাকা, স্ত্রীর নামে সাড়ে ৬ লাখ টাকা। মোটরগাড়ির দাম ৪৪ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ৬০ লাখ টাকার একটি অ্যাপার্টমেন্টও।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ৫ একর কৃষি জমি। নিজ নামে ২০০৮ সালের হলফনামায় গুলশানে ১ লাখ টাকার ও স্ত্রীর নামে গুলশানে মোট ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকার অকৃষি জমির অর্জনকালীন মূল্য উল্লেখ ছিল। এবারের হলফনামায় তার নিজের ৩১ লাখ ৭৪ হাজার টাকার কৃষি জমি এবং স্ত্রীর নামে অকৃষি জমির দাম ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন অতীতে নেই উল্লেখ করা হলেও এবার 'নেই'র স্থলে উল্লেখ আছে ১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এ ছাড়া তার মাছের খামার যুক্ত হয়েছে পাঁচটি।
ফজলে নূর তাপস : ঢাকা-১০ আসনের এমপি শেখ ফজলে নুর তাপসের সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৯১ গুণ। গতবারের ৩ কোটি ৮১ লাখ ৪৮ হাজার ১১৩ টাকার সম্পদের পরিমাণ পাঁচ বছরের ব্যবধানে বেড়ে হয়েছে ৩৪৭ কোটি ১৫ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। হলফনামার সম্পদ বিবরণীতে এ বছর তার বার্ষিক আয় ২ কোটি ১১ লাখ ৮৬ হাজার। এর মধ্যে পেশাগত আয় ১ কোটি ১৪ লাখ। অন্যান্য আয়ের খাত কৃষি, শেয়ার, অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া। ২০০৮ সালের হলফনামায় তার কৃষি খাতে কোনো আয় ছিল না। এবার তার পেশাগত আয় বেড়েছে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ৬ কোটি ২ লাখ ৭৬ হাজার টাকা, যা ২০০৮ সালের হলফনামায় ছিল মাত্র ৮৯ লাখ ৪৯ হাজার ৯১৭ টাকা। তখন তার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মাত্র ১ লাখ ৯৮ হাজার ১৯৬ টাকা থাকলেও এবার তা দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ২ লাখ ৩৯ হাজার টাকায়। পুঁজিবাজারে আগে তার বিনিয়োগ ছিল ৩ লাখ ৩০ হাজার, যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ কোটি ১৪ লাখ। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ৩১ লাখ ২০ হাজারের স্থলে হয়েছে ৩ কোটি ৩ লাখ। স্বর্ণালঙ্কারের দাম প্রায় চারগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ। ইলেকট্রনিকস ও আসবাবপত্রে দাম ৭ লাখ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ। স্ত্রীর নামে ব্যাংকে আগে কোনো টাকা না থাকলেও এবার আছে ২৪ লাখ ৭২ হাজার। পুঁজিবাজার ও সঞ্চয়পত্রে স্ত্রীর নামে বিনিয়োগ আড়াই লাখ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ লাখ টাকা। তাপসের সব স্থাবর সম্পদই যৌথ মালিকানায়। যৌথ মালিকানার এসব সম্পদের মধ্যে রয়েছে কৃষি জমির পরিমাণ ২ বিঘা সাড়ে ১০ কাঠা (দাম উল্লেখ নেই)। মতিঝিলে একটি ভবন (দাম উল্লেখ নেই)। ১০ কাঠা অকৃষি জমির দাম ২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, যার একই পরিমাণের অর্জনকালীন মূল্য ২০০৮ সালের হলফনামায় ছিল ৪৬ লাখ ৫৪ হাজার ৭৯ টাকা। ২০০৮ সালের হলফনামায় কোনো অ্যাপার্টমেন্ট উল্লেখ না থাকলেও এবার অ্যাপার্টমেন্টের দাম দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৪ লাখ। চা ও রাবার বাগান অতীতে না থাকলেও এবার দাম উল্লেখ করা হযেছে ১২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এ ছাড়া স্ত্রীর নামে ধানমণ্ডিতে একটি পল্গটের দাম ১ কোটি ৬৬ লাখ, রাবার ও চা বাগানের দাম ১ কোটি ২ লাখ।
রুহুল হক : সাতক্ষীরা- ৩ (দেবহাটা, আশাশুনি এবং কালীগঞ্জের একাংশ ) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক। বর্তমানে তার স্ত্রীর আয়ের কোনো উৎস নেই। তবে গত ৫ বছরে তার নিজের তুলনায় স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে কয়েক গুণ। তাই বলে একেবারে থেমে ছিল না নিজেরটাও। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে রুহুল হকের দেওয়া হলফনামার তথ্যমতে, কৃষি খাত থেকে তার বার্ষিক আয় ১০ হাজার টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫ হাজার টাকা, বাড়ি ভাড়া দ্বিগুণ হয়ে ৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং ব্যবসা থেকে আয় ৩৩ হাজার ৩০০ টাকা কমে ২২ লাখ ২৩ হাজার ৪০০ টাকা হয়েছে। তবে নতুন করে শেয়ার থেকে তার বার্ষিক আয় হচ্ছে ৩৪ হাজার ২০ হাজার ৭৪১ টাকা। পেশা থেকে কোনো আয় না থাকলেও চাকরি থেকে তিনি গত পাঁচ বছরে আয় করেছেন ৬ লাখ ৩৭ হাজার ২০০ টাকা। তার ওপর নির্ভরশীল, এমনকি তার স্ত্রীর নামেও কোনো আয় নেই বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
তবে অস্থাবর সম্পদের তালিকায় নিজের হাতে নগদ ২১ লাখ ৯৬ হাজার ১৭৪ টাকা কমে ২৯ হাজার ৪৩২ টাকা ও স্ত্রীর হাতে নগদ ৩৭ লাখ ৬২ হাজার ২২৪ টাকা বেড়ে ৪৯ লাখ ৩৪ হাজার ১৯৪ টাকা আছে। নিজের নামে ৩০ জুন পর্যন্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আছে ২ কোটি ৬২ লাখ ৮৩ হাজার ৫২৩ টাকা ও স্ত্রীর নামে ৭ কোটি ৫৩ লাখ ১১ হাজার ২৪০ টাকা, যা ২০০৮ সালের হলফনামায় ছিল যথাক্রমে ৮৭ লাখ ৭২ হাজার ৭৮ টাকা ও ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৩০ টাকা। শেয়ার ও বন্ডে নিজের নামে আগে ১ কোটি ১৯ লাখ ৬০ হাজার ও স্ত্রীর নামে ৬০ লাখ ২০ হাজার টাকা থাকলেও এবার শুধু নিজের নামে এ খাতে আছে ২ কোটি ৮০ লাখ ৩৩ হাজার ৫০৮ টাকা। সঞ্চয়পত্রে এবার প্রায় দ্বিগুণ হয়ে নিজের নামে হয়েছে ২ কোটি ৩০ লাখ ৬৫ হাজার ৯২২ টাকা ও স্ত্রীর নামে ৩৪ লাখ ২৫ হাজার ৫৬৫ টাকা। নিজের নামে পুরাতন গাড়ির দাম উল্লেখ আছে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
স্থাবব সম্পত্তির তালিকায় এবার ২০০৮ সালের সম্পত্তিই উল্লেখ আছে। তবে পরিবর্তন হয়েছে তার বাড়ির অর্জনকালীন মূল্য! ২০০৮ সালে বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্টের অর্জনকালীন মূল্য ১ কোটি ২৮ লাখ ৭৬২ টাকা উল্লেখ করা হলেও এবার তিনি দিয়েছেন অর্ধেক মূল্য মাত্র ৫৬ লাখ টাকা। তবে এবার তিনি স্ত্রী ইলা হকের কাছে দেনা আছেন ১ কোটি টাকা।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত : সুনামগঞ্জ-২ আসনে আ'লীগের দলীয় প্রার্থী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের আয়ের উৎস কৃষি খাত, বাড়ি ভাড়া, শেয়ার ও পরিতোষিক ভাতা। কৃষি খাতে তার আয় প্রায় তিনগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার টাকা। বাড়ি ভাড়া থেকে মাত্র ৫৫ হাজার ৩৭১ টাকা আয় বেড়ে হয়েছে ৫ লাখ ২০ হাজার ৯১৮ টাকা। অতীতে মৎস্য খামারের ব্যবসা থেকে তার বার্ষিক ৬ লাখ ৪৮ হাজার ২০০ টাকা আয় হলেও এবার তার ব্যবসা থেকে কোনো আয় নেই। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে তার আয় কমেছে। এ খাতে ২০০৮ সালে তার ওপর নির্ভরশীলদের বার্ষিক ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩৫৫ টাকা আয় হলেও এবার কোনো আয়ের উল্লেখ নেই।
অস্থাবর সম্পদ_ নিজের নামে অতীতে ২৯ লাখ ৫২ হাজার ৪৯৯ টাকা ব্যাংকে থাকলেও এবার ওই ঘরটি ফাঁকা রাখা হয়েছে। স্ত্রীর নামে ৪ লাখ ৯৯ হাজারের স্থলে বসেছে ৬ লাখ ৯১ হাজার ৯০৬ টাকা আর নির্ভরশীলদের ২ লাখ ৯২ হাজার ২৪ টাকার স্থলে বসেছে ক্রসচিহ্ন। শেয়ার বাজারে নিজের নামে ১ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার ৮০০ টাকা থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৩ লাখ ৭২ হাজার ৮০০ টাকা। স্ত্রীর নামে অপরিবর্তিত আছে ৪৬ লাখ ১১ হাজার ৪০০ টাকার শেয়ার। তবে সঞ্চয়পত্রে নিজের নামে ১১ লাখ ২০ হাজার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ২৫ হাজার ও স্ত্রীর নামে ৫৩ লাখ ৯৫ হাজার ৯৬০ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৪ লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ টাকা। নিজের নামে ৩০ লাখ টাকার গাড়ির স্থলে হয়েছে ৯৫ লাখ ৯২ হাজার ৫৬৮ টাকা।
স্থাবর সম্পত্তিতে তার কৃষি জমির পরিমাণ কমেছে ৪২ একর, অকৃষি জমির ক্ষেত্রে অতীতে দশমিক ৯১ একর লেখা থাকলেও এবার উল্লেখ করেছেন '২টি'র মূল্য ২২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। দালান বা আবাসিক ভবনের অর্জনকালীন মূল্য ২০০৮ সালে ৫১ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৪ টাকা উল্লেখ করলেও এবার বলেছেন ৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা! আগে তার ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা মূল্যের দুটি টিনশেড পাকা ঘর থাকলেও এখন সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন ৫৪ লাখ ৫ হাজার ১৮৪ হাজার টাকা। তার ২৮ একরের দুটি চা বাগানের মূল্য ২০০৮ সালে ২০ লাখ ৪৪ হাজার ৬৯ টাকা উল্লেখ থাকলেও এবার তা নেই উল্লেখ করা হয়েছে।
সুকুমার রঞ্জন ঘোষ : মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের এমপি সুকুমার রঞ্জন ঘোষের পেশা ব্যবসা। তিনি ৬টি প্রতিষ্ঠানের মালিক। তার আয়ের উৎস হিসেবে দেখানো হয়েছে ব্যবসা থেকে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা। তার ওপর নির্ভরশীলদের আয় ৩৮ লাখ ৩০৬ টাকা। সঞ্চয়পত্র থেকে আয় এক লাখ ২৩ হাজার ৭৩১ টাকা। এই খাতে নির্ভরশীলদের আয় ৩৮ লাখ ৩০৬ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজ হাতে নগদ ৭ লাখ ৭৭ হাজার ৭৪৯ টাকা। স্ত্রীর কাছে ৩১ লাখ ৩ হাজার ৫৫৬ টাকা। নির্ভরশীলদের রয়েছে ৫৭ লাখ ৪৫ হাজার ৭২৬ টাকা। ব্যাংকে জমা নিজ নামে ১৪ লাখ ৭১০ টাকা। স্ত্রীর নামে ৯৮ লাখ ৮৭ হাজার ৩১০ টাকা। নির্ভরশীলদের ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৯২ টাকা। তালিকা ছাড়া শেয়ার আছে ৮ হাজার ৪১৫টি, যার মূল্য ১২ লাখ ১৫ হাজার টাকা। তালিকাভুক্ত শেয়ার আছে ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৯৭৩টি, যার মূল্য ৩৫ লাখ ৫৯ হাজার ৭৩০ টাকা। স্ত্রীর নামে শেয়ার আছে ১০ লাখ ৮১ হাজার ৬৩৬ টাকার। সঞ্চয়পত্র নিজ নামে ৭ লাখ ৯৫ হাজার ৬৪৫ টাকা ও স্ত্রীর নামে ২ কোটি ১৮ লাখ ৩২ হাজার ৯৬৯ টাকার। কোম্পানি ও নিজ নামে গাড়ির মূল্য ৭৭ লাখ ৯৯ হাজার ৫৪৯ টাকা। স্ত্রীর নামে এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের গাড়ি আছে। স্বর্ণ নিজের ৫ ভরি, স্ত্রীর ১২ ভরি।
স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে কৃষি জমির মূল্য ৩৬ লাখ ৮৩ হাজার ৯১৬ টাকা। নির্ভরশীলদের নামে জমি ১৫ লাখ টাকার। অকৃষি জমি নিজ নামে গাজীপুরে ২৭ শতাংশ, নিকুঞ্জে ৩ কাঠা, মালিবাগে আড়াই কাঠা এবং স্ত্রীর নামে গাজীপুরে সাড়ে ৩২ শতাংশ, খিলগাঁওয়ে আড়াই কাঠা, জোয়ারসাহারায় ১০ কাঠা। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া দালান একটি, যার মূল্য ৪০ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে বসুন্ধরা শপিংমলে একটি দোকান, যার মূল্য দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ টাকা এবং ধানমণ্ডিতে ৪৮ লাখ ৪৭ হাজার ২৯ টাকার একটি বাড়ি রয়েছে। নির্ভরশীলদের নামে ধানমণ্ডিতে ১৮ লাখ ৮১ হাজার ৬০০ টাকা মূল্যের আরও একটি বাড়ি আছে তার। তবে কোম্পানির যৌথ অংশীদার হিসেবে বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ২৭ কোটি ৫৮ লাখ ৫৪ হাজার ৮০০ টাকার তার দায়দেনা রয়েছে
No comments:
Post a Comment