Tuesday 26 August 2014

পঁচাত্তরের পালাবদল এবং জাসদের দায়

এরূপ পরিস্থিতির মোকাবিলা করছে নিদারুণ দমননীতির মাধ্যমে। এ দমননীতি চালানো হচ্ছে সরকারি ও বেসরকারি সশস্ত্র বাহিনীর সহায়তায়।...বিগত তিন বছরে অপদার্থ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার হাজার হাজার রাজনৈতিক কর্মীকে খুন করেছে, হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীকে জেলে পুরেছে, বিদেশি শক্তির সহায়তায় ঘৃণ্য রক্ষীবাহিনী ও গুপ্তঘাতক বাহিনী গঠন করে জনসাধারণের ওপর চালিয়েছে অমানুষিক অত্যাচার ও নিষ্পেষণ।...বর্তমান পরিস্থিতিতে তাই আমাদের সংগ্রামের প্রধান রূপ হচ্ছে যুদ্ধ আর সংগঠনের প্রধান রূপ হচ্ছে সৈন্যবাহিনী।...বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রত্যেক প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মীর কর্তব্য হচ্ছে বিপ্লবী গণবাহিনীতে যোগ দেওয়া...।
চুয়াত্তরের ১৭ মার্চ ঢাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর বাড়ি ঘেরাওয়ের পর জাসদ তার রণনীতি পাল্টাতে থাকে। শুরু হয় গণবাহিনী গড়ার প্রক্রিয়া। এর একটা সাংগঠনিক কাঠামো দাঁড়িয়ে যায় চুয়াত্তরের নভেম্বরের মধ্যে। সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়া এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ড্রেজার বিভাগের পরিচালক পদে চাকরিরত অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল আবু তাহেরকে ফিল্ড কমান্ডার এবং জাতীয় কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসানুল হক ইনুকে ডেপুটি কমান্ডার করে গণবাহিনী গঠন করা হয়েছিল। হাসানুল হক ইনু বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য এবং জাসদের সভাপতি। গণবাহিনীর অনেকেই এখন আওয়ামী লীগের সদস্য। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। তিনি মাদারীপুর জেলা গণবাহিনীর কমান্ডার ছিলেন।

জাসদ কি কাফফারা দিচ্ছে? ....মাহমুদুর রহমান মান্না

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষক আবু সালেহ সেকেন্দার ফোন করেছিলেন। বললেন, জাসদ নিয়ে অনেক কথাবার্তা লেখালেখি হচ্ছে। আপনি কিছু বলছেন না যে? আপনি তো জাসদের জন্ম থেকে ছিলেন। অনেক কিছু জানেন যা আমাদেরও জানার প্রয়োজন হতে পারে। লিখুন না।
আবু সালেহ সেকেন্দার হয়তো জানেন না জাসদ নিয়ে এ পত্রিকায় ৯ জুলাই আমি একটি লেখা লিখেছিলাম। মাত্র ২২ বছর বয়সে আমি জাসদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলাম। তখনো আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ চাকসুর সাধারণ সম্পাদক। স্বাধীনতার পরে এই একটি মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে ছাত্রলীগ জিতেছিল। তখনো ছাত্রলীগ ভাঙেনি। কেন্দ্রসহ সারা দেশে মুজিববাদ ও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের লড়াই শুরু হয়েছে। স্পষ্টত সমাজ বিপ্লবের বক্তব্য দিয়ে ওই নির্বাচনে আমি অংশ নিয়েছিলাম এবং জয়লাভের পরে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়ে পত্রিকায় বিবৃতি দিয়েছিলাম। '৭২-এ পল্টনে ছাত্রলীগের সম্মেলনে সে কারণে আমাকে বিশেষ বক্তা রাখা হয়েছিল রাতের অধিবেশনে। কিন্তু ছাত্রলীগের এক নেতা, মুক্তিযুদ্ধে মুজিব বাহিনীর ইনস্ট্রাকচার, পরবর্তীতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি, '৭৩-এ হাইজ্যাক হয়ে যাওয়া ডাকসু নির্বাচনে বিজয়ী সহ-সভাপতি আ ফ ম মাহবুবুল হক রাত ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত একনাগাড়ে ৪ ঘণ্টা বক্তৃতা করেন। যখন তার বক্তৃতা শেষ হয় তখন আমি আর বক্তৃতা করিনি। কিন্তু একটি আবেশ আমাকে জড়িয়ে রেখেছিল। রাত ২টা পর্যন্ত এই যে ছাত্রকর্মীদের বক্তৃতা শোনা, এখন তো কল্পনাই করতে পারি না।