# জুলাই-আগস্টে স্থাপিত মোহাম্মদপুর ক্যাম্পে মে থেকেই নিজামী সাহেবের যাতায়াত থাকে কিভাবে?
# আল বদর বাহিনীর গঠন সম্পর্কে ৪ জায়গায় চার কথা বলেছে সরকার পক্ষÑ কোনটি সত্য?
# বুদ্ধিজীবী হত্যার ব্যাপারে ৩ ধরনের বক্তব্যের কোনটি সত্য?
শহীদুল ইসলাম : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর সাবেক মন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যে কোনোদিন রায় মর্মে ট্রাইব্যুনালের প্রদত্ত আদেশের বিরুদ্ধে দাখিলকৃত রিভিউ আবেদনের নিষ্পত্তি করেছেন ট্রাইব্যুনাল। গতকাল রোববার, আজ সোমবার, বৃহস্পতিবার এবং আগামী রোববার আসামী পক্ষকে আর্গুমেন্টের জন্য সময় দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আবেদন নিষ্পত্তির পর গতকালই পুনরায় আর্গুমেন্ট শুরু করেছেন মাওলানা নিজামীর আইনজীবী এডভোকেট মিজানুল ইসলাম। মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে আনীত ১৬টি অভিযোগের মধ্যে ৭টি অভিযোগের উপর তিনি আর্গুমেন্ট করেন। বাকিগুলোর উপর আজ সোমবার আর্গুমেন্ট করবেন মিজানুল ইসলাম। গতকাল ৭টি অভিযোগই মিথ্যা এবং সাজানো বলে অভিহিত করে তিনি যুক্তি উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, এই মামলার গুরুত্বপূর্ণ ৩ জন সাক্ষী কমপক্ষে আড়াইশ’বার মিথ্যা বলেছেন সাক্ষ্য প্রদানকালে। এই ৩ জন হলেন ১নং সাক্ষী মিছবাহুর রহমান চৌধুরী, ২নং সাক্ষী জহির উদ্দিন মোহাম্মদ জালাল ওরফে বিচ্ছু জালাল এবং ২৬ নং সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক। তদন্ত কর্মকর্তা নিজেই বলেছেন বুদ্ধিজীবী হত্যাকা-ের সাথে নিজামী সাহেব জড়িত মর্মে কোনো তথ্য প্রমাণ পাইনি। আল বদর একটি সামরিক সংগঠন ছিল। তার প্রধান একজন বেসামরিক ব্যক্তি মতিউর রহমান নিজামী কি করে হতে পারেন। মাওলানা নিজামী বুদ্ধিজীবী হত্যার সাথে জড়িত ছিলেন মর্মে কোনো দালিলিক প্রমাণই সরকার পক্ষ দিতে পারেননি। আর মৌখিক সাক্ষ্য যারা দিয়েছে তারা মিথ্যা বলেছে। তারা নানান জায়গায় নানান কথা বলে নিজেদেরকেই মিথ্যাবাদী প্রমাণ করেছেন। তাদের মৌখিক সাক্ষ্যের কোন অংশ বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে আসামীকে অভিযুক্ত করা যাবে না।
গত ৭ নবেম্বর আসামী পক্ষে এডভোকেট মিজানুল ইসলাম আর্গুমেন্ট করার পর হরতালের কারণে ১০, ১১, ১২ ও ১৩ নবেম্বর তিনি ট্রাইব্যুনালে যেতে পারেননি। তার পক্ষে পার্সোনাল গ্রাউন্ড এবং আন এভয়ডেবল সারকামস টেক্সেসে মুলতবি চাওয়া হয়। ট্রাইব্যুনাল প্রথম ৩ দিন মুলতবি দিলেও ৪র্থ দিন আর মুলতবি না দিয়ে মামলার আর্গুমেন্ট সমাপ্ত করে যেকোনো দিন রায় (সিএডি) বলে আদেশ দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে গত বৃহস্পতিবার রিভিউ আবেদন করা হলে গতকাল তার শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত হয়। রিভিও আবেদনের উপর শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ও প্রধান ডিফেন্স কৌসুলি ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, হরতালের মধ্যে আমাদের দেশে কোনো আদালত বসে না। ২০০৭ সালে হাইকোর্টের একটি রায়কে নজীর হিসেবে উপস্থাপন করে তিনি বলেন, উচ্চ আদালত হরতালের কারণে আইনজীবী আসতে না পারলে কোনো মামলার নিষ্পত্তি করতে পারবে না।
গত ১০ থেকে ১৩ নবেম্বর ৪ দিনের হরতালে আপীল বিভাগের কার্যতালিকা ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপীল শুনানি ৪ দিনই তালিকাভুক্ত ছিল। একদিনও শুনানি হয়নি। আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের আপীল এই ৪ দিনই কার্যতালকায় ১ নম্বরে ছিল। শুধু ২ মিনিটের একটি আদেশ দেয়াই ছিল এই মামলাটি। কিন্তু সেই আদেশও আপীল বিভাগ দেয়নি। এমনিভাবে হাইকোর্টের কোনো নিয়মিত বেঞ্চ ঐ ক’দিন বসেনি। ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট, জেলা আদালত, দেওয়ানী আদালত কোনো আদালতই এই ৪ দিন দেশের কোথায়ও বসেনি।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, সানিং আপ বা চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক হলো একটি মামলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সেই যুক্তি যদি উপস্থাপন করতে না পারি তাহলে আসামী ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। আর নিজামী সাহেবের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তাতে তার ফাঁসি হতে পারে। এ অবস্থায় আসামীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া ন্যায় বিচারের স্বার্থেই জরুরি।
তিনি অধ্যাপক গোলাম আযমের মামলা, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার নজীর উপস্থাপন করে বলেন, হরতালের কারণে আইনজীবী আসতে না পারায় এই ট্রাইব্যুনালই সময় দিয়েছেন।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির বলেন, আগে দিয়েছি সত্য। কিন্তু এখন তো পরিস্থিতি ভিন্ন। সেটা আপনিও বোঝেন। কবে এই হরতাল শেষ হবে তা কেউ বলতে পারে না। কিন্তু আমাদের তো মামলা শেষ করতে হবে। এই মামলাটি ২০১১ সালের মামলা। অর্থাৎ সবচেয়ে পুরাতন একটি মামলা। আপনারা লিখিত আর্গুমেন্ট কবে দিবেন।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, আপনি ভাল করেই জানেন লিখিত সাবমিশনে সব কথা বলা যায় না। তারপরও আমরা লিখিত দেব। তবে সময় লাগবে।
ট্রাইব্যুনাল সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এই মামলাটি তো মীমাংসা করতে হবে। তাছাড়াও আরও কথা আছে যা বলা সম্ভব নয়। ট্রাইব্যুনালের অপর সদস্য হলেন বিচারপতি আনোয়ারুল হক।
রিভিউ আবেদনের বিরোধিতা করেন প্রসিকিউটর মীর ইকবাল হোসেন।
পরে ট্রাইব্যুনাল প্রদত্ত আদেশে চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার রাজ্জাককে জিজ্ঞেস করেন আজ, কাল দুই দিনে শেষ করেন। পরবর্তী হরতাল কবে আছে তাও জানতে চান আপাতত হরতালের কোনো পূর্ব ঘোষণা নেই বলে জানান আইজনীবীরা। আগামীকাল মঙ্গলবার ও বুধবার চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় মাওলানা নিজামীর হাজিরা থাকায় ঐ দুই দিন ট্রাইব্যুনালে তার মামলা রাখেনি। ব্যারিস্টার রাজ্জাক ট্রাইব্যুনালকে বলেন, আমার দুই দিন লাগবে। আর মিজান সাহেবের আজ ও কাল লাগবে। তাজুল সাহেবেরও একটু শুনানি আছে। এ পর্যায়ে চেয়ারম্যান বলেন, আমরা এই মামলাটি আগামী সপ্তাহে নিতে চাই না। সে ক্ষেত্রে আজ ও কালকের সাথে বৃহস্পতিবারও দিলাম। এর মধ্যে শেষ করেন। ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, বৃহস্পতিবার আমি শুনানি করলে রোববারটাও লাগবে। চেয়ারম্যান বলেন, বৃহস্পতিবার আসেন। তারপর দেখা যাবে। এরপর এডভোকেট মিজানুল ইসলাম শুনানি শুরু করেন। সকালের সেশনে ৪০ মিনিট এবং বিকালের সেশনে পৌনে ২ ঘণ্টা আর্গুমেন্ট করেন তিনি। রিভিউ আবেদনের শুনানিকালে অন্যান্যের মধ্যে এডভোকেট তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার তানভীর আহমেদ আল আমিন, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন, আহমাদ বিন কাসেম, তারিকুল ইসলাম, আসাদ উদ্দিনসহ বিপুল সংখ্যক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
মাওলানা নিজামীকে সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবি করে এডভোকেট মিজানুল ইসলাম বলেন, বাক স্বাধীনতার অর্থ এই নয় যে অসত্য কথা বলা বৈধ, অসত্য তথ্য দিয়ে আদালতকে বিভ্রান্ত করা বৈধ, বানোয়াট কাহিনী রচনা করে জাতিকে বিভ্রান্ত করা বৈধ। শাহরিয়ার কবির বঙ্গবন্ধুকে ওয়াদা ভঙ্গকারী বলেছেন। ১৯৮৭ সালে তিনি একই বিষয়ে যা লিখেছেন ১৯৯৮ সালে এসে তার বিপরীত লিখলেন। যখন যেমন তখন তেমন কথা বলা বা লেখা যার অভ্যাস তাকে বিশ্বাস করলে আইন-আদালতের প্রতি মানুষ চূড়ান্তভাবেই আস্থা হারাবে।
মিজানুল ইসলাম বলেন, রাজাকার বাহিনী, আল শামস বাহিনী বা শান্তি কমিটি গঠনে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী কোনো ভূমিকা রেখেছেন এমন কোনো একটি দালিলিক প্রমাণও সরকারপক্ষ দাখিল করেনি।
তিনি বলেন, মতিউর রহমান নিজামীকে আল বদর বাহিনীর প্রধান বলা হয়েছে, সুপ্রিম কমান্ডার এবং এর প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়েছে। কিন্তু এই আল বদর বাহিনীর গঠন কখন কোথায় কার নেতৃত্বে হয়েছে তা নিয়ে প্রসিকিউশন চার ধরনের কথা বলেছে। আদালত কোনটি বিশ্বাস করবে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম মতিউর রহমান নিজামীর নেতৃত্বে আল বদর বাহিনী গঠিত হয় মর্মে অভিযোগ করা হয়েছে শাহরিয়ার কবিরের বইয়ের উদ্ধৃতিকে বিশ্বাস করে। ঐ বইয়ে দৈনিক সংগ্রাম ও পূর্ব দেশ পত্রিকার কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে পত্রিকার ঐসব পাতাগুলো নাকি ব্লেড দিয়ে কাটা। তার অর্থ হলো রেফারেন্স বা দালিলিক প্রমাণ ছাড়া তিনি বইয়ে লিখে দিয়েছেন। অথচ আমরা দেখেছি প্রসিকিউশন যা যা জোগাড় করা দরকার সব পত্রিকার কাটিংই বাংলা একাডেমী থেকে যোগাড় করেছেন। আর শাহরিয়ার কবির বললেন, ঐসব পাতাগুলো ব্লেড দিয়ে কাটা। কোনটা সত্য? এই শাহরিয়ার কবিরের বই ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজামীর নেতৃত্বে আল বদর বাহিনীর গঠন করার কাহিনী আর কোথাও নেই। রেফারেন্স বিহীন বই আদালতের কোনো ডকুমেন্ট হতে পারে না।
অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদীর বইয়ে যা সরকারপক্ষ প্রদর্শনী করেছে তাতে আছে যে জামালপুরে প্রথম আল বদর বাহিনী গঠিত হয়। আরেক জায়গায় তারাই বলেছে শর্ষীনার পীর সালেহ সাহেবের
নেতৃত্বে আল-বদর বাহিনী গঠিত হয়। আরেক মামলায় তারাই বলেছে, মোমেনশাহীতে কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে আল-বদর গঠিত হয়। তাহলে সরকার পক্ষের দেয়া কোন তথ্য বিশ্বাস করা যায়? ১৯৮৭ সালের আগে কোন লেখায়, কোন বইয়ে, কোন তালিকায় মাওলানা নিজামীর নাম আল বদর প্রধান তো দূরের কথা স্বাধীনতা বিরোধীদের কোন তালিকাতেই লেখা হয়নি। মিজানুল ইসলাম বলেন, ৬ ডিসেম্বরের একটি পত্রিকার কাটিং দেখানো হয়েছে যাতে আল-বদরের খবর আছে তাতে আল বদর প্রধান হিসেবে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর নাম নেই, অন্য ব্যক্তির নাম আছে।
বুদ্ধিজীবী হত্যা প্রসঙ্গে মিজানুল ইসলাম বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন, ২০১১ সালে তিনি যখন তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন ঐ তদন্তকালে মতিউ রহমান নিজামী বুদ্ধিজীবী হত্যাকা-ের সাথে জড়িত মর্মে কোন তথ্য প্রমাণ পাননি। ট্রাইব্যুনাল যখন এই অভিযোগটি যোগ করে চার্জ গঠন করে আদেশ দিয়েছে তারপর তিনি অতিরিক্ত তদন্ত করে প্রমাণ পেয়েছেন। ২০১১ সালেই তিনি শ্যামলী নাসরিনের বক্তব্য রেকর্ড করেন। তখন ঐ জবানবন্দিতে তিনি তার স্বামী হত্যার জন্য বা অন্য কোন বুদ্ধিজীবী হত্যার সাথে মতিউর রহমান নিজামী জড়িত মর্মে কোন বক্তব্য দেননি।
তিনি বলেন, এই মামলার ৩ জন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী কমপক্ষে আড়াইশ’ বার মিথ্যা কথা বলেছেন, শুধু ১নং সাক্ষী মিছবাহুর রহমান চৌধুরী একাই ৪০টি মিথ্যা কথা বলেছেন। তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন, নিজামী সাহেব ১৯৭১ সালের পুরো সময় জুড়েই একজন বেসামরিক ব্যক্তি ছিলেন, আর আল বদর ছিল একটি আধা সামরিক বাহিন। একটি আধা সামরিক বাহিনীর প্রধান একজন বেসামরিক ব্যক্তি হতে পারে এটা পাগলেও বিশ্বাস করবে না। ডা. আলীম চৌধুরী হত্যার ব্যাপারে ১৯৭২ সালে মামলা হয়েছিল। মামলার রায়ে আসামীরা খালাস পেয়েছিল। তাতে নিজামী সাহেব আসামী ছিলেন না। ঐ মামলাটি তদন্ত কর্মকর্তা প্রদর্শনী করেননি। আর তার স্ত্রী শ্যামলী নাসরিনও এই কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে মিথ্যা কথা বলে গেছেন। ডা. আজহারুল হক ও হুমায়ুন কবির হত্যার ব্যাপারেও মামলা হয়েছিল সেই মামলারও এফআইআর দাখিল করা হয়নি। অত্যন্ত অসততার সাথে কোর্টকে বিভ্রান্ত করে রায় পক্ষে নেয়ার কৌশল এটা। শাহরিয়ার কবিরের বইয়েও আছে যে বুদ্ধিজীবী হত্যার ব্যাপারে ৪২টি মামলা হয়েছিল। বুদ্ধিজীবী হত্যার তদন্তের জন্য জহির রায়হানকে প্রধান করে ৩ সদস্যের কমিটি হয়েছিল। ঐ কমিটির ২ জন সদস্য আমিরুল ইসলাম ও মওদুদ আহমদ এখনো জীবিত আছেন। অথচ তাদেরকে সাক্ষী করা হয়নি। বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনা কোথায় হয়েছিল তা নিয়েও প্রসিকিউশন ৩ জায়গায় ৩ রকম বক্তব্য দিয়েছেন। কোনটি সত্য? হামিদুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে অবজারভার ভবনে এই পরিকল্পনা হয় বলে এক জায়গায় বলা হয়েছে। অন্য জায়গায় বলা হয়েছে, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে মিরপুরে এক সাবেক মন্ত্রীর বাসা থেকে বুদ্ধিজীবী হত্যা পরিকল্পনার দলিলপত্র উদ্ধার করা হয়। কই সেই দলিল পত্র? আর এখানে নিজামী সাহেবকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে।
মে মাসে মতিউর রহমান নিজামীর মোহাম্মদপুর রাজাকার ক্যাম্পে যাতায়াত ছিল মর্মে অভিযোগ করা হলেও কোন দালিলিক প্রমাণ প্রসিকিউশন দাখিল করেনি উল্লেখ করে মিজানুল ইসলাম বলেন, মৌখিক সাক্ষী রোস্তম আলীর কথা বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ দেশ কবে স্বাধীন হয়েছে তা সে জানে না। তার বয়স সে চুরি করেছে। পাচকের চাকরি নিয়ে বলেছে এমএলএসএস। এরূপ মিথ্যা কথা বলেছে। বাস্তবে সে একজন মাতাল। তাকে ধরে এনে সাক্ষী বানানো হয়েছে। সাক্ষী জহির উদ্দিন জালাল বলেছে, ভাকুর্তা ক্যাম্পে মোহাম্মদপুর রাজাকার ক্যাম্পের খবরাখবর দিত রোস্তম? আর রোস্তম বলেছেন যে, সে কখনোই ভাকুর্তা যায়নি। কোনটা সত্য? দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সে নিজামীর নাম শোনেনি, চোখেও দেখেনি, পত্রিকায় ছবিও দেখেনি। অথচ সে ’৭১ সালে নিজামীকে দেখেছে। তার বাবা টিভি সাক্ষাৎকারে বলেছে, ’৭১ সালে তার ছেলের বয়স ছিল ১০ বছর। আর সে বলেছে, ১৬ বছর। তার সাক্ষাৎকার মতে মোহাম্মদপুরে ক্যাম্পই হয়েছে জুলাই-আগস্টে। সেখানে নিজামী সাহেব মে থেকে যান কিভাবে। সুতরাং মে মাস থেকে মোহাম্মদপুর ক্যাম্পে নিজামী সাহেবের যাতায়াত ছিল মর্মে অভিযোগ পুরোপুরিই মিথ্যা।
মিজানুল ইসলাম বলেন, বিচ্ছু জালালকে ১১ এপ্রিল নাখালপাড়ায় নিজামী সাহেব চড় মেরেছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর ১১নং সাক্ষী বলেছে, ঐ দিন পাবনায় তার বাড়িসহ অনেক বাড়ি-ঘর পোড়ানো, লুটপাট, হত্যা, গণহত্যা নিজামীসাহেবের উপস্থিতিতে হয়েছে। এর কোনটা সত্য। আসলে দু’জনই মিথ্যাবাদী, কেউই সত্য বলেনি। সাক্ষী জালাল জবানবন্দীতে বলেছেন, ৩রা আগস্ট রাজাকাররা তাকে ধরে ফেলে। আর জেরায় বলেছেন, ৩ সেপ্টেম্বর ভারতের মেলাঘর ক্যাম্পে তিনি প্রথম রাজাকার শব্দ শুনতে পান। তার বক্তব্য কোনটা সত্য ধরে নেব? এই জালাল এসএসসি পরীক্ষাই দেয়নি। এখানে বলেছে, ১৯৭২ সালে পাস করেছে। সে বলেছে, রুমি বদি, জুয়েলকে ২৯ আগস্ট রাজাকাররা ধরে নিয়ে যায়। আর রুমির মা জাহানারা ইমাম তার বইতে ছেলে হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে সম্পূর্ণ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কথা বলেছেন। কোন বাঙ্গালী জড়িত ছিলেন মর্মে তিনি উল্লেখ করেননি। তদন্ত কর্মকর্তা নিজেও বলেছে মুক্তিবার্তায় জহির উদ্দিন জালালের নাম নেই। ১৯৯৫ সালে তিনি সার্টিফিকেট জোগাড় করেছেন। এটা কিভাবে তা প্রশ্ন সাপেক্ষ।
কলিম উদ্দিন হত্যার সাথে মাওলানা নিজামীর জড়িত থাকার অভিযোগ ভিত্তিহীন। অতিরিক্ত সাক্ষী দিয়ে প্রমাণ করার যে চেষ্টা করেছে প্রসিকিউশন তাতে নতুন করে সন্দেহ তৈরী হয়েছে। এমনকি হত্যার স্থান ও ঘটনার বর্ণনায়ও পার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে। ড্রাইভারের পাশে মেজর সাহেব বসা, তার পাশে নিজামী সাহেবকে বসা দেখলেন সাক্ষী। সেনাবাহিনীর খোলা জীপের সামনে ড্রাইভারের পাশের সিট থাকে ক’টা? একথা কোন পাগলে বিশ্বাস করবে? আর তিনি যদি সামনের সিটে নিজামীকে দেখে থাকেন পেছনে বসা চোখ বাঁধা ব্যক্তিদের দেখলেন কিভাবে? সোনাতলায় অনিল চন্দ্র কু-ুর বাড়িসহ অনেক বাড়ি-ঘর পোড়নোর অভিযোগ আনা হয়েছে নিজামী সাহেবের উপস্থিতিতে। ডা. রথীন্দ্রনাথ এই অভিযেগের একমাত্র সাক্ষী। যার বাড়ি ঐ গ্রামেও নয়। দুরবর্তী একজন সাক্ষী আনা হয়েছে সোনাতলার কোন সাক্ষী আনা হয়নি। ঐ একমাত্র সাক্ষীও নিজামী সাহেবের ভাগ্নে আটকের কল্পিত কাহিনী বলেছেন। অথচ কথিত ঐ গ্রামে তার কোন ভাগ্নে নেই, বোনের বিয়ে হয়নি।
মিজানুল ইসলাম বলেন, এক আগস্ট মাসে ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, পাবনাসহ বহু জায়গায় নিজামী সাহেবের নেতৃত্বে অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এটা তখনকার যুদ্ধাবস্থা এবং যাতায়াত ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে কতটা বাস্তবসম্মত?
তিনি বলেন, বৃশালিকা গ্রামে হত্যা, গণহত্যা, নারী ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছে। ৫ জন নারীকে নিজামী সাহেব পাক আর্মিদের দ্বারা ধর্ষণ করিয়েছেন। কেন তিনি যদি তাদের সুপ্রিম বস হন তাহলে নিজামী সাহেব নিজে কেন ধর্ষণ করলেন না? তিনি কি নপুংষক ছিলেন? এই ধর্ষিতা নারীদের ধর্ষণের ঘটনার ৩/৪ ঘণ্টা পরে সাক্ষী দেখেছে বিবস্ত্র অবস্থায়। এটা কি সম্ভব। ধর্ষণের ৩/৪ ঘণ্টা পরেও তারা বিবস্ত্র অবস্থায় নিজেদের রেখেছিল? এমন নারী কি এদেশে আছে?
No comments:
Post a Comment