Monday 30 September 2013

সত্যিই কি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন?

কথিত ‘জাতিসংঘের সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড’ নিয়ে ধাপ্পাবাজির চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। এবার দ্বিতীয় বারের মতো এই পুরস্কার ‘অর্জনের’ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গতকাল মহা ধুমধাম করে গণসংবর্ধনা দেয়া হলেও অনুসন্ধানে জানা গেছে, তিনি এই পুরস্কারটি পাননি। তাছাড়া সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড জাতিসংঘের কোনো পুরস্কারও নয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের তরফ থেকে প্রচারণা চালানো হচ্ছে, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে সাফল্য পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এবারও জাতিসংঘের সাউথ সাউথ পুরস্কার দেয়া হয়েছে। নিউইয়র্কে পৌঁছেই গতকাল তিনি এই পুরস্কারটি গ্রহণ করেছেন।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর সরকার নিয়ন্ত্রিত বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দারিদ্র্যবিমোচনে বাংলাদেশের অসামান্য অবদান এবং দারিদ্র্য হ্রাসে তার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে’ সাউথ-সাউথ পুরস্কার পেয়েছেন। দেশের সব প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার খবরটি প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়। কিন্তু প্রকৃত তথ্য একেবারেই ভিন্ন।
সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড নামের সংগঠনটি ২০১৩ সালে যাদের পুরস্কৃত করেছে তাদের মধ্যে শেখ হাসিনার নাম নেই। তিনি পেয়েছেন সাউথ সাউথ নিউজের একটি পুরস্কার, যেটি সাউথ সাউথ পুরস্কারের একটি পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান এবং এমডিজির সাফল্য নিয়ে খবর ভাগাভাগির ওয়েবসাইট। সাইটটি এতটাই অবহেলিত যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এবার যে পুরস্কার দেয়া হয়েছে সেই খবরটিই তাদের সাইটে নেই।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড জাতিসংঘের কোনো পুরস্কারও নয়। জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তাও পুরস্কারটি তুলে দেন না। সম্ভবত সাউথ সাউথ নামের এই অখ্যাত পুরস্কারটি নিয়ে বাংলাদেশেই বেশি মাতামাতি হচ্ছে।
সাউথ সাউথ পুরস্কার পাননি শেখ হাসিনা : সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড নামে সংগঠনটির একটি নিজস্ব ওয়েবসাইট রয়েছে (southsouthawards.com)। ২০১৩ সালে কারা এই পুরস্কার পেয়েছেন এখানে তার তালিকা দেয়া হয়েছে।
‘গ্লোবার গভর্ন্যান্স লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ নামে এই পুরস্কার দেয়া হয় গত ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের ওয়ালডর্ফ অ্যাস্টোরিয়ায়। ১৯ সেপ্টেম্বর সংগঠনের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এবার এই পুরস্কার পেয়েছেন কোস্টারিকার প্রেসিডেন্ট লরা শিলশিলা মিরান্ডা, বাইরাইনের প্রধানমন্ত্রী খলিফা বিন সালমান আল খলিফা এবং জিফির প্রধানমন্ত্রী জোসাইয়া বরেক বাইনিমারামা।
এছাড়া টেকসই উন্নয়ন ও তথ্যপ্রযুক্তিতে অবদান রাখার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলা, তার সাবেক স্ত্রী গ্রাসা ম্যাশেল এবং আমেরিকার সঙ্গীতশিল্পী ডেভিড পাইচকেও এই পুরস্কার দেয়া হয়।
লক্ষণীয় এবারের এই তালিকায় কোথাও শেখ হাসিনার নাম নেই।
পুরস্কারটি প্রদান করা হয়, ২২ সেপ্টেম্বর রোববার। প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কে পৌঁছান সোমবার। সরকারের পক্ষ থেকে প্রচারণা চালানো হয়, তিনি পরে পুরস্কারটি গ্রহণ করেছেন।
সাউথ সাউথ পুরস্কার কী : এমডিজি অর্জনে সাফল্য দেখিয়েছে—এ রকম দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান, রাজনীতিক এবং বেসরকারি খাতের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে উত্সাহিত করার জন্যই এই সাউথ সাউথ পুরস্কার বা ‘গ্লোবার গভর্ন্যান্স লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ দেয়া হয়।
আফ্রিকার দেশ এন্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডার জাতিসংঘের স্থানীয় মিশন, আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন, জাতিসংঘের লোকপ্রশাসন নেটওয়ার্ক (ইউএনপ্যান), দ্য ইন্টারন্যাশনাল অরগানাইজেশন ফর সাউথ সাউথ কোঅপারেশন (আইওএসএসসি), জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থা এবং সাউথ সাউথ নিউজের আয়োজনে ২০১১ সাল থেকে সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড দেয়া হচ্ছে।
পুরস্কার প্রদানে সহায়তা করে থাকে জাতিসংঘে তৃতীয় বিশ্বের কয়েকটি দেশের স্থায়ী মিশন। এর মধ্যে রয়েছে মালাউই, ডমিনিকান প্রজাতন্ত্র, জাম্বিয়া, তাজিকিস্তান, এল সালভাদর ও হন্ডুরাস।
এটি কোনো উল্লেখ করার মতো কোনো পুরস্কারও নয়। ২০১১ সালেও শেখ হাসিনা এই পুরস্কার পান। এবারও যদি তিনি পুরস্কার পেতেন তাহলে তিন বার প্রদত্ত এই পুরস্কারের মধ্যে দু’বারই পেতেন শেখ হাসিনা। এটিই যদি সত্য হয়, তাহলে সেই পুরস্কারের মর্যাদা বলতে তো কিছু অবশিষ্ট থাকে না।
শেখ হাসিনা তাহলে কী পেয়েছেন : আওয়ামী লীগের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত একটি খবর প্রকাশ করে বলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেলসন ম্যান্ডেলাসহ অন্য নেতাদের সঙ্গে এবার সাউথ সাউথ পুরস্কার গ্রহণ করেছেন (www.albd.org/index.php/en/updates/news/253-pm-receives-south-south-award)। কিন্তু এর সঙ্গে যে ছবিটি দেয়া হয়েছে, তাতে দেখা যায় সাউথ সাউথ নিউজ লেখা।
আগেই বলা হয়েছে, সাউথ সাউথ নিউজ ‘গ্লোবার গভর্ন্যান্স লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ বা সাউথ সাউথ পুরস্কারের একটি পৃষ্ঠপোষক।
কাজেই তারা এই পুরস্কার দিতে পারে না। কাজেই প্রধানমন্ত্রী যে পুরস্কারটি পেয়েছেন, তা সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড নয়, অন্য কোনো পুরস্কার।
কী ছিল সরকারি ভাষ্যে : সরকারনিয়ন্ত্রিত বার্তা সংস্থা বাসস গত ২৪ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক থেকে জানায়, প্রধানমন্ত্রী এবারও সাউথ সাউথ পুরস্কার পেয়েছেন। ‘দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের সাফল্যের স্বীকৃতি আইওএসএসসির’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দারিদ্র্যবিমোচনে বাংলাদেশের অসামান্য অবদান এবং দারিদ্র্য হ্রাসে তার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে এখানে পুরস্কার গ্রহণ করেছেন।
দ্য ইন্টারন্যাশনাল অরগানাইজেশন ফর সাউথ-সাউথ কো-অপারেশন (আইওএসএসসি) সোমবার সন্ধ্যায় তার সদর দফতরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর হাতে এ পুরস্কার তুলে দেয়।
দক্ষিণ-দক্ষিণ অঞ্চলের দেশগুলোর ত্রিমুখী সহযোগিতায় জাতিসংঘ ঘোষিত সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্য বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে আইওএসএসসি গঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ জানান, সাউথ-সাউথ সদর দফতরের প্রেসিডেন্ট ও সাউথ-সাউথ নিউজ অ্যাম্বাসেডর ফ্রান্সিস লরেঞ্জো সংস্থাটির সদর দফতরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান এবং তার হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন।
দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অর্জনের জন্য এ পুরস্কার দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী আইওএসএসসি এবং বিভিন্ন দেশের প্রধানমন্ত্রী, ফার্স্ট লেডি এবং আইওএসএসসিভুক্ত দেশগুলোর সরকারপ্রধানদের ধন্যবাদ জানান।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, এ সময় প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, তার মেয়ে সায়মা হোসেন পুতুল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, আওয়ামী লীগের নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, জাসদ নেতা মঈনুদ্দিন খান বাদল এমপি, পার্লামেন্ট সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর মিডিয়া উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে আবদুল মোমেন উপস্থিত ছিলেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাসসের ওই সংবাদটি তথ্যনির্ভর নয় এবং এজন্য আওয়ামী লীগ সরকারের প্রচারণাও নেহায়েতই মিথ্যাচার।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন কাভার করতে আমার দেশ-এর স্টাফ রিপোর্টার মাহাবুবুর রহমানসহ বহু বাংলাদেশী সাংবাদিক নিউইয়র্কে অবস্থান করলেও ওই অনুষ্ঠানে কোনো সাংবাদিকই ছিলেন না। বাসসসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে শুধু সরকারি ভাষ্য প্রচার করা হয়েছে। কোনো কোনো গণমাধ্যম সূত্র উল্লেখ না করেই খবরটি প্রচার করেছে।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানার জন্য গত রাতে প্রধানমন্ত্রীর মিডিয়া উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীর মোবাইলে ফোন দেয়া হলে তার মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদের মোবাইল ফোনে কল দেয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তারা দু’জনই ওই পুরস্কার গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। 

ব্রেকিং নিউজঃ সাকা চৌধুরীর রায় প্রকাশের আগেই কপি ফাস,রায় লিখেছে আইন মন্ত্রনালয়



বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলার রায় লেখা হয়েছে আইন মন্ত্রনালয়ে। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-১ থেকে যে রায় দেয়ার কথা রয়েছে সেই রায়ের কপি পাওয়া গেছে ভারপ্রাপ্ত আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মোহাম্মদ জহিরুল হকের অফিসের একটি কম্পিউটারে। এতে আরো যে বিস্ময়কর তথ্য পাওয়া গেছে তা হল- বিচার শেষ হবার আগেই রায় লেখা শুরু হয়েছে। ফাইলের তথ্যে দেখা যায় ২৩ মে রায় লেখা শুরু হয়েছে, যখন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরম্নদ্ধে প্রসিকিউশন স্বাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ চলছিল। এ তথ্যগুলো পাওয়া যায় বেলজিয়াম ভিত্তিক ওয়েবসাইট http://www.tribunalleaks.be/ । যেখানে রায়ের খসড়া এবং ফাইনাল কপি আপলোড করা হয়। 

১৯৭১ সালের মানবতা বিরোধী মোট ২৩ টি অভিযোগে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছিল। সেখান থেকে মোট ১৭টি অভিযোগের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ট্রাইবুনালে সাক্ষী হাজির করে। যেহেতু রাষ্ট্রপড়্গ ১৭টি অভিযোগের পক্ষে সাক্ষী হাজির করেছে, তাই এ ১৭টি অভিযোগের বিষয়ে রায় লেখা হয়েছে মর্মে দেখা যায় আইন মন্ত্রনালয় থেকে পাওয়া রায়ের কপিতে। আইন মন্ত্রনালয় থেকে পাওয়া আজকের রায়ে দেখা যায়- ১৭টি অভিযোগের মধ্যে মোট ৯টি অভিযোগে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। আটটি অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়েছে।

২৩টি অভিযোগের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ছয়টি অভিযোগের পড়্গে কোন সাড়্গী হাজির করেনি। সে ছয়টি অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ প্রমানে ব্যর্থ হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। 

১৭টি অভিযোগের মধ্যে যে ৯টি অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্তô করা হয়েছে সেগুলো হলঃ



২ নং অভিযোগ ঃ মধ্য গহিরায় গণহত্যা। 

৩নং অভিযোগ ঃ নূতন চন্দ্র হিংস হত্যা।

৪নং অভিযোগ ঃ জগৎমলল পাড়া গণহত্যা।

৫ নং অভিযোগ ঃ সুলতানপুরে নেপাল চন্দ্র ও অপর তিনজনকে হত্যা।

৬ নং অভিযোগ ঃ ৬৯ পাড়া গণহত্যা।

৭ নং অভিযোগ ঃ সতিশ চন্দ্র পালিত হত্যা।

৮ নং অভিযোগ ঃ মোজাফফর ও তার ছেলে শেখ আলমগীর হত্যা।

১৭ নং অভিযোগ ঃ নিজাম উদ্দিন আহম্মদকে অপহরণ ও নির্যাতন।

; ১৮ নং অভিযোগঃ সালেহউদ্দিন আহমদকে অপহরণ ও নির্যাতন।




১৭টি অভিযোগের মধ্যে যে ৮টি অভিযোগ থেকে সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে খালাস দেয়া হয়েছে সেগুলো হলোঃ


১ নং অভিযোগ ঃ গুডস হিলে সাতজনকে অপহরণ করে ও নির্যাতন করে।

১০ নং অভিযোগ ঃ মানিক ধরের বাড়ি লুট।

১১ নং অভিযোগ ঃ বোয়াল খালী গণহত্যা।

১২ নং অভিযোগ ঃ বিজয় কৃঞ্চ ও দুইজনকে হত্যা।

১৪ নং অভিযোগ ঃ হানিফ হত্যা।

১৯ নং অভিযোগ ঃ মাহবুব আলম হত্যা।

২০ নং অভিযোগ ঃ এখলাস হত্যা।

২৩ নং অভিযোগ ঃ সলিমুল্লাহর উপর নির্যাতন।

যে ৬টি অভিযোগের বিরম্নদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করেননি সেগুলো হলোঃ ৯, ১৩, ১৫, ১৬, ২১ এবং ২২। রায়- এ লেখা হয়েছে এ ৬টি অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে।

যেখানে পাওয়া গেল ফাইলটিঃ

আইন মন্ত্রণালয়ের ষষ্ঠ তলার একটি কম্পিউটারের ডি-ড্রাইভে “Local Disk (DHappy” এই রায়ের কপি পাওয়া যায়। কম্পিউটারের প্রত্যেকটি ফাইল বা ডকুমেন্টের উৎস নির্ণয়ক তথ্য ঐ ফাইল/ডকুমেন্টে সংরক্ষিত থাকে। এই তথ্য ঐ ফাইল বা ডকুমেন্টের প্রপারেটিস অপশনে গেলে পাওয়া যায়। এই রায়ের কপিটি যে ফাইল পাওয়া গেছে তার প্রপারটিস পরীড়্গা করে নি্নোক্ত তথ্য পাওয়া যায়।

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিখ্যাত কিছু উক্তি

১) বাবু ওআইসি নিয়ে কথা বলার কে, উনাকে ওআইসি নিয়ে কথা বলতে হলে,আমি ছোট বেলায় যে জিনিসটা কেটে ফেলে দিয়েছি,আগে ওই জিনিসটা কেটে ফেলতে হবে। তারপর বাবুকে ওআইসি নিয়ে কথা বলতে বলেন "

ওআইসি-এর মহাসচিব পদের জন্যে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরিকে বাংলাদেশের পক্ষ 
থেকে পাঠানো হয়েছিল। সাকা চৌধুরি সেই জন্যে দেশের বাহিরে ছিল।
আর সেই সময় সাংবাদিকদেরকে কালা বিলাই চুরুঞ্জিত বলেছিল-"সাকা চৌধুরিকে কেন
ওআইসি-এর মহাসচিব , উনি তো এর যোগ্য না।"

দেশে ফিরে এলে, সাংবাদিকরা বিমান বন্দরে সাকা চৌধুরিকে কালা বিলাই চুরুঞ্জিতের
এই কথা বলল, তা শুনে সাকা চৌধুরি উপরোক্ত বচ্চন ছাড়ে


২) আগে দেখতাম কুত্তা লেজ নাড়ে, এখন দেখি লেজেই কুত্তা নাড়ায়"

৩) সংবিধান পরিবর্তন নিয়ে....'সোনা মিয়া'-কে বানাইসে "লাল মিয়া" আর "লাল মিয়া"-রে বানাইসে 'সোনা মিয়া' ।
এখনে মিয়া-মিয়া কিন্তু ঠিকই আছে। 'সোনা' ডা শুধু "লাল" হইয়া গেছে।” 


৪) মাননীয় স্পিকার এদেশে নতুন একধরনের ডিজিটাল মেশিন আবিষ্কৃত হয়েছে,
যার একপাশ দিয়ে রাজাকার ঢুকিয়ে দিলে, অন্য পাশ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হয়ে বের হয়।
আর সেই মেশিনটির নাম ডিজিটাল আওয়ামীলিগ মেশিন। "


৫) "আংগুল দেখাবেন না,ওই আংগুল এ রিং পরানোর কথা ছিল"।
-সাকা চৌধুরী হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে 

সংসদে হাসিনা আঙ্গুল তুলে সা কা চৌধুরীকে কথা বললে, সাকা উপরুক্ত উক্তিটি করেন।

৬) আমি বুঝিনা এত সোনা থাকতে ওনার কেন আমার সোনা পছন্দ । ওয়াজেদ সাহেব তো উনার সোনার
চাহিদা পুরন করবে। এর মধ্যে আমি কেন আসব "-সাকা চৌধুরী (হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে) 

-তার কথা শুনে সাংবাদিকদের মধ্যে হাসির রোল পরে গেলে...

আবার সাকা চৌধুরী বলেন-"আমি কিন্তু সোনা বলতে এখানে অরনামেন্ট'স বুঝিয়েছি ।"


৭) সংসদে বক্তিতার এক পর্যায়ে সাকা চৌধুরী বলেছিলেনঃ

সাকা - ".....মাননীয় স্পিকার,আমিতো চোদনা হয়ে গেলাম।"
স্পিকার- "মাননীয় সংসদ সদস্য আপনি আপনার ভাষা সংযত করুন।"
সাকা -,"মাননীয় স্পিকার,আমি আবারও চোদনা হয়ে গেলাম।"


৮) ওই মহলটি কি জানে না যে তারা যে বিলের মাছ আমি সালাউদ্দিন ওই বিলের বক ৷" 
আওয়ামী লীগের একটি মহল প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তাকে উস্কে দিচ্ছে অভিযোগ করলে সাকা চৌধুরী উপরুক্ত কথাটা বলেন । 

-" ওরা কি জানেনা,আমি সালাউদ্দিন যদি গ্রেনেড মারতাম তাহলে সেটা মিস হত না ৷
শেখ হাসিনাকে নিজের ছেলের বিয়ের দাওয়াত দিতে গেলে হাসিনা গ্রেনেড মেরে তাকে হত্যা করতে যাওয়ার অপবাদ দেওয়ায় সাকা চৌধুরী এই কথা বলেন । 

৯) কামরুল যে কেরানীগজ্ঞের একজন প্রমোদ বালক এটা কি আমি কখনও বলেছি "
নারী নির্যাতন বিষয়ে আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুলের একটি বক্তব্যের জবাবে সাকা চৌধুরি এই কথা বলেন

১০) ছাত্রজীবনে শেখ মুজিব আমার বাবার শিষ্য ছিলেন"। 
প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সঙ্গে তার ঘনিষ্ট যোগাযোগের কথা উল্লেখ করে তিনি এই কথা বলেন 



Sunday 29 September 2013

যুক্তরাষ্ট্রে হাসিনা সরকারের কোটি টাকার লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ

 যুদ্ধাপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক জনমত তৈরির জন্য ওয়াশিংটনভিত্তিক একটি লবিস্ট ফার্মকে নিয়োগ করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদও লবিস্ট ফার্ম নিয়োগের কথা স্বীকার করেছেন।

এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ১ লাখ ৫০ হাজার ডলার বা ১ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।

ইংরেজি দৈনিক ‘নিউএজ’ পত্রিকার এক প্রতিবেদনে রবিবার এই তথ্য ফাঁস করা হয়েছে। ‘গভর্নমেন্ট অ্যাপয়েন্টস ইউএস লবিইং ফার্ম টু সাপোর্ট আইসিটি’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী ৫ মাসের জন্য যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে কাজ করবে বিজিআর পাবলিক রিলেশন্স নামের ওই প্রতিষ্ঠানটি।

যুক্তরাষ্ট্রের বিচার মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া প্রতিবেদনে বিজিআর জানায়, গত ১৩ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে তাদের চুক্তি হয়েছে।

ওই চুক্তির চারদিন পরাই জামায়াতের ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে এক নজিরবিহীন রায়ে ফাঁসি দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্ট।

চুক্তিতে বলা হয়, যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে লবিইং করার জন্য আগামী ৫ মাস বাংলাদেশ সরকার বিজিআরকে প্রতি মাসে ২০ হাজার ডলার করে মোট ১ লাখ ডলার বা প্রায় ৮০ লাখ টাকা দেবে।

এছাড়া ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের এ সংক্রান্ত কাজে কোনো ভ্রমণ প্রয়োজন হলে তার সমুদয় খরচ বহন করবে সরকার। প্রয়োজনে চুক্তির মেয়াদ আরও বাড়ানো হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের ১৯৩৮ সালের আইন অনুসারে সেদেশের কোনো প্রতিষ্ঠানের দেশের বাইরের কারও পক্ষে লবিং করার জন্য চুক্তি করা হলে তার বিস্তারিত তথ্য বিচার মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হয়।

জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের এবং বিজিআরের প্রেসিডেন্ট জেফরি এইচ বার্নবাউম চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

কৌশলগত যোগাযোগ, জনমত গঠন, বিদেশি সরকারের প্রতিনিধিত্বসহ গণসংযোগের নানা কাজে নিজেকে বিশ্বমানের বলে দাবি করেছে বিজিআর।

বিজিআরের প্রেসিডেন্ট জেফরি এর আগে ফক্সনিউজ এবং ওয়াশিংটন পোস্টে কাজ করেছেন।

লবিস্ট ফার্ম নিয়োগের কথা স্বীকার করে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ শনিবার নিউএজ- কে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মত প্রভাবশালী দেশে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা সামাল দিতেই সরকারকে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ দিতে হয়েছে।’

তিনি দাবি করেন, ‘এর আগে ট্রাইব্যুনালকে রাজনৈতিক রং দিতে জামায়াতে ইসলামী প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছে।’

নিউএজ জানায়, ২০১১ সালের অক্টোবরে তাদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ভাই যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাসিডি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস নামের একটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ দেয়। তবে এজন্য আড়াই কোটি ডলার খরচ করা হয়েছে বলে যে তথ্য সরকার প্রচার করেছে প্রকৃত খরচ তার চেয়ে অনেক কম।

শফিক আহমেদ দাবি করেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার কোনো রাজনৈতিক জিঘাংসা নেই। তিনি বলেন, যখন অনেকগুলো রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে সেই মুহূর্তে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ সময়োচিত হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, বিজিআরের অনুকূলে সম্প্রতি ১ লাখ ৫০ হাজার ডলার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। চুক্তি অনুসারে বাংলাদেশ সরকার যেসব তথ্য অতি গোপনীয় হিসেবে চিহ্নিত করত তা অতি গোপনীয় রাখবে বিজিআর।

উল্লেখ্য, যুদ্ধপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সরকারের তীব্র সমালোচনা হচ্ছে।

এ অবস্থায় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ভাষণেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিচারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন চেয়েছেন।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মত খ্যাতনামা মানবাধিকার সংগঠনগুলো সুপ্রিমকোর্টে কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের কড়া সমালোচনা করেছে।

যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিফেন জে র্যা পও বলেছেন, মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে অবশ্যই আপিল বা রিভিউ করার সুযোগ থাকতে হবে।
http://www.rtnn.net//newsdetail/detail/1/1/71010#.UkgLcIZ6ZVK

Saturday 28 September 2013

গার্মেন্ট অস্থিরতায় ২০ হাজার ভারতীয় ম্যানেজারের ইন্ধন

জন্মসূত্রে ভারতীয় হলেও বাংলাদেশে তারা বসবাস করেন নিজ দেশের মতোই। ভিসা-টিকিটের বালাই নেই। ইচ্ছেমতো এ দেশে আসেন, ইচ্ছে হলেই ভারতে যান। বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিয়ত লাখ লাখ ডলার নিয়ে গেলেও সরকারকে কোনো ট্যাক্স দেন না। সরকারি বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্যও তাদের ঘাটায় না। কারণ তারা বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্পের ‘প্রাণ’. ...মার্চেন্ডাইজার, প্রোডাকশন ম্যানেজার, জেনারেল ম্যানেজার, ফাইন্যান্স ম্যানেজার, অ্যাকাউন্টস ম্যানেজার, ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং ম্যানেজার, কোয়ালিটি কন্ট্রোলার প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে তারা নিয়োজিত। অর্ডার আনা থেকে শুরু করে পণ্য প্রেরণ পর্যন্ত সব গুরুত্বপূর্ণ কাজই হয়ে থাকে অপেক্ষাকৃত অধিক যোগ্যতাসম্পন্ন এসব কর্মকর্তার হাত দিয়ে। কারখানার মালিক ও সাধারণ শ্রমিকদের মাঝে সেতুবন্ধনের কাজটিও করে থাকেন তারা। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রফতানি বাণিজ্যে ৮০ শতাংশ অবদান রক্ষাকারী বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্প খাতের বেশির ভাগ উদ্যোক্তারই শিক্ষা প্রয়োজনের তুলনায় কম। তাদের অনেকেই কারখানার মালিক হয়েছেন শ্রমিক থেকে। আবার এমন অনেক কারখানাও রয়েছে যেগুলোর মূল মালিকেরা এ ব্যবসায়ের সাথে সরাসরি যুক্ত নন। সামান্য মালিকানা নিয়ে যিনি কারখানা দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করছেন তিনি এক সময় শ্রমিক ছিলেন।

টাকাওয়ালা কিছু লোককে ম্যানেজ করে নিজে কিছু শেয়ার নিয়ে কারখানা গড়ে তুলেছেন। কারখানার গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করছেন মধ্যম পর্যায়ের ম্যানেজারেরা, যাদের বেশির ভাগই ভারত কিংবা শ্রীলঙ্কা বংশোদ্ভূত। এরাই মন চাইলে কারখানার ভালো করছেন, আবার মনের মধ্যে কোনো দূরভিসন্ধি এলে মালিকপক্ষকে কৌশলে পথে বসিয়ে দিচ্ছেন। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত আট থেকে ১০ বছরে যেসব কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ হয়েছে তার বেশির ভাগই ছিল কমপ্লায়েন্ট। এসব কারখানায় কর্মপরিবেশ ভালো, নিয়মিত বেতন-ভাতা দেয়া হয়, ওভার টাইম দেয়া হয়, টিফিন থেকে শুরু করে বেশির ভাগ যুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রেই এসব কারখানার শ্রমিকেরা সন্তুষ্ট। অথচ কখনো রাস্তায় সড়ক দুর্ঘটনায় শ্রমিক মৃত্যুর অজুহাতে, কখনো শ্রমিক গুম কিংবা টয়লেটে ভূত থাকার মতো গুজব ছড়িয়ে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করানো হচ্ছে এসব কারখানায়। অপর দিকে যেসব কারখানায় নিয়মিত বেতন-ভাতা দেয়া হয় না, কাজের পরিবেশ নি¤œমানের এবং কথায় কথায় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটছে শ্রমিক অসন্তোষ বা ভাঙচুরের ঘটনা এসব কারখানায় অনেক কম ক্ষেত্রেই ঘটছে।

এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তৈরী পোশাক শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল উদ্যোক্তা জানান, যেসব কারখানা বড় ও কমপ্লায়েন্ট সেগুলোর কাজের ভলিউমও বেশি। মোটা অঙ্কের বেতন দিয়ে বিদেশী কর্মকর্তাদের এখানে নিয়োগ করা হয়। তাদের অনেক সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়। কিন্তু কোনো কারণে মালিকের ওপর ুব্ধ হলে কিংবা কারখানার মালিক হওয়ার খায়েশ হলে তারা শ্রমিক অসন্তোষের মতো ঘটনা ঘটিয়ে কারখানা ধ্বংস করে দেন। স্থানীয় মাস্তান, রাজনৈতিক টাউট, ঝুট ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পক্ষকে লেলিয়ে দেয় কারখানার বিরুদ্ধে। অন্য দিকে ছোটখাটো কারখানাগুলো নিজেরা কোনো কাজ আনতে পারে না। অন্য কারখানার কাজ তারা সাব কন্ট্রাক্টে করে থাকে। এসব কারখানায় মোটা অঙ্কের বেতন দিয়ে বিদেশীদের পোষা হয় না। ফলে উসকানি দেয়া হয় না, ভাঙচুরও হয় না। অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্প খাতে বর্তমানে প্রায় ২৫ হাজার বিদেশী কর্মরত আছেন। এদের মধ্যে ২০ হাজারই ভারতীয়। একেক কারখানায় ১০ থেকে ২০ জন ভারতীয় মিলে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী সিন্ডিকেট।

অপেক্ষকৃত অধিক যোগ্যতাসম্পন্ন বলে দাবিদার এসব কর্মকর্তা এতটাই দাপুটে অবস্থানে রয়েছেন যে মালিকরা চাইলেও তাদের মাঝে বা তাদের ওপরে কোনো বাংলাদেশীকে বসাতে পারেন না। তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিজের বিশ্বস্ত কোনো বাংলাদেশী বা আত্মীয়স্বজনকে বসাতে চাইলে একযোগে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন তারা। পেশাগত কারণেই আমেরিকা-ইউরোপে অবস্থানরত ভারতীয় বংশোদ্ভূত ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সাথে তাদের সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। তারপর কৌশলে নিজ কর্মস্থল কারখানাটি বিক্রি করে দেন ভারতীয়দের কাছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্পের সাথে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করে যারা টিকতে পারছে না তারাও যুক্ত হয়েছে এই চক্রের সাথে। বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকায় ভালো অবস্থানে থাকা ভারতীয়রা উঠেপড়ে লেগেছে এর বিরুদ্ধে। নিজেদের অস্থাভাজন এই মিড লেবেল ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে তারা একের পর এক নামকরা কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছেন, আবার কৌশলে কিনেও নিচ্ছেন।

 অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, একদা বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্পের অহঙ্কার হিসেবে পরিচিত এসকিউ, ক্রিস্টাল, মাস্টার্ড, হলিউড, শান্তা, রোজ, ফরচুনা, ট্রাস্ট, এজাক্স, শাহরিয়ার, স্টারলি, ইউনিয়ন প্রমুখ দেশসেরা গার্মেন্ট কারখানার মালিক এখন ভারতীয়রা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিজ দেশের ওই ম্যানেজারদের যোগসাজশে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ, আমেরিকান, কানাডিয়ান নাগরিকেরা কিনে নিয়েছেন এসব কারখানা। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বর্ণনা করতে গিয়ে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ নয়া দিগন্তকে বলেন, কারখানাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকা এসব কর্মকর্তা এতটাই ক্ষমতাশালী যে, অনেক সময় স্বল্পশিক্ষিত মালিকদের তারাই নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। কৌশলে তারাই শ্রমিকদের সাথে মালিকদের সম্পর্ক তিক্ত করেন। একেক পক্ষকে একেক রকম বুঝিয়ে অস্থিরতা বাড়িয়ে তোলেন। তবে শিল্পের জন্য তাদের অপরিহার্যতা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের এখানে অনেক শিক্ষিত বেকার আছে সত্য, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর লেখাপড়া কর্মমুখী না হওয়ায় আমরা যখন লোক নিয়োগের উদ্যোগ নেই তখন যোগ্য লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালুর পাশাপাশি পোশাক শিল্প খাতে কর্মরত বিদেশীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
http://www.nowbdnews1.com/nayadiganta/2013/09/28/16851.htm

Friday 27 September 2013

‘বঙ্গবন্ধু ৩ লাখ বলতে গিয়ে ৩০ লাখ বলেছিলেন’

jafrullahগণস্বাস্থ্য হাসপাতালের পরিচালক ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধে নিহত হওয়া মানুষের সংখ্যা ৩ লাখ বলতে গিয়ে ভুল করে ৩০ লাখ বলেছিলেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা গণপরিষদ আয়োজিত ‘দেশপ্রেমিক অকুতোভয় সাংবাদিক মরহুম আতাউস সামাদের স্বপ্ন ও আজকের বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
জাফরুল্লাহ বলেন, ‘সাড়ে সাত কোটি মানুষের মধ্যে ৩০ লাখ লোককে হত্যা করা সহজ কথা নয়। শেখ মুজিব ৩ লাখ বলতে গিয়ে ভুল করে ৩ মিলিয়ন অর্থাৎ ৩০ লাখ মানুষ মুক্তিযুদ্ধে নিহত হওয়ার কথা বলে ফেলেন। কিন্তু তাঁর সে ভুল কেউ ধরিয়ে দেয় নাই।
http://www.newsevent24.com/?p=64075

তৌফিক এলাহীরা সরকারকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন

গোলাম মোর্তোজা : ‘প্রধানমন্ত্রী দেশে নাই। শুরু হয়েছে ভয়াবহ লোডশেডিং’Ñ এটা সরকার পক্ষের কারও কারও অভিযোগ। অভিযোগের ধরনটি এমন যে, বিদ্যুৎ সেক্টরের লোকজন সরকারকে বিপদে ফেলার জন্যে লোডশেডিং করছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ঠিকই আছে, সরকারকে বিব্রত করাই তাদের লক্ষ্য। এ বিষয়ে সরকারের কর্তাদের মেজাজ খারাপ করে দেওয়া কিছু তথ্য ও কয়েকটি অগুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

১. প্রধানমন্ত্রী তো বিদ্যুৎ সঙ্গে নিয়ে আমেরিকায় যাননি। বিদ্যুৎ উৎপাদন যদি ঠিক থেকে থাকে, তবে সেই বিদ্যুৎ কোথায় গেল?

২. লোডশেডিং কেন হচ্ছে- সেই প্রশ্ন করবে জনগণ। সরকারের লোকজনও যদি প্রশ্ন করে, তবে কাজ করবে কে?

৩. বিদ্যুতের চাহিদা কত, উৎপাদন কত, চুরি কত- সবই ডিজিটাল। জানা খুব সহজ। যদি সত্যি স্যাবোটাজ হয়ে থাকে, তবে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না?

৪. সরকারি তথ্য অনুযায়ী উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট। চাহিদা প্রায় ৭ হাজার মেগাওয়াট। উৎপাদন হচ্ছে হঠাৎ দু’একদিন ৬ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। এছাড়া প্রতিদিন আসলে উৎপাদন হচ্ছে ৫ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার মেগাওয়াট।

ক. প্রতিদিন উৎপাদন ঘাটতি দেড় হাজার থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট।

খ. উৎপাদন ক্ষমতা যদি ৯ হাজার মেগাওয়াট হয়, উৎপাদন কেন ৫ হাজার বা ৬ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট?

৫. রেন্টাল বা কুইক রেন্টালে সরকার পর্যাপ্ত জ্বালানি সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না। উৎপাদন না হলেও কুইক রেন্টাল ব্যবসায়ীদের কোনো ক্ষতি নেই। ক্যাপাসিটি ট্যাক্স তারা ঠিকই পাচ্ছে। যেমন একটি কুইক রেন্টাল কোম্পানির গত এপ্রিল মাসের হিসাব থেকে দেখা যায় তারা ১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎও উৎপাদন করেনি। কারণ সরকার জ্বালানি সরবরাহ করতে পারেনি। কিন্তু তারা এপ্রিল মাসে বিল পেয়েছে ৯ কোটি টাকা।

৬. প্রায় সব রেন্টাল-কুইক রেন্টালের মালিকরা এভাবেই লাভবান হচ্ছে। মূল্য দিতে হচ্ছে সাধারণ জনমানুষকে।

৭. চুক্তি অনুযায়ী সরকার জ্বালানি দিতে না পারলে ক্যাপাসিটি ট্যাক্স দেবে। জ্বালানি দেয়ার পরও কুইক রেন্টাল কোম্পানি বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে না পারলে, সরকারকে ক্ষতিপূরণ দেবে। বা¯ত্মবে জেনারেটর অকেজো থাকার কারণে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হয়ত চালু করতে পারছে না। ক্ষতিপূরণ যেখানে পাওয়ার কথা সরকারের, সেখানে ঘটছে উল্টো ঘটনা। কাগজে কলমে দেখানো হচ্ছে মেশিন ঠিকই আছে, সরকার জ্বালানি দিতে পারছে না। ফলে মেশিন চালু না করেও প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করছে কুইক রেন্টাল কোম্পানিগুলো।

সরকার মাঝেমধ্যে কিছু ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে। তবে সবকিছু মিলিয়ে অর্থ লুটের এক অভিনব উপায় রেন্টাল-কুইক রেন্টাল ব্যবসা।

৮. অতিদ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্যে কুইক রেন্টাল হতে পারত সর্বোচ্চ এক বা দুই বছরের জন্যে। কিন্তু সরকার চুক্তি করেছিল ৩ বছরের জন্যে। এখন আবার সেসব চুক্তির মেয়াদ আরও দুই তিন বছর করে বাড়ানো হচ্ছে। অর্থাৎ অস্থয়ী ব্যবস্থাকে স্থায়ী করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।

৯. এখন উৎপাদন ক্ষমতা ৯ হাজার মেগাওয়াট। সেটাই উৎপাদন করা যাচ্ছে না। তবে কেন আরও নতুন কুইক রেন্টাল কোম্পানির অনুমোদন দেয়া হচ্ছে? অর্থ হরিলুট?

১০. বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানের জন্যে কুইক রেন্টাল কোনো সমাধান নয়। প্রয়োজন ছিল এই পাঁচ বছরে কয়েকটি বড় বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করা। কিন্তু সেদিকে সরকারের নজর ছিল না। পিডিবির অকেজো হয়ে থাকা বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো মেরামতেরও কোনো উদ্যোগ সরকার নেয়নি।



১১. দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা খরচ করলে পিডিবির বন্ধ হয়ে থাকা বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যেত। মেরামতের দিকে দৃষ্টি ছিল না সরকারের।

১২. বর্তমান সরকার যেদিন দায়িত্ব নেয় সেদিন বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল প্রায় ৩ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট। এখন গড় উৎপাদন ৫ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট ধরলে উৎপাদন বেড়েছে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। সর্বোচ্চ উৎপাদন ৬ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ধরলে উৎপাদন বেড়েছে ২৭০০ মেগাওয়াট।

১৩. সব হিসেবের মারপ্যাঁচ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে কুইক রেন্টালের ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের জন্যে বছরে মোট ভর্তুকি দিতে হয় প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা। এগুলো অনুমান নির্ভর লেখা নয়। তথ্য-প্রমাণ যাচাই বাছাই করে লেখা। এবার হিসাব করে দেখেন, ২৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের জন্যে কি পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে, হচ্ছে!

১৪. অথচ মাত্র ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা খরচ করলে ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যেত। যার উৎপাদন খরচ হতো প্রতি ইউনিট ৩ থেকে সর্বোচ্চ ৫ টাকা। তেল দিয়ে উৎপাদন করলেও এই খরচ হতো। কুইক রেন্টাল থেকে যেখানে সরকার কিনছে ১৪ টাকা ইউনিট।

১৫. যত বেশি অর্থ ব্যয়, তত বেশি লাভ, তত বেশি আয়। জনগণের নয়, সরকার সংশ্লিষ্টদের!

১৬. সুন্দরবন ধ্বংস করে সরকার এখন ভারতীয় কোম্পানিকে দিয়ে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে চাইছে। এর বিরুদ্ধে চলছে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন, লংমার্চ। অথচ রামপালের পরিবর্তে লবণচড়ায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র করলে কোনো বিতর্ক উঠত না।

রামপাল থেকে সুন্দরবনের দূরত্ব সরকার বলছে ১৪ কি. মি.আসলে দূরত্ব ৯ কি. মি. লবণচড়ার দূরত্ব প্রায় ৩৫-৪০ কি. মি.।

১৭. বিতর্কিত জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক এলাহী চৌধুরী ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন আগামী ২২ অক্টোবর রামপালে ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করা হবে। যুক্তি নয়, একগুঁয়েমি আর গায়ের জোর সরকারের একমাত্র সম্বল।

১৮. ইতিহাস বলে, জনমানুষের বিপক্ষে গিয়ে কোনো কাজে সফল হওয়া যায় না। পশ্চিমবঙ্গের টাটার আলোচিত ন্যানো প্রকল্পের নন্দীগ্রাম ইস্যুতে ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারের পতন ত্বরান্বিত হয়েছিল।

আড়িয়াল বিলের বিমানবন্দর পরিকল্পনা থেকে সরে এসে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে শেখ হাসিনা সরকার একবার রক্ষা পেয়েছে।

রামপাল ইস্যুতে তৌফিক এলাহীরা সরকারকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন, কে জানে! সুত্র : সাপ্তাহিক আজকাল, নিউইয়র্ক ।
http://www.amadershomoybd.com/content/2013/09/28/news0042.htm

হায়দ্রাবাদ, মুসলিম গণহত্যার এক অজানা কাহিনী


হায়দ্রাবাদ: ব্রিটিশ থেকে ভারত-পাকিস্তান ভাগের সময় ১৯৪৭ সালে হিন্দু ও মুসলিমদের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় প্রায় ৫ লাখ লোক নিহত হয়। প্রধানত ভারত-পাকিস্তান সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতেই ওই হতাহতের ঘটনা ঘটে। খবর: বিবিসি’র।

কিন্তু এর এক বছর পরই মধ্য ভারতে আরেকটি নির্মম গণহত্যার ঘটনা ঘটে। ওই গণহত্যার ঘটনা আজও ইতিহাসে অস্পষ্ট রয়ে গেছে।

ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে মুক্ত হওয়ার পর ১৯৪৮ সালের সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবরে মধ্য ভারতে প্রায় আধা লাখ মুসলিমকে হত্যা করে নতুন ভারতীয় রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ। তাদের লাইন ধরিয়ে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে তৎকালীন ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

ওই ঘটনার ব্যাপারে ভারত সরকার কখনোই কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। ফলে খুব অল্পসংখ্যক ভারতীয়ই ওই গণহত্যার কথা জানে। সমালোচকরা দাবি করেন, ভারতের প্রতিটি সরকারই ওই ঘটনার তথ্য গোপন করে রেখেছে।

ভারত-পাকিস্তান ভাগের সময় যে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয় তার এক বছর পর মধ্যভারতের হায়দ্রাবাদে ওই গণহত্যার ঘটনা ঘটে।

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে ভারত প্রায় ৫০০টি স্বায়ত্ত শাসিত রাজত্বে বিভক্ত ছিল। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার সময় প্রায় সবগুলো রাজত্বই নতুন রাষ্ট্র ভারত ফেডারেশনে যোগ দেয়। কিন্তু হায়দ্রাবাদের নিজাম স্বাধীনতা দাবি করেন। এতে নয়াদিল্লির হিন্দু নেতারা খুবই অসন্তুষ্ট হন।

নয়াদিল্লি এবং হায়দ্রাবাদের মধ্যে এক দীর্ঘ তিক্ত অচলাবস্থার পর ভারত সরকার অবশেষে ধৈর্য্যহারা হয়ে পড়ে। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতের কেন্দ্রে একটি স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র তারা কোনোভাবেই মেনে নিতে প্রস্তুত নন।

তারা আরও আতঙ্কিত হয়ে পড় যখন হায়দ্রাবাদের সবচেয়ে শক্তিশালি মুসলিম রাজনৈতিক দলের সশস্ত্র উইং কয়েকটি হিন্দু গ্রামে ত্রাস তৈরি করে। আর এ ঘটনাটিকেই অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু হায়দ্রাবাদে সামরিক অভিযান চালান। ১৯৪৮ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতীয় সেনাবাহিনী হায়দ্রাবাদ আক্রমণ করে।

ভারতের রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনী সহজেই নিজামের বাহিনীকে পরাজিত করে। কিন্তু এরপর ভারতের রাষ্ট্রীয় বাহিনী মুসলিমদের ওপর এক ভয়াবহ নিধনযজ্ঞ চালায়। তারা মুসলিমদের ঘরবাড়ি গণহারে আগুনে পুড়িয়ে দেয়, লুটপাট চালায় এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে গণহারে হত্যা ও গণধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটায়।

এসব ঘটনার খবর নয়াদিল্লিতে পৌঁছানেরা পর প্রধানমন্ত্রী নেহেরু একটি কমিশন প্রেরণ করেন এর তদন্ত করার জন্য। ওই তদন্ত দলে কয়েকজন মুসলিমও ছিলেন। এর নেতৃত্বে ছিলেন পণ্ডিত সুন্দরলাল নামে এক কংগ্রেস সদস্য। কিন্তু ওই তদন্ত প্রতিবেদন আর কোনো দিনই প্রকাশ করা হয়নি।

সুন্দরলালের নেতৃত্বাধীন দলটি হায়দ্রবাদের প্রায় সবগুলো গ্রামই পরিদর্শন করে। ওই ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ থেকে বেঁচে যাওয়া প্রতিটি গ্রামের মুসলিমদের সাক্ষ্য থেকে তারা একটি প্রতিবেদন তৈরি করেন। সেখানে বলা হয়, ‘আমরা এ ব্যাপারে অকাট্য সব তথ্য-প্রমাণ পেয়েছি যে, ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং স্থানীয় পুলিশ সদস্যরাই হত্যাযজ্ঞ, লুটপাট এবং অন্যান্য অপরাধে অংশগ্রহণ করেছে।’

‘তদন্তে আমরা এও তথ্য পেয়েছি যে, সেনা সদস্যরা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের মুসলিমদের বাড়িঘর ও দোকানপাট লুটপাটে উৎসাহ যুগিয়েছে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে সেনা সদস্যরা হিন্দুদের এসব অপরাধ করতে বাধ্য করেছে।’

ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মুসলিমদের নিরস্ত্র করে সেসব অস্ত্র হিন্দুদের মাঝে বিতরণ করা হয়। ফলে হিন্দুরা মুসলিমদের ওপর তাদের জিঘাংসা চরিতার্থ করার সুযোগ পেয়ে যায়।

এমনকি অনেক ক্ষেত্রে ভারতীয় সেনারা নিজেরাই হত্যাযজ্ঞে অংশ নেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘অসংখ্য স্থানে সেনা সদস্যরা গ্রাম এবং শহরগুলো থেকে অসংখ্য মুসলিম যুবকদের ধরে নিয়ে এসে তাদের ঠাণ্ডা মাথায় খুন করে।’

তবে তদন্তে এও বলা হয়, কয়েকটি স্থানে ভারতের সেনা সদস্যরা ভালো আচরণ করে এবং মুসলিমদের রক্ষা করে।

মুসলিমদের ওপর হিন্দুদের ওই হত্যাযজ্ঞকে অনেকে হায়দ্রাবাদের সশস্ত্র মুসলিম রাজনৈতিক সংগঠনগুলো কর্তৃক হিন্দুদের ওপর চালানো বহু বছরের নিপীড়নের প্রতিশোধ হিসেবেও ব্যাখ্যা করে থাকেন।

সুন্দরলালের নেতৃত্বাধীন নেহরু কমিশনের প্রতিবেদনের সঙ্গে যুক্ত এক গোপন নোটে হিন্দুদের ওই নির্মম জিঘাংসার বিবরণ দেয়া হয় এভাবে, ‘অসংখ্য স্থানে আমরা পঁচতে থাকা মৃতদেহেপূর্ণ কুয়ো দেখতে পেয়েছি। এ রকম একটি কুয়োতে আমরা একত্রে ১১টি মৃতদেহ দেখতে পেয়েছি, যার মধ্যে শিশু সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরে রাখা এক নারীর মৃতদেহও রয়েছে।’

‘আমরা অসংখ্য মৃতদেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের টুকরো গর্তের মধ্যে পুঁতে রাখতেও দেখেছি। অসংখ্য স্থানে মুসলিমদের মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলতেও দেখেছি আমরা। মৃতদেহ পোড়ানোর পর অবশিষ্ট হাড়গোড় এবং মাথার খুলিও পড়ে থাকতে দেখেছি আমরা।’

সুন্দরলালের প্রতিবেদনে ২৭ থেকে ৪০ হাজার মুসলিমকে হত্যার কথা বলা হয়। সুন্দরলালের ওই প্রতিবেদন প্রকাশ না করার সিদ্ধান্তের কারণ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী নেহেরু কোনো ব্যাখ্যা দেননি। তবে ধারণা করা হয়, ভারত-পাকিস্তান ভাগের পর দেশব্যাপী হিন্দু ও মুসলিমদের মাঝে যে ব্যাপক হানাহানি শুরু হয় তা আরও বেড়ে যেতে পারে এই আশঙ্কায় সম্ভবত নেহেরু ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করেননি।

আর এটাও পরিষ্কার নয় যে, আজ কয়েক দশক পরে এসেও কেন ভারতের ইতিহাসের পাঠ্য পুস্তকগুলোতে ওই ঘটনার কোনো বিবরণ যুক্ত করা হয়নি। এমনকি আজও খুব অল্প সংখ্যক ভারতীয়ই সেদিন ঠিক কী ঘটেছিল তা জানেন।

সুন্দরলালের রিপোর্ট আজও ধোয়াশাচ্ছন্ন রয়ে গেছে। যদিও সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে অবস্থিত নেহেরু স্মৃতি যাদুঘর এবং গ্রন্থাগারে ওই প্রতিবেদনের কপিটি প্রদর্শন এবং পাঠের জন্য উম্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।

গত ৫ বছরে আওয়ামী সরকারের প্রকৃত উন্নয়নের বিলবোর্ড