Friday 17 January 2014

ঘটনাস্থল কোটচাঁদপুর..আ. লীগ সভাপতি পেটালেন সংখ্যালঘু প্রধান শিক্ষককে

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শরিফুন নেছা মিকি। সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে নিয়োগের বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর কাছ থেকে নেওয়া টাকায় নিজে বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য হতে না পেরে ক্ষমতাসীন দলের ওই নেতা এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে জানা গেছে।
কোটচাঁদপুর উপজেলার কাগমারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৮-৯ মাস আগে ওই বিদ্যালয়ে একজন সহকারী গ্রন্থাগারিক নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তির কাছ থেকে অনুদান হিসেবে দুই লাখ টাকা নেওয়া হয়। বিদ্যালয়ের তৎকালীন সভাপতি ও কোটচাঁদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শরিফুন নেছা মিকি ওই টাকা নিজের পক্ষ থেকে অনুদান হিসেবে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন তহবিলে জমা দেন। পরে তিনি ওই টাকার বিনিময়ে নিজেকে বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির আবেদন করেন। কিন্তু বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সচিব ও প্রধান শিক্ষক নারায়ণ চন্দ্র বিশ্বাস এতে অপারগতা জানান এবং আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মহাপরিচালকের দপ্তর থেকে একটি অডিট টিম সেখানে যায়। অডিট চলাকালে গত বুধবার শরিফুন নেছা মিকি তাঁর দলবল নিয়ে স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের ওপর চড়াও হন। এ সময় মিকির উপস্থিতিতে তাঁর লোকজন প্রধান শিক্ষককে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাসির উদ্দিন জানান, সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত আবদুল আহাদ স্কুলের উন্নয়ন ফান্ডে দুই লাখ টাকা দেন। ওই টাকা বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি শরিফুন নেছা মিকি স্কুলের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দেন। পরে তিনি দাতা সদস্য হিসেবে ওই টাকা দিয়েছেন মর্মে প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে জোর করে লিখে নেওয়ার চেষ্টা করেন। প্রধান শিক্ষক এতে রাজি না হওয়ায় তাঁকে মারধর করা হয়েছে।
প্রধান শিক্ষক নারায়ণ চন্দ্র বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কথা বলতে পারেননি। তাঁর স্ত্রী পূর্ণিমা রানী হাসপাতাল থেকে বলেন, ‘বুধবার বিকেলে শরিফুন নেছা মিকি তাঁর লোকজন দিয়ে আমার স্বামীকে মারধর করে গুরুতর আহত করেছেন। আমার স্বামীকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি এখন কথা বলার মতো অবস্থায় নেই।’
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, ‘কাগমারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি শরিফুন নেছা মিকি দাতা সদস্য হওয়ার জন্য স্কুল ফান্ডে দুই লাখ টাকা দেওয়ার দাবি করছেন। তবে প্রধান শিক্ষক বলছেন, বিদ্যালয়ে সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে সম্প্রতি নিয়োগপ্রাপ্ত আবদুল আহাদ স্কুলের উন্নয়ন ফান্ডে দুই লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মহাপরিচালকের দপ্তর থেকে অডিট চলাকালে শরিফুন নেছা মিকি তাঁর লোকজন নিয়ে স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের ওপর চড়াও হন। তারা প্রধান শিক্ষককে কিছু মারধর করেছে। আমি দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে পাঠাই। এখন তাঁর অবস্থা কিছুটা ভালো। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
কোটচাঁদপুর মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি দলের প্রভাব খাটিয়ে প্রধান শিক্ষককে মারধর করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদসহ জড়িত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
শরিফুন নেছা মিকির বক্তব্য জানতে তাঁর মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সংরক্ষিত মহিলা আসনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহের জন্য গত রাতে তিনি ঢাকায় গেছেন।
http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2014/01/17/42081

No comments:

Post a Comment