নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সুকৌশলে ব্যবহার করে বাংলাদেশকে একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা ও বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর শীর্ষ ৬ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে একই সময়ে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আয়কর ফাঁকি দেয়া ও পুলিশের বিরুদ্ধে হামলা উস্কে দেয়া। তাদের জামিন আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এর অর্থ হলো নির্বাচনে তাদেরকে অংশগ্রহণ করতে না দেয়া। বিরোধীদলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে এভাবে অভিযোগ এনে তাদেরকে নীরব করে দেয়া একটি পরিচিত খেলা। গতকাল বৃটেনের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত ‘দ্য প্রিজন দ্যাট ইজ বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। শিরোনামটির বাংলা করলে দাঁড়ায়- বাংলাদেশ নামের জেলখানা। এর লেখক জন পিলজার। এতে তিনি আরও লিখেছেন, সমপ্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের হাতে নিয়েছেন আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর অর্থ হলো, তার দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টের বিরোধীদলীয় এসব শীর্ষ নেতা নির্বাচন করতে পারবেন নাকি তাদেরকে জেলেই ভুগতে হবে তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়ার মালিক প্রধানমন্ত্রী নিজে।
এরই মধ্যে নির্বাচনে নিবন্ধিত হওয়ার তারিখ পেরিয়ে গেছে। ফলে বিরোধী নেতারা নির্বাচনের সুযোগ হারিয়েছেন। নির্বাচনী শিডিউল ঘোষণার অল্প পরেই এসব নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের একজন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তার পিটুইটারি গ্রন্থিতে রয়েছে টিউমার। তিনি অসুস্থ। এ কথা বিবেচনায় নিয়ে কমপক্ষে তাকে এখনই মুক্তি দেয়া উচিত। জন পিলজার লিখেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে সমর্থন করেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। এখন তিনি অসুস্থ। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে দমন- পীড়ন চালাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারই অংশ হিসেবে মওদুদ আহমদ জেলে রয়েছেন। তিনি আরও লিখেছেন, ১৯৭১ সালের অন্ধকার এক রাত। পাকিস্তানি সেনারা তখনকার পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ)-এ যেসব গ্রামে ধর্ষণ ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল সে সব গ্রাম পার হয়ে যাচ্ছিলাম আমি। আমাকে মোমবাতি হাতে নিয়ে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন মওদুদ আহমদ। তখন স্বাধীনতা যুদ্ধ চলছিল। মওদুদ আহমদ তখন একজন যুবক আইনজীবী। তিনি পক্ষ নিয়েছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের। ওই বছর যখন পূর্ব পাকিস্তানকে বাংলাদেশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল তখন আমি লন্ডনের ডেইলি মিরর পত্রিকায় একটি রিপোর্ট লিখেছিলাম। প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত ওই রিপোর্টের শিরোনাম ছিল ‘বার্থ অব এ নেশন’। স্বাধীনতা ঘোষণা করা হলে মওদুদ সেই পত্রিকাটি হাতে নিয়ে র্যালি করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন- আমরা বেঁচে আছি। কিন্তু এখনও আমরা স্বাধীন নই। জন পিলজার আরও লিখেছেন, একবার যখন শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতায় এলেন তিনি নিজেই গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত হয়ে ওঠেন। শুরু হয় গ্রেপ্তার ও লোকদেখানো বিচার। তখন মওদুদ ছিলেন অভিযুক্তদের পক্ষের আইনজীবী। শেষ পর্যন্ত তিনি নিজেও গ্রেপ্তার হন। জেল ও পার্লামেন্টের মধ্যে যখন মওদুদের জীবন এগোতে থাকে তখন হত্যাকাণ্ড, অভ্যুত্থান, পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটতে থাকে। ১৯৮০’র দশকে তাকে প্রধানমন্ত্রী বানানো হয়। এখানে বলা ভাল যে, তখন বাংলাদেশের বয়স কম। সে সময়েই সামন্ততন্ত্রী ও গণতন্ত্রীদের মধ্যে সংঘাতে অনেকটা ক্ষতি হয়ে যায়। বর্তমানে সে ক্ষতি হচ্ছে কট্টরপন্থিদের কারণে। আগামী ৫ই জানুয়ারি জাতীয় সংসদের নির্বাচন। শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি দেশকে একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য নির্বাচনী ব্যবস্থাকে যথেচ্ছ ব্যবহার করেছেন। বর্তমানে মওদুদ অসুস্থ। তার স্ত্রী কবি হাসনা জসীম উদ্দীন মওদুদ এক সময় বলেছিলেন, দেশ একটি জেলখানায় পরিণত হয়েছে। এ কথা বিশ্বকে জানতেই হবে।
http://mzamin.com/details.php?mzamin=MzEzNA%3D%3D&s=Mg%3D%3D#.Uq5N4fj66-E.facebook
No comments:
Post a Comment