বঙ্গদেশের বিচারালয় ও তার বিচারপতিরা কতটা নিচে নামতে পারে উপরের শিরোনাম দেখে চিন্তা করতে পারেন? বাস্তবে তাই হয়েছে। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসির দণ্ড দিয়ে যে পূর্ণাঙ্গ রায় লেখা হয়েছে তা মূলত লেখেন হাইকোর্টে কর্মরত আওয়ামী সমর্থক ছয় সাংবাদিক। রায়ে কি থাকলে ভাল হয়, ভাষা কেমন হওয়া উচিৎ, রায় কত পৃষ্ঠার হবে এমন নানা বিষয় সাংবাদিকরা মানিককে ঠিক করে দেন। মানিক তাদের কথামতো সাহিত্য মিশিয়ে একটি কাব্যগ্রন্থ রচনা করার চেষ্টা করেন। যা পাঁচ ডিসেম্বর প্রকাশ করা হয়। আর ইহা এমন এক অমৃত যা বিচারপতিদের সাইন হয়ে প্রকাশ হওয়ার আগেই সাংবাদিকদের হাতে হাতে হাতে পাওয়া যাচ্ছিল! চার ডিসেম্বর সাংবাদিকদের হাতে ছিল মানিকের লেখা কাদের মোল্লার পূর্ণাঙ্গ রায়..
এই সাংবাদিকরা হলেন, ডেইলি স্টারের আশুতোষ সরকার, ঢাকা ট্রিবিউনের জুলফিকার আলী মানিক, চ্যানেল আইয়ের মান্না, সমকালের আবু সালেহ রনি, নিউ এজ এর মিশন ও এটিএন নিউজের চিফ রিপোর্টার মাশুদুল হক।
মানিক এর বাইরেও বিভিন্ন সময় সাংবাদিক ডেকে এনে রায় লেখার ব্যাপারে পরামর্শ চান! এদের মধ্যে রয়েছে প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান ও প্রথম আলোর ট্রাইব্যুনাল রিপোর্টার কুন্তল রায়।
জানা যায়, বিচারপতি মানিক প্রথমে ফাঁসি দণ্ড দিয়ে লেখা রায়ের একটি খসড়া করেন। এরপর এটি তিনি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, আইন উপষ্টো শফিক ও আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুলকে দেখান। তাদের পরামর্শ নেয়ার পর রায়টি কিভাবে সাজালে সুন্দর হয় এ নিয়ে তিনি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। সাংবাদিকরা ভাষাগত বিভিন্ন দিক নিয়া মানিককে পরামর্শ দেন। রায় লেখার পর তার প্রুফ দেখে দেন।
শুধু রায় লেখা নয় , রায়ের বাংলা অনুবাদ করেন ও ওই সব সাংবাদিকরা।
কাদের মোল্লার রায় প্রকাশের আগের দিনই মানিকের রুমে বসে ইংরেজি রায়ের বাংলা করেন সাংবাদিকরা! জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির দণ্ডাদেশের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগের দিন অর্থাৎ চার ডিসেম্বর বিচারপতি মানিকের কক্ষে বসে সাংবাদিকরা ইংরেজি রায়টার বাংলা অনুবাদ করেন। পরদিন রায়টি প্রকাশের পর তা যাতে দ্রুত মিডিয়ায় প্রচার করা যায় এ জন্য মানিক তার কাছের সাংবাদিকদের দিয়ে এ কাজ করান। অথচ তখনও রায় প্রকাশের একদিন বাকি। এরপর তা বেশ কয়েকজন সাংবাদিক পেনড্রাইভে করে নিয়ে যান! পাঁচ ডিসেম্বর রায় প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথেই রায়ের বাংলা অনুবাদ বিভিন্ন কোর্ট রিপোর্টারের মেইলে পাঠানো হয়.
বিচারপতি মানিকের রুমে বসে ছয়জন ওই ৬ জন সাংবাদিক তার লেখা পূর্ণাঙ্গ রায় ইংরেজি থেকে বাংলা করেন-। টোটাল রায় তৈরিতেও এদের কয়েকজনের ভূমিকা আছে । পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগেই তা ফাঁস হয়ে যাওয়া ও বিচারপতির দ্বারা অনুবাদের ঘটনায় হাইকোর্ট চত্বরে ওই দিনই কানাঘোষা শুরু হয়। এ নিয়ে অন্য সাংবাদিকদের হাসাহাসি ও টিটকারি মারতে দেখা যায়।
এভাবেই রচিত হয় রায় নামক একটি মহাকাব্য। যার রচয়িতা মানিক ও ছয় সাংবাদিক। এবার আপনারাই বলুন এই প্রহসনের বিচারের শেষ কোথায়?
No comments:
Post a Comment