Wednesday 20 November 2013

‘নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পেতেই টিকফা চুক্তি’

20 Nov, 2013
জিএসপি ফিরে পেতে টিকফা চুক্তিতে সই করতে যুক্তরাষ্ট্র বারবার চাপ দিয়ে গেলেও মেয়াদের শেষ সময়ে এসে বিতর্কিত টিকফা চুক্তি না করার পক্ষেই ছিল সরকার। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও প্রধানমন্ত্রী নিজের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পেতে টিকফা সই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে বর্তমান নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে টিকফা চুক্তি সই করাকে অবৈধ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আনু মোহাম্মাদ নতুন বার্তা ডটকমকে বলেন, “নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রসন্ন চেহারা পাওয়ার জন্য টিকফা চুক্তি করার জন্য তাড়াহুড়া করছে সরকার। টিকফা চুক্তি বাংলাদেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগানোর মতো ব্যাপার। বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী কোনো চুক্তি করার অধিকার কোনো সরকারের নেই। ”

আনু মুহাম্মদ বলেন, “বর্তমান নির্বাচনকালীন সরকারের আইনগত কোনো বৈধতা নেই। তাই কোনো চুক্তি করার অধিকারও তাদের নেই। এই সরকার যদি টিকফা চুক্তি করে, তবে এটি হবে অবৈধ চুক্তি।”

কূটনীতিকরা বলছেন, জিএসপি বাতিল, ড. ইউনূসের বিষয়ে বিতর্ক- সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের সম্পর্কে একটা দূরত্ব চলছে। আগামী নির্বাচনের আগে এই দূরত্ব কমাতে চায় সরকার। তাই ভারতের পাশাপাশি বিশ্বের প্রভাবশালী এই দেশটির সমর্থন পেতেই যুক্তরাষ্ট্রের ডাকে এবার সাড়া দিয়েছে সরকার।

এদিকে টিকফা চুক্তির ফলে জিএসপি ফিরে পাওয়া সহজ হবে বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কারণ, টিকফা সই হলেই বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ফোরাম গঠিত হবে। জিএসপি নিয়ে দর-কষাকষির সুযোগ পাবে বাংলাদেশ। এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) বলেছিলেন, জিএসপি ফিরে পেতে টিকফা অন্যতম বাহন হিসেবে কাজ করবে।

এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের নতুন বার্তা ডটকমকে বলেন, “এ চুক্তি দুই দেশের বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। তাতে লাভবান হবে বাংলাদেশ। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে আমরা প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলারের মতো পণ্য রফতানি করছি। টিকফার ফলে ব্যবসাসংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে আলোচনার সুযোগ তৈরি হবে।”

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, নিজ নিজ দেশের আইন ও পদ্ধতি অনুসরণ করে এ চুক্তি বাস্তবায়িত হবে। বিশ্বের ৪২টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের এবং ৯২টি দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের চুক্তি রয়েছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে শুধু ভুটান ছাড়া সবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এই চুক্তি আছে বলে জানান মন্ত্রী।

বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, টিকফা চুক্তির পরপর ফোরামের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এই ফোরামে দুই দেশের পক্ষ থেকেই দুটি করে এজেন্ডা উপস্থাপন করা হবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তোলা হবে, জিএসপি ফেরত চাওয়া এবং পোশাকশিল্প ছাড়া অন্যান্য বাণিজ্যিক পণ্যেও জিএসপি দেয়া। আর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে সহজ শর্তে তুলা রপ্তানি করার বিষয়টি। এছাড়া বাংলাদেশে ইনসুলিন রপ্তানি করার বিষয়টিও তুলবে যুক্তরাষ্ট্র।

২৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে টিকফা চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। বাংলাদেশের পক্ষে চুক্তিতে সই করবেন বাণিজ্যসচিব মাহবুব আহমেদ। আর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে চুক্তিতে সই করবেন সে দেশের বাণিজ্যসচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, চুক্তিটি সইয়ের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করতে এ মাসের শুরুতে প্রস্তাব পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র। আর তাতে সম্মতি জানায় বাংলাদেশ।

প্রসঙ্গত, ২০০২ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ চুক্তি (টিফা) স্বাক্ষরের জন্য আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ, শ্রম অধিকার, ঘুষ-দুর্নীতির বিষয়ে দুই দেশের মতৈক্য না হওয়ায় আলোচনা আর এগোতে পারেনি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর কয়েক দফা আলোচনা শেষে ২০১০ সালে এ বিষয়ে একটা অবস্থানপত্র পাঠায় বাংলাদেশ। তখন চুক্তির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় টিকফা। গত জুন মাসে মন্ত্রিসভার অনুমোদন পায় টিকফা চুক্তি।

No comments:

Post a Comment