সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধাক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তির গত ১৮ অক্টোবর জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাব দিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি বরাবরই বলে আসছেন, সংবিধান থেকে তিনি এক চুলও নড়বেন না। অসাংবিধানিক পন্থায় সংবিধান লঙ্ঘন করে কেউ যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে, গণতান্ত্রিক ধারা যেন অব্যাহত থাকে, সেই জন্যই তিনি সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। অন্যদিকে তিনি প্রায়ই বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কঠোর সমালোচনা করছেন। ২০১১ সালের ৩ জুন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের জরুরি সভায় উদ্বোধনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের অসাংবিধানিক সরকার সম্পর্কে বলেন, এই সরকারের ভাব-মর্যাদা সামরিক সরকারকেও হার মানায়। এর কারণেই দেশে এক-এগারোর মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন চলকালে ১৯৯৫ সালের ১৬ নভেম্বর গাইবান্ধায় আয়োজিত এক সমাবেশে বলেছিলেন, জনগণের ভাত ও ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে তার দল আন্দোলনে নেমেছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে জনগণ আজ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ। অন্য কোনো ফর্মুলা গ্রহণযোগ্য হবে না। একই সঙ্গে তিনি বর্তমান মহাজোটের অন্যতম শরিক এবং ওই সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের অন্যতম সহযোগী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সম্পর্কে বলেছিলেন, দুর্নীতি ও ভোট ডাকাতির কারণে এরশাদ সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দেয়া হয়েছে। জনগণ আশা করেছিল তাদের ভোটে নির্বাচিত বিএনপি সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাসী হবে। কিন্তু এই সরকার কখনও ভোট ডাকাতি এবং কখনও ভোট চুরি করে সেই বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করেছে।
অন্যদিকে এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার কারণেই দেশে এক-এগারোর মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল এবং রাজনৈতিক সরকার থাকলে ১/১১ আসত না—এমন কথা বললেও ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ১৫ মার্চ যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার প্রাক্কালে বিমানবন্দরে তিনি বলেছিলেন, আমাদের আন্দোলনের ফসল এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তারা ফেল করলে আমাদেরও লজ্জা পেতে হবে। বিএনপি-জামায়াত আমাদের দোষারোপ কারবে। আশা করব এ ধরনের পরিস্থিতি যেন না হয়। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে তিনি ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের সব কার্যক্রমের বৈধতা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন । তিনি বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার তো মহাচোরদেরই ধরছে। এতে আমাদের ভীত এবং আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। দুশ্চিন্তার কী আছে আমরা ক্ষমতায় গেলে তাদের এসব কার্যক্রম রেটিফাই করে দেব। দেশের মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কার্যক্রমের প্রশংসা করছে। এই সুন্দর পরিবেশ বজায় থাকতেই নির্বাচন সম্পন্ন করা উচিত।
এসব খবর ওই সময়ের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়। দৈনিক আমার দেশ এবং দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদনের অংশবিশেষ তুলে ধরা হলো—
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া অন্য ফর্মুলা মানব না : হাসিনা
নিজস্ব সংবাদদাতা : গাইবান্ধা ১৬ নভেম্বর। জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের ভাত ও ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে তার দল আন্দোলনে নেমেছে। সন্ত্রাস ও দুর্নীতির কারণে দেশের অর্থনীতি আজ পর্যুদস্ত। তিনি আজ গাইবান্ধার পলাশবাড়ী থানা সদরে এসএম হাই স্কুল মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তৃতা দিচ্ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দুর্নীতি ও ভোট ডাকাতির কারণে এরশাদ সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দেয়া হয়েছে। জনগণ আশা করেছিল তাদের ভোটে নির্বাচিত বিএনপি সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাসী হবে। কিন্তু এই সরকার কখনও ভোট ডাকাতি এবং কখনও ভোট চুরি করে সেই বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করেছে। এই সরকারের হাতে গণতন্ত্র নিরাপদ নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে জনগণ আজ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ। অন্য কোনো ফর্মুলা গ্রহণযোগ্য হবে না। ( দৈনিক বাংলা : ১৭ নভেম্বর ’৯৫)
যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার প্রাক্কালে বিমানবন্দরে শেখ হাসিনা : ক্ষমতায় গেলে বর্তমান সরকারের সব কাজের বৈধতা দেব
স্টাফ রিপোর্টার
বর্তমান সরকারের কার্যক্রমের বৈধতা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা গতকাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগের আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার তো মহাচোরদেরই ধরছে। এতে আমাদের ভীত বা আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। দুশ্চিন্তার কী আছে? আমরা ক্ষমতায় গেলে তাদের এসব কার্যক্রম ‘রেটিফাই’ করে দেব। শেখ হাসিনা দ্রুত নির্বাচনের আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, অনির্দিষ্টকালের জন্য নির্বাচন বন্ধ রাখা ঠিক হবে না। তিনি বলেন, দেশের মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কার্যক্রমের প্রশংসা করছে। এই সুন্দর পরিবেশ বজায় থাকতেই নির্বাচন সম্পন্ন করা উচিত। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের প্রশংসা পেয়েছে। এই পরিস্থিতি থাকতে থাকতে নির্বাচন দিলে দেশের জনগণ ও সরকার উভয়ের জন্য মঙ্গল হবে। ভালো কাজ বেশি দিন ধরে রাখা যায় না । তিনি বলেন, ‘সভা থাকতেই কীর্তন শেষ করতে হবে’।... তিনি আরও বলেন, আমাদের আন্দোলনের ফসল এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তারা ফেল করলে আমাদেরও লজ্জা পেতে হবে। বিএনপি জামায়াত আমাদের দোষারোপ করবে। আশা করব এ ধরনের পরিস্থিতি যেন না হয়। (দৈনিক আমার দেশ : ১৬ মার্চ ২০০৭)
অন্যদিকে এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার কারণেই দেশে এক-এগারোর মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল এবং রাজনৈতিক সরকার থাকলে ১/১১ আসত না—এমন কথা বললেও ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ১৫ মার্চ যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার প্রাক্কালে বিমানবন্দরে তিনি বলেছিলেন, আমাদের আন্দোলনের ফসল এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তারা ফেল করলে আমাদেরও লজ্জা পেতে হবে। বিএনপি-জামায়াত আমাদের দোষারোপ কারবে। আশা করব এ ধরনের পরিস্থিতি যেন না হয়। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে তিনি ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের সব কার্যক্রমের বৈধতা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন । তিনি বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার তো মহাচোরদেরই ধরছে। এতে আমাদের ভীত এবং আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। দুশ্চিন্তার কী আছে আমরা ক্ষমতায় গেলে তাদের এসব কার্যক্রম রেটিফাই করে দেব। দেশের মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কার্যক্রমের প্রশংসা করছে। এই সুন্দর পরিবেশ বজায় থাকতেই নির্বাচন সম্পন্ন করা উচিত।
এসব খবর ওই সময়ের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়। দৈনিক আমার দেশ এবং দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদনের অংশবিশেষ তুলে ধরা হলো—
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া অন্য ফর্মুলা মানব না : হাসিনা
নিজস্ব সংবাদদাতা : গাইবান্ধা ১৬ নভেম্বর। জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের ভাত ও ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে তার দল আন্দোলনে নেমেছে। সন্ত্রাস ও দুর্নীতির কারণে দেশের অর্থনীতি আজ পর্যুদস্ত। তিনি আজ গাইবান্ধার পলাশবাড়ী থানা সদরে এসএম হাই স্কুল মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তৃতা দিচ্ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দুর্নীতি ও ভোট ডাকাতির কারণে এরশাদ সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দেয়া হয়েছে। জনগণ আশা করেছিল তাদের ভোটে নির্বাচিত বিএনপি সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাসী হবে। কিন্তু এই সরকার কখনও ভোট ডাকাতি এবং কখনও ভোট চুরি করে সেই বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করেছে। এই সরকারের হাতে গণতন্ত্র নিরাপদ নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে জনগণ আজ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ। অন্য কোনো ফর্মুলা গ্রহণযোগ্য হবে না। ( দৈনিক বাংলা : ১৭ নভেম্বর ’৯৫)
যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার প্রাক্কালে বিমানবন্দরে শেখ হাসিনা : ক্ষমতায় গেলে বর্তমান সরকারের সব কাজের বৈধতা দেব
স্টাফ রিপোর্টার
বর্তমান সরকারের কার্যক্রমের বৈধতা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা গতকাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগের আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার তো মহাচোরদেরই ধরছে। এতে আমাদের ভীত বা আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। দুশ্চিন্তার কী আছে? আমরা ক্ষমতায় গেলে তাদের এসব কার্যক্রম ‘রেটিফাই’ করে দেব। শেখ হাসিনা দ্রুত নির্বাচনের আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, অনির্দিষ্টকালের জন্য নির্বাচন বন্ধ রাখা ঠিক হবে না। তিনি বলেন, দেশের মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কার্যক্রমের প্রশংসা করছে। এই সুন্দর পরিবেশ বজায় থাকতেই নির্বাচন সম্পন্ন করা উচিত। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের প্রশংসা পেয়েছে। এই পরিস্থিতি থাকতে থাকতে নির্বাচন দিলে দেশের জনগণ ও সরকার উভয়ের জন্য মঙ্গল হবে। ভালো কাজ বেশি দিন ধরে রাখা যায় না । তিনি বলেন, ‘সভা থাকতেই কীর্তন শেষ করতে হবে’।... তিনি আরও বলেন, আমাদের আন্দোলনের ফসল এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তারা ফেল করলে আমাদেরও লজ্জা পেতে হবে। বিএনপি জামায়াত আমাদের দোষারোপ করবে। আশা করব এ ধরনের পরিস্থিতি যেন না হয়। (দৈনিক আমার দেশ : ১৬ মার্চ ২০০৭)
No comments:
Post a Comment