Sunday 30 June 2013

বাংলাদেশে ন্যায়বিচার অধরা : পুলিশসহ নিরাপত্তা বাহিনীকে চরমভাবে রাজনীতিকীকরণ করা হয়েছে

প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদপত্র নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ন্যায়বিচার অধরা। ক্ষমতা কাঠামোর মধ্যে অবস্থানকারী কারও বিরুদ্ধে বিচার পাওয়া বিরল ঘটনা। নিবন্ধে বলা হয়, পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীকে চরমভাবে রাজনীতিকীকরণ করা হয়েছে। তারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের লেগাসি বয়ে বেড়াচ্ছে।
গতকাল পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণে ‘জাস্টিস স্টিল ইল্যুসিভ ইন ফ্যাক্টরি ডিজাস্টারস ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে প্রকাশিত নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়।
প্রতিরোধযোগ্য দুর্ঘটনায় বাংলাদেশের শত শত গার্মেন্ট শ্রমিক নিহত হলেও ক্ষমতাধর গার্মেন্ট মালিকদের বিচার না হওয়ার বিষয়টির ওপর আলোকপাত করা হয়েছে নিবন্ধটিতে। এতে বাংলাদেশের গার্মেন্টে সাম্প্রতিক সংঘটিত দুটি ভয়াবহ ট্র্যাজেডি— সাভারের রানা প্লাজা ও তাজরীন ফ্যাশনে শত শত শ্রমিকের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এর মালিকদের আদৌ বিচার হবে না। জিম ইয়ার্ডলির লেখা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২১ নম্বর আদালত কক্ষে (হাইকোর্টের) দেখা গেল তাজরীন ফ্যাশনের মালিক দেলোয়ার হোসেন নীরবে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি সন্দেহভাজন অপরাধী; কিন্তু তাকে নার্ভাস মনে হলো না।
সম্ভবত এর কারণ, তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি এবং হয়তো কখনও হবেও না। তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ডে ১১২ শ্রমিক নিহত হওয়ার পর তিনি একজন ঘৃণিত ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন।
সরকার গঠিত একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটির তদন্তে দেখা গেছে, কারখানাটিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি ছিল এবং তাকে ‘ক্ষমার অযোগ্য অবহেলার’ জন্য দায়ী করা হয়েছে।
নিবন্ধে বলা হয়, ১৯ জুন দেলোয়ার যখন আদালত থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলেন তখন একজন মহিলা তাকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি রাতে ঘুমান কীভাবে?’ এর চেয়েও বেশি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন হতে পারত : বাংলাদেশে যেখানে গার্মেন্টশিল্প অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে এবং রাজনৈতিকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী, সেখানে দেলোয়ারের মতো কারখানার মালিকের বিচার কি সম্ভব?
এখন অনস্বীকার্যভাবে পরীক্ষার পালা। তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ডের পর গত এপ্রিলে রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১২৯ শ্রমিক মারা যায়। এটা ছিল গার্মেন্টশিল্পের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয়। যখন ভবনটির ধ্বংসস্তূপ থেকে ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হচ্ছিল, সেই দৃশ্য দেখে হঠাত্ করেই পশ্চিমাদের ধারণা পাল্টে যায়। গার্মেন্টশিল্পে নিরাপত্তা সমস্যা এবং শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া হিসেবে গত সপ্তাহে ওবামা প্রশাসন বাংলাদেশের বাণিজ্য সুবিধা (জিএসপি) স্থগিত করে দেয়।
বাংলাদেশে গার্মেন্টশিল্পে অহরহই অগ্নিকাণ্ড এবং দুর্ঘটনা ঘটে। একটি হিসাবে দেখা যায়, ১৯৯০ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সময়ে ১ হাজারের বেশি শ্রমিক নিহত হয়েছে। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এ অপরাধে এখন পর্যন্ত একজন মালিকের বিরুদ্ধেও মামলা হয়নি।
নৃবিজ্ঞানী এবং সমাজকর্মী সাদিয়া গুলরুখ বলেন, ‘আমরা একটি আইনি নজির স্থাপন করতে চাই যে কারখানার মালিকরা এভাবে পার পেতে পারেন না।’
একদিক থেকে বলা যায়, দেলোয়ারের বিষয়ে আদালতে যে শুনানি চলছে তা হচ্ছে উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে। আদালতে তার অপরাধের কোনো বিচার হচ্ছে না। গুলরুখ এবং অন্যান্য মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীরা বলছেন, পুলিশি তদন্ত বন্ধ থাকায় তারা হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়েছেন যেন তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়। ইতোমধ্যেই বিচার প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে গেছে এবং এতে আরও কয়েক মাস বা তারও বেশি সময় লাগতে পারে।
নিবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় ক্ষমতা কাঠামোর মধ্যে অবস্থানকারী কারও বিরুদ্ধে বিচার পাওয়া বিরল। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী যুগে প্রণীত আইনি ব্যবস্থা এখনও অটুট আছে। সে সময় এসব আইন করা হয়েছিল জনগণকে (বিদ্রোহ) নিয়ন্ত্রণের জন্য এবং ঔপনিবেশিক ক্ষমতা কাঠামো ধরে রাখার জন্য। অধিকন্তু পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীকে চরমভাবে রাজনীতিকীকরণ করা হয়েছে। তারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের লেগাসি বয়ে বেড়াচ্ছে।
নিবন্ধে বলা হয়, অনেক গার্মেন্ট মালিক এখন শীর্ষ ক্ষমতাধর। অনেকে সংসদ সদস্য। পোশাক রফতানি করে আসে মোট রফতানির ৮০ শতাংশ। এ কারণে গার্মেন্টশিল্পের অর্থনৈতিক ক্ষমতা ব্যাপক। জাতীয় নির্বাচনে গার্মেন্ট মালিকরা নির্বাচনী প্রচারণায় তহবিল জোগান দেন। এর ফলে তাদের রাজনৈতিক প্রভাবও ব্যাপক। যেমন রানা প্লাজা ধসের আগে প্রকৌশলীরা সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে ভবনটি নিরাপদ নয়। কিন্তু তারপরও শ্রমিকদের ভেতরে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। এরপর ভবন মালিক ও আওয়ামী লীগ নেতা সোহেল রানা পালিয়ে যান। ধারণা করা হয়, সরকারি দলের নেতা হওয়ায় তার বিচার হবে না।
তবে ব্যতিক্রম ঘটনা হিসেবে সোহেল রানাকে গ্রেফতার করার আদেশ দেয় হাইকোর্ট।
এ ব্যাপারে ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ‘এটা ছিল অস্বাভাবকি ঘটনা। আমি মনে করি, এটা সম্ভব হয়েছে দেশি-বিদেশি ক্ষোভের কারণে।’
নিবন্ধে বলা হয়, দেলোয়ারের বিরুদ্ধে হত্যামামলা দায়ের করেছিলেন দুর্ঘটনায় বোন হারানো মতিকুল ইসলাম মতিন। এরপর থেকেই তাকে টেলিফোনে হুমকি দেয়া হচ্ছে। এখন তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
ক্ষুব্ধ মতিন বলেন, ‘আমি ন্যায়বিচার চাই। পুরো ব্যবস্থা (রাষ্ট্রযন্ত্র) দেলোয়ারের মতো লোকদের পক্ষে। তিনি একজন ধনী মানুষ। আমাদের কথা যাদের শোনার কথা ছিল, তারা এখন দেলোয়ারকে রক্ষা করে চলছেন।

রানা প্লাজার ঘটনা তেমন কিছু নয়...সুরঞ্জিত

 গত ৩০ বছরের ইতিহাসে রানা প্লাজার ঘটনা তেমন কিছু নয় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও দপ্তরবিহীনমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। গতকাল সকালে জাতীয় গণগ্রন্থাগার মিলনায়তনে জাতীয় নেতা এএইচএম কামরুজ্জামানের ৯০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা পরিষদ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।  রানা প্লাজা ধসের ঘটনাকে ‘তেমন কিছুই নয়’ বলে মন্তব্য করে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, রানা প্লাজায় সরকার সর্বাত্মক উদ্ধার তৎপরতা চালিয়েছে। সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীকে দিয়ে সরকার উদ্ধার তৎপরতা চালিয়েছে। এ ভবনের মালিক রানাকে  গ্রেপ্তার করেছে। আদালতে এর বিচার চলছে। তাই জিএসপি-সুবিধা বাতিলে রানা প্লাজার ঘটনা তেমন প্রভাব পড়েনি।

প্রসঙ্গত ১৯৮৪ সালে ভূপালের দুর্ঘটনার পর সাভারের রানা প্লাজা ধস শিল্প ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা। এই দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়ায়, এখনও নিখোঁজ আছেন তিনশর মতো শ্রমিক। সাভারে রানা প্লাজা ধসের পর আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সমপ্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশী পণ্যের জন্য  দেশটির বাজারে অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকারের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করে।
জিএসপি-সুবিধা বাতিলের জন্য খালেদা জিয়াকে দায়ী করে সুরঞ্জিত বলেন, খালেদা জিয়া ‘ওয়াশিংটন টাইমস’-এ যে নিবন্ধ লিখেছেন সে কারণেই এটা বাতিল হয়েছে। এটা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক স্ট্যান্ডবাজি। দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে ‘ওয়াশিংটন টাইমস’-এ নিবন্ধ লেখার জন্য খালেদা জিয়াকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে জাতির কাছে বলতে হবে, আমি (খালেদা) সম্পূর্ণ প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে নিবন্ধ লিখেছি। আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ়, সংক্ষুব্ধ হয়ে এ কাজ করেছি। আমাকে ক্ষমা করুন। জিএসপি বাতিল হওয়ায় বিএনপিসহ ১৮ দল উৎসব করছে মন্তব্য করে দপ্তরবিহীন এই মন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে জয়ী হয়েছেন। তারা গোড়া কেটে আগায় পানি দিয়ে মায়াকান্না করছেন। ক্ষমতার জন্য এ ধরনের কর্মকাণ্ড ইতিহাসের পাতায় কালো অক্ষরে লেখা থাকবে। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের এ প্রবীণ নেতা বলেন, আপনি (ইউনূস) দেশের স্বার্থে সঠিক কাজ করবেন। দয়া করে গ্রামীণ ব্যাংককে বিএনপির ব্যাংক বানাবেন না। কারও পক্ষ হয়ে যাবেন না। সংগঠনের সহ-সভাপতি সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য  দেন ওলামা লীগের সভাপতি ইলিয়াস হুসাইন বিন হেলালী, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এইচএমএস চৌধুরী সুজন, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার প্রমুখ। 

ডেইলি মেইল ও মিরর অনুসন্ধান- রেশমা উদ্ধার সাজানো

 রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে বহুল আলোচিত রেশমা উদ্ধার অভিযান ছিল সাজানো। এ কারখানা বিধ্বস্ত হয়ে হাজারের বেশি মানুষ নিহত হওয়ায় বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের লোভনীয় এ শিল্পের সুনাম ধরে রাখতে বাংলাদেশে মিথ্যা ‘অলৌকিক’ উদ্ধার অভিযানের কাহিনী সাজানো হয়। রেশমাকে উদ্ধারের মধ্য দিয়ে হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর কথা অনেকাংশে ভুলে গিয়েছে। গতকাল বৃটেনের প্রভাবশালী পত্রিকা ডেইলি মিরর ও ডেইলি মেইলের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, রেশমাকে উদ্ধারের ঘটনা সাজানো (যড়ধী)। কারণ, রানা প্লাজা যেদিন ধসে পড়েছিল সেদিনই তিনি তার এক পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে বাইরে বেরিয়ে এসেছিলেন। ওই দু’টি পত্রিকার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রেশমার সঙ্গে উদ্ধার হওয়া ওই পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে কথা হয়েছে ওই দুই পত্রিকার সাংবাদিকদের। তাদের তিনি জানিয়েছেন, এপ্রিলে ওই ৮ তলা ভবনটি ধসে পড়ার পর তিনি ও রেশমা এক সঙ্গে বেরিয়ে আসেন। তখন রেশমার সঙ্গে তিনি ছিলেন তৃতীয় তলায়। ওই পুরুষ সহকর্মী নাম প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন নিরাপত্তার জন্য। তিনি বলেছেন, আমরা দু’জনেই একসঙ্গে ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসি। তারপর একই হাসপাতালে ছিলাম দু’দিন। তারপর রেশমা হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যায়। এরপর তাকে আমি দেখতে পাই ঘটনার ১৭ দিন পর টেলিভিশনে। তখন বলা হচ্ছিল এটা একটি অলৌকিক ঘটনা। কিন্তু আসলে এটা একটি ডাহা মিথ্যা কাহিনী। এ ঘটনা অনুসন্ধানে সানডে মিরর তাদের প্রতিনিধি পাঠায় বাংলাদেশে। তিনি বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এতে তিনি বুঝতে পারেন এই উদ্ধার অভিযান সাজিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। এর কারণ, বাংলাদেশে রয়েছে বছরে ১০০ কোটি পাউন্ডের গার্মেন্ট ব্যবসা। রানা প্লাজা ধসের পর সেই ব্যবসায় বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। তার বিরুদ্ধে লড়াই করতে কর্তৃপক্ষ এমন ঘটনা সাজায়। মিরর বলেছে, গার্মেন্ট শ্রমিকরা তাদের কাছে প্রমাণ তুলে দিয়েছেন। পত্রিকা কর্তৃপক্ষ তাদের দেয়া বক্তব্যের রেকর্ডিং যাচাই করেছেন। তবে রেশমার যে সহকর্মী ওই তথ্য মিডিয়াকে দিয়েছেন তার বক্তব্য ঢাকায় সরকারবিরোধী পত্রিকা দৈনিক আমার দেশ-এর সাংবাদিকরা যাচাই করেছেন। রেশমার সঙ্গে বেঁচে যাওয়া ওই ব্যক্তি সাংবাদিকদের বলেছেন, রেশমা ঘটনার দিনই বেরিয়েছিলেন। তাকে কাছেই এনাম হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। রানা প্লাজার আশপাশের রাস্তায় যাদের দিন কাটে তারা বলেছেন, রহস্যময় ওই উদ্ধার অভিযানের আগে তাদেরকে সেখান থেকে উঠিয়ে দেয়া হয় জোর করে। কোন ব্যাখ্যা না দিয়ে তার পরের দিন তাদেরকে স্ব স্ব স্থানে ফেরার অনুমতি দেয়া হয়। একই সঙ্গে উদ্ধার অভিযানের দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি না করতে ২৪ ঘণ্টার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এছাড়া রেশমার শারীরিক অবস্থা, তার পোশাকের অবস্থা দেখেও প্রশ্নের উদ্রেক হয়। মিরর লিখেছে, অনুসন্ধানী সাংবাদিক শিশির আবদুল্লাহ বলেছেন, রেশমা ১৭ দিন টনকে টন ওজনের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে ছিলেন। কিন্তু তাকে দেখে তেমন কোন চিহ্নই পাওয়া যায়নি। রেশমা বলেছেন, তিনি পানির জন্য এলোপাতাড়ি ছড়িয়ে থাকা মৃতদেহের ভেতরে ইট ও ধ্বংসস্তূপের ভেতর হামাগুড়ি দিয়েছেন। আঙ্গুল ও নখ দিয়ে পথ বের করেছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে তার হাতে ও নখে যে চিহ্ন থাকার কথা তা পাওয়া যায়নি। এছাড়া রেশমাকে যখন উদ্ধার করে বাইরে আনা হলো তখন তার চোখ ছিল পরিষ্কারভাবে খোলা। এত দিন অন্ধকারে আটকে থাকার পরও উজ্জ্বল সূর্যালোকে তাকে সংবেদনশীল মনে হয়নি। তিনি যে পোশাক পরেছিলেন তা ছেঁড়া বা ছিন্নভিন্ন দেখা যায়নি। বরং তা দেখা গেছে পরিষ্কার। এতে লোকজনের মধ্যে সন্দেহ বাড়তে থাকে। কিন্তু সরকার একে তুলে ধরে অলৌকিক ঘটনা হিসেবে। লোকজনকে এমনি এক প্রচারণার মধ্যে ডুবিয়ে রাখা হয়। সবাইকে বানানো হয় বোকা।
রেশমা অশিক্ষিত। তাকে কয়েকদিন আগে সরকার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে হাজির করা হয়েছিল। ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে নতুন চাকরি দেয়া হয়েছে তাকে। এ চাকরিতে রেশমাকে বেতন দেয়া হচ্ছে মাসে ৬০০ পাউন্ড, যা গড় বেতনের ১০ গুণের সমান।
ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি ‘ধোঁকা’ প্রসঙ্গে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান। বলেন, আমি যেখানে ছিলাম আপনারা সেখানে ছিলেন না। তাই আপনাদের কোন ধারণা নেই। এ অবস্থায় কর্মকর্তারা তাকে আর প্রশ্ন করতে দেননি সাংবাদিকদের। বলা হয়েছে, রেশমাকে নতুন জীবনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। সে প্রস্তাব ফেলে তাকে দেয়া হয়েছে ওই হোটেলের চাকরি।
মিরর লিখেছে, রেশমা রাজধানী ঢাকা থেকে ৩০০ মাইল উত্তর-পশ্চিমে দিনাজপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম রানীগঞ্জে বেড়ে ওঠেন। আমরা শুক্রবার সেই গ্রামে যাই। সেখানে ছোট্ট এক রুমের মাটির ঘর। উপরে ছনের ছাউনি। এখানে রেশমার মা জোবেদাও তার মেয়ের উদ্ধার অভিযানকে ‘ধোঁকা’ বলে মানতে নারাজ। তিনি বলেন, সবাই জানে তার উদ্ধার অভিযান একটি অলৌকিক ঘটনা। এখন রেশমা নতুন একটি চাকরি পেয়েছে। এখন আমাদের সামনে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ। ভবন ধসের খবর শোনার পর আমরা ছিলাম উদ্বিগ্ন। স্বামীকে নিয়ে আমি ঢাকা চলে যাই। মেয়ের সংবাদের জন্য অপেক্ষায় থাকি অন্যদের মতো। রেশমাকে পেতে প্রার্থনা করতে থাকি।
১৭ দিন পর। ১০ই মে। এদিনও উদ্ধার অভিযান চলছিল। অপেক্ষায় থাকা পরিবারগুলোকে খবর জানাতে লাউড স্পিকারের মাধ্যমে একটি ঘোষণা দেয়া হলো। তাতে বলা হলো- এখনও একজন নারী জীবিত আছেন। তার নাম রেশমা।
জোবেদা বলেন, আমি এ কথা শুনে মূর্ছা গেলাম। যখন আমার চেতনা ফিরল তখন লোকজন আমাকে নিয়ে গেল একটি হাসপাতালে তাকে দেখতে। তখন সে সচেতন। আমাদের সঙ্গে কথা বলল। সে আমাদের বলল- সে খুশি। তার বাহুতে সামান্য দাগ আছে। সে ভাল আছে। আমার আনন্দের সীমা রইল না। আমি বিশ্বাস করতে পারলাম না যে, সে কত ভাগ্যবতী। তার দেখাশোনা করছিল সেনাবাহিনী। আরও সুস্থ হয়ে সে হাসপাতাল ছাড়ে এবং তাকে হোটেলে একটি নতুন চাকরি দেয়া হয়। সে আমাদের এখন অর্থ পাঠাবে। আমরা আশা করছি, বছরে আমাদের দেখতে দু’বার বাড়ি আসবে সে।
বস্তিতে বসবাসকারী এসব শ্রমিক যুক্তরাজ্যের প্রাইমার্ক ও বিশ্বের অন্যান্য স্টোরের জন্য দিনে এক পাউন্ডের বিনিময়ে কাজ করতেন। ২৪শে এপ্রিল ওই ভবন ধসে পড়ার আগে এর দেয়ালে ফাটলের বিষয়ে অভিযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু সম্পদশালী ওই কারখানার মালিক তা উপেক্ষা করে। সে অনুমতি না নিয়ে ওই ভবনের ওপরে অতিরিক্ত তিনটি ফ্লোর নির্মাণ করে। তাকে সহ আরও কয়েকজনকে এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শাস্তি হিসেবে তাদের মৃত্যুদণ্ড চাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের প্রকৌশলীরা এক জরিপ চালিয়ে এ মাসের শুরুর দিকে দেখেছেন যে, বাংলাদেশের তিন-পঞ্চমাংশ গার্মেন্ট কারখানা ধসে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
মিরর লিখেছে, উদ্ধার অভিযান নিয়ে ‘ধোঁকাবাজি’র বিষয়ে আমরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেনেন্ট নুরে আলম সিদ্দিকীর কাছে জানতে চাই। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা কোন মন্তব্য করব না। 


Did this woman really survive 17 days in the rubble of Bangladesh factory or was her miracle story actually a hoax? (Daily Mail)

  • *Male colleague claims she escaped on the day the building collapsed
  • *Doubt has been cast on official story of her 17-day ordeal
  • *Bangladeshi investigators claim government staged rescue
  • *They are protecting the nation's £1bn clothing industry, said activists

  • The picture of Reshma Begum being pulled from the rubble in the aftermath of the collapse of a Bangladesh clothes factory was a potent symbol of hope seen around the world.
    The 19-year-old endured 17 days in the wreckage of the eight-storey Rana Plaza building, where 1,129 people were killed in April in the clothing industry's worst disaster, before she was dramatically rescued.
    But the apparently miraculous rescue was faked by Bangladeshi authorities as a damage-control exercise to protect the reputation of the nation's lucrative garments industry, according to a former colleague.
    Scroll down for video
    Lies? A man claiming to be a colleague of Reshma Begum, the woman who was dramatically pulled from the rubble of the Bangladesh clothing factory collapse, claims her inspiring rescue is a fabrication
    Lies? A man claiming to be a colleague of Reshma Begum, the woman who was dramatically pulled from the rubble of the Bangladesh clothing factory collapse, claims her inspiring rescue is a fabrication
    The tragedy of losing more than a thousand lives was forgotten by the victory of saving one.
    The official story states workers had all but given up hope of finding anyone alive after 17 days but heard her cries seconds before they were due to smash the concrete with heavy machinery, which would have brought the chunks falling down on her.
    But the unnamed man claims Miss Begum escaped from the third floor with him on the day the building collapsed.
     
    He said: 'We escaped together. We both walked away from the rubble.
    Reshma and her family's lives have been transformed since the accident. She now has a lucrative job at a luxury hotel
    Reshma and her family's lives have been transformed since the accident. She now has a lucrative job at a luxury hotel
    'We spent two days in hospital but then she vanished. The next time I saw her was on TV 17 days later.
    'They said it was a miracle. But it was a fake.'
    Anti-government campaigners played his testimony to Sunday Mirror reporters. He is reported to have gone into hiding over fears of government reprisal.
    Bangladeshi newspaper Amar Desh claims to have uncovered evidence that cast doubt on the official version of events.
    The pictures of the teenager have come under scrutiny. In her testimony she claimed to have clawed through dirt and rubble to reach water in the rucksacks of the dead, but her hands don't appear to have injuries consistent with such a harrowing physical ordeal.
    The paper also states the sari she was wearing was not dirty and her eyes seemed unaffected by the bright sunlight, despite the fact she was in darkness for more than two weeks.
    TV footage shows she was looking inquisitively around her after she was stretchered away
    People living near the disaster zone also claim much of the rescue work was mysteriously done at night, and authorities prevented anyone filming or photographing the site.
    Last week  Reshma appeared at a government press conference to celebrate her new job as an ambassador for a five-star Dhaka hotel, where she is being paid £600-a-month, nearly four times her salary at the factory.
    Responding to questions about whether her ordeal was staged, she said: 'What did you say? Where I was, you were not there. So you have no idea.' Officials then banned further questions.
    Investigators claim Miss Begum's appearance and injuries in the famous pictures are not consistent with 17 days trapped under rubble
    Investigators claim Miss Begum's appearance and injuries in the famous pictures are not consistent with 17 days trapped under rubble
    Collapse: The building housed factories that made low-cost garments for Western brands. Authorities vowed to clamp down on unsafe working practices in the wake of the disaster
    Collapse: The building housed factories that made low-cost garments for Western brands. Authorities vowed to clamp down on unsafe working practices in the wake of the disaster
    The teenager, from a remote village in the western district of Dinajpur, had started her £38-a-month job at the garment factory only three weeks before the building collapsed.
    Her family, whose lives have been transformed by the teenager's lucrative new job, denied the allegations.
    Speaking from the family's shack in Rani Ganj, a remote village 300 miles north west of Dhaka, her mother Jobeda said: 'Her escape is the miracle everyone thinks it is.'
    'We have lots of money now Reshma has her new job. We have a good future now,' she added.

    THE SHAME OF A NATION: THE FASHION INDUSTRY'S BIGGEST DISASTER

    People gather after the collapse of an eight-story building in Savar, near Dhaka, on Wednesday, April 24, 2013
    When the Rana Plaza factory building crashed down in April, 1,129 people were killed.
    Many of those freed are still recovering.Rescuers with no medical training were forced to perform amputations on the spot to free them without anaesthetic.
    Bangladesh's government and garment manufacturers are campaigning to close dangerous factories and to make safety a priority for the country's most valuable export industry.
    Bangladeshi garment factories are routinely built without consulting engineers.
    Many are located in commercial or residential buildings not designed to withstand the stress of heavy manufacturing.
    Some add illegal extra floors atop support columns too weak to hold them, according to a survey of scores of factories by an engineering university that was shown to The Associated Press.
    A separate inspection, by the garment industry, of 200 risky factories found that 10 per cent of them were so dangerous that they were ordered to shut.
    The textiles minister said a third inspection, conducted by the government, could show that as many as 300 factories were unsafe.

    http://www.dailymail.co.uk/news/article-2351822/Were-pictures-woman-pulled-rubble-hoax-Former-colleague-Bangladesh-clothes-factory-victim-says-government-miracle-story.html


  • Bangladesh clothes factory disaster miracle is branded a hoax by colleague of woman rescued-(Daily Mirror)

    Sewing machinist Reshma Begum was pulled from the rubble 17 days after factory collapsed but now a fellow worker claims she escaped with him on the day of the disaster





    New job: Reshma Begum now works as a hotel ambassador
    New job: Reshma Begum now works as a hotel ambassador

    Sunday Mirror
    The miracle rescue of a worker 17 days after the Bangladesh clothes factory disaster has been branded a HOAX.
    Millions around the world reacted with joy as pictures showed sewing machinist Reshma Begum being lifted from the rubble in which 1,221 died.
    But a Sunday Mirror investigation today reveals doubts over the “rescue” as a male colleague claims she got out with him on the day the nine-storey building collapsed in April.
    The survivor, who says he was working alongside her on the third floor, declared: “We escaped together. We both walked away from the rubble.
    “We spent two days in hospital but then she vanished. The next time I saw her was on TV 17 days later. They said it was a miracle. But it was a fake.”

    The Sunday Mirror travelled to Bangladesh to meet anti-government campaigners who insist the rescue was staged by the authorities to combat the wave of bad publicity that engulfed the country’s £1billion-a-year garment industry after the Rana Plaza factory collapsed in Dhaka.
    We were played a recording of the worker’s evidence. His name is being withheld because he has gone into hiding amid fear of reprisals.
    His dramatic hoax claims have been investigated by journalists from Dhaka’s pro-opposition daily, Amar Desh.
    Reporters there were also told by survivor Reshma’s landlady that she had escaped the collapse on the day it happened and had been treated at the nearby Enam hospital.
    People who live on streets around the factory described how they were mysteriously forcibly evacuated from their homes the day before 19-year-old Reshma’s rescue and allowed back the next day with no explanation.
    At the same time a 24-hour ban was imposed on the filming of the ongoing rescue operation.




    Reshma Begum rescued from the rubble in Bangladesh
    The rescue: Reshma's sari was clean despite 17 days in rubble

    Getty

    Questions have also been raised over Reshma’s physical appearance when she was taken from the ruins as well as the condition of her clothes.
    Investigative reporter Shishir Abdullah said: “She did not show any signs of having been trapped beneath tons of rubble for 17 days.
    “She said she had to claw her way through bricks and debris to reach water in dead victims’ rucksacks, but her hands and fingernails did not show the marks you would expect.
    “Also her eyes were wide open when they pulled her out and she did not appear to be sensitive to the bright sunlight. The sari she wore was not ripped or torn and appeared clean.
    “People were suspicious but the government made a huge fuss of hailing it as a miracle. People were taken in. Everyone was fooled.”
    A week ago, illiterate Reshma was paraded at a government press conference in a new job as an ambassador for a five-star Dhaka hotel, where she is being paid £600-a-month - 10 times the average salary.
    She reacted angrily to suggestions of a hoax, saying: “Where I was, you were not there. So you have no idea.” Officials then banned further questions. It has been claimed Reshma was given the job after turning down the offer of a new life in the US.
    On Friday we travelled to Rani Ganj, the remote village where Reshma grew up 300 miles north west of Dhaka, the country’s capital.
    Speaking at her family home – a tiny, single-room mud shack with a straw roof – her mother Jobeda refuted the hoax claims, telling us: “Her escape IS the miracle everyone thinks it is.”
    But she added: “We have lots of money now Reshma has her new job. We have a good future now.”
    “After we heard the building had collapsed we were so worried. My husband and I travelled to Dhaka and waited with the other families for news. We prayed Reshma would be found but our prayers went unanswered.”




    Reshma Begum's mum Jobeda Begum and sister Asma with Simon Wright
    Mum's home: Reshma 's mum Jobeda and sister Asma with Simon Wright

    Sunday Mirror/Roland Leon

    On May 10, the 17th day of the rescue operation, an announcement was made over a loudspeaker erected at the site to keep families informed.
    “It said, ‘A woman has been found alive. Her name is Reshma’.”
    Jobeda said: “I fainted. When I came round, people took me to the hospital to see her. She was awake and spoke to us. She told us she was happy.
    “She had just minor marks on her arms but otherwise she was fine. I was overjoyed. I couldn’t believe how lucky she had been. The army were looking after her.
    "When she was well enough, she left and was then given her new job at the hotel. She will send us money and we are expecting her to come home and visit us twice a year.”
    Their complaints of cracks in the factory’s walls in the days before the collapse on April 24 were ignored by the wealthy owners, who had added an extra three floors to the building without permission.
    They are now under arrest and facing demands for the death penalty for flouting planning laws.
    A survey by engineers in Bangladesh revealed earlier this month three fifths of the country’s garment factories are vulnerable to collapse.
    When we put the hoax rescue claims to the Bangladesh army last night, spokesman Lieutenant Commander Nure Alam Siddique said: “We have no comment to make.”
    Mirror print version 


     http://www.mirror.co.uk/news/world-news/bangladesh-clothes-factory-disaster-miracle-2011161

    Saturday 29 June 2013

    এত ভালোবাসা তবু আমিনা হয়নি ম্যান্ডেলার


    আমিনা ক্যাচালিয়া। হতে পারতেন নেলসন ম্যান্ডেলার জীবনসঙ্গী। নিজ মুখে ম্যান্ডেলা তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। গ্রহণ করেননি আমিনা। সবিনয়ে বলে দিয়েছেন, না, ম্যান্ডেলা এ সম্ভব নয়। জগৎজোড়া খ্যাতি যার, যার মাথায় শান্তির নোবেল মুকুট সেই ম্যান্ডেলার বিয়ের প্রস্তাব মুখে মুখে ফিরিয়ে দিলেন আমিনা। কে এই আমিনা? কেন তিনি ফিরিয়ে দিলেন ম্যান্ডেলাকে? প্রথম প্রশ্নের উত্তর হয়তো অনেকেরই জানা। আমিনা ক্যাচালিয়া ছিলেন ম্যান্ডেলার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। যার রান্নাঘর পর্যন্ত প্রবেশ ছিল ম্যান্ডেলার। গভীর ভাবাবেগ নিয়ে আমিনার বাড়ি ছুটে যেতেন তিনি। আমিনার পক্ষেও তাই। কৃতিত্বে, অভিজ্ঞতায় ম্যান্ডেলা মহাসমুদ্র আর আমিনাকে বলা চলে নদী। তবুও সমুদ্র-নদীর মোহনায় শেষ জীবনের বসত গড়তে চেয়েছিলেন ম্যান্ডেলা। আমিনা মোহনায় গাঁটছড়া বাঁধতে চাননি। তিনি ম্যান্ডেলা নামক মহাসমুদ্র জয় করতে চেয়েছেন। তবে অবশ্যই আপন বৈশিষ্ট্য অক্ষুণœ রেখে, ঠাই-ঠিকানার সুতো না ছিঁড়ে।
    এসব তথ্যের সত্যতা নিয়ে বিভ্রান্তির সুযোগ আছে বৈকি। কিন্তু আমিনার আÍজীবনী ‘হোয়েন হোপ অ্যান্ড হিস্ট্রি রায়িম’ এ বিভ্রান্তি দূর করে দেয়। আÍজীবনীটি জুন, ২০১৩-এর গোড়ার দিকে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে ম্যান্ডেলার সঙ্গে গভীর সম্পর্কের বিষয়টি অকপটে বলেছেন আমিনা। সম্পর্কের বিষয়ে আরও কিছু বলার আগে আমিনার পরিচয় যথাসম্ভব বলে নেয়া ভালো। আমিনা কিন্তু পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিয়েছেন। বেশি দিন নয় মাস পাঁচেক আগেÑ তারিখ ৩১ জানুয়ারি, ২০১৩। বিদায়বেলায় আমিনার বয়স ছিল ৮২ বছর। এর ঠিক ১৮ বছর আগের ঘটনা। মে ১৯৯৫। আমিনার স্বামী ক্যাচালিয়া মারা যান। আমিনা তার স্বামীর প্রতি যথেষ্ট দায়িত্বশীল ছিলেন বলে জানা যায়। আমিনার ছেলে গালের ক্যাচালিয়া ও মেয়ে কো কো ক্যাচালিয়া তাদের বাবা-মায়ের সুসম্পর্কের কথা বিভিন্ন সময় জানিয়েছেন। স্বামী হারানোর আঘাতে আমিনা যখন শোকের জলে ভাসছেন ম্যান্ডেলা তখন নতুন জীবনের স্বপ্ন নিয়ে দাঁড়ান তার সামনে। এখানে আরেকটু বলা প্রয়োজন, আমিনার স্বামী ক্যাচালিয়া ছিলেন ম্যান্ডেলার রাজনৈতিক সঙ্গী। সেই সুবাদে আমিনার বাড়িতে যাতায়াত ছিল ম্যান্ডেলার। এম অ্যান্ড জি-তে দেয়া সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে আমিনার মেয়ে কো কো বলেছেন, ‘আমরা জানতাম আমাদের মাকে ম্যান্ডেলা ভীষণ পছন্দ করেন। এক্ষেত্রে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।’ কো কোর স্পষ্ট দাবি, তাদের বাড়িটি ছিল ম্যান্ডেলাময়। এমনকি তাদের বাবার মৃত্যুর সময়ও ম্যান্ডেলা সব সময় তাদের পাশে থেকেছেন। কো কো আরও বলেছেন, তার বাবার সঙ্গে নিবিড় রাজনৈতিক সম্পর্ক থাকলেও তার মায়ের সঙ্গে তার চেয়েও বেশি ব্যক্তিক সম্পর্ক ছিল।
    আমিনার ছেলে গালেব তার মায়ের আÍজীবনী লিখতে সাহায্য করেছিলেন। সম্প্রতি দ্য মেইল এবং গার্ডিয়ান পত্রিকায় দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, আমিনা ম্যান্ডেলার সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা জানাতে চাইলেও ম্যান্ডেলার দেয়া বিয়ের প্রস্তাব সম্পর্কে কিছুই তার আÍজীবনীতে লিখতে চাননি। তবে তাদের দুই ভাই-বোনকে একদিন তাদের মা ডেকে বলেছিলেন, ‘মাদিবা (ম্যান্ডেলা) তাকে বিয়ে করতে চান।’ সে সময় ধীরচিত্তে আমিনা তার প্রস্তাবে সাড়া দেয়া থেকে বিরত থাকেন। গালেব বলেন, তার মা কখনোই তার অতীতকে, তার অস্তিত্বকে হারাতে চাননি। স্বামীর স্মৃতিটুকু আঁকড়ে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বাঁচতে চেয়েছেন তিনি। তবে ম্যান্ডেলাকে নিয়ে আমিনার ভাবাবেগেরও অন্ত ছিল না। আমিনার স্বামী যখন মারা যান, সে সময় ম্যান্ডেলার দ্বিতীয় স্ত্রী উইনি মাদিকিজেলার সঙ্গে প্রায় ছাড়াছাড়ি অবস্থা। পরের বছরই ম্যান্ডেলা উইনিকে তালাক দেন এবং গ্রাসা ম্যাশেলকে বিয়ে করেন। কিন্তু এত ভালোবাসা জমিয়েছিলেন যার জন্য, সেই আমিনা হননি ম্যান্ডেলার। এতদিন এ নিয়ে আলাপ না হলেও আমিনার আÍজীবনীই বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিল ম্যান্ডেলার গোপন ভালোবাসার কথা। অবশ্য এ নিয়ে ম্যান্ডেলা পরিবার কোন মন্তব্য করেনি।
    - See more at: http://www.jugantor.com/ten-horizon/2013/06/30/8988#sthash.j2tXNwoP.dpuf

    খুলনায় অধিকার-এর তথ্য প্রকাশ : দেশে ৫ বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুমের শিকার ৮৭ জন

    খুলনাসহ দেশে গত পাঁচ বছরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হাতে গুমের শিকার ৮৭ জন। এর মধ্যে ২০০৯ সালে ৩ জন, ২০১০ সালে ১৮ জন, ২০১১ সালে ৩০ জন, ২০১২ সালে ২৪ জন এবং ২০১৩ সালের মে মাস পর্যন্ত ১২ জন গুম হয়েছেন।
    গতকাল খুলনায় ‘গুম হতে সব ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সনদ অনুমোদনের প্রচারাভিযান’ শীর্ষক বিভাগীয় অ্যাডভোকেসি সভায় মানবাধিকার সংগঠন অধিকার-এর পক্ষ থেকে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
    নগরীর অভিজাত হোটেলে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র মো. মনিরুজ্জামান মনি এবং খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। সভায় উদ্বোধনী ও স্বাগত বক্তব্য রাখেন, অধিকার-এর কো-অর্ডিনেটর রেজাউল করিম হাশমী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধিকার খুলনার হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার মুহাম্মদ নূরুজ্জামান। প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন বাংলাদেশ অ্যালাইন্স এগেইনেস্ট টর্চারের নির্বাহী সদস্য বেনজিন খান। সভায় গুমের ঘটনা দ্রুত প্রতিহত করতে না পারলে গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে একটি ট্রেন্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে জানানো হয়, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ অপরাধটি নতুন নয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ব্যাপক গুমের ঘটনা ঘটে। যা যুদ্ধ পরবর্তীকালেও অব্যাহত রয়েছে। স্বাধীনতার পরবর্তীকালে গুম হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা জহির রায়হান এবং ১৯৯৬ সালে ক্ষুদ্রজাতি গোষ্ঠীর নেত্রী কল্পনা চাকমা অন্যতম। এছাড়া স্বাধীনতার পরপরই বিপ্লবী বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে প্রায় ত্রিশ হাজার তরুণ-যুবককে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হত্যা বা গুম করে। পরে রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসা বিভিন্ন সামরিক শাসনামলেও এ ধারা অব্যাহত থাকে। সম্প্রতি গুমের ঘটনা আবারও ঘটতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ ১৯৯৮ সালে কনভেনশন এগেইনস্ট টর্চার অনুস্বাক্ষর করেছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত গুম বিরোধী আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুমোদন করেনি।
    সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে খুলনা সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র মো. মনিরুজ্জামান মনি বলেন, শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামকে গুম করা হয়েছে কয়েকজন গার্মেন্ট মালিককে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। এখানে শ্রমিক স্বার্থ বিবেচনায় না এনে মালিকদের স্বার্থ বিবেচনা করা হয়েছে। যার ফলে আজ বিশাল পোশাক শিল্প ধ্বংসের মুখে নিপতিত। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা চরম হুমকির মুখে। গুম করার বিষয়টি এখনই ভেবে দেখার সময় এসেছে। তিনি বলেন, কাউন্সিলর চৌধুরী আলম গুম হন। কিন্তু তাকে উদ্ধারের ব্যাপারে সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। সরকার যখন নিজে কোনো কাজে জড়িত থাকে তখন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার অবস্থা থাকে না। সিলেটের বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে আজও সরকার উদ্ধার করতে পারেনি। তার গুম হওয়ার পর সরকারের আন্তরিকতার খুবই অভাব পরিলক্ষিত হয়। সরকারের উচিত গুম এবং দায়মুক্তি প্রতিরোধে গঠিত আন্তর্জাতিক আইনে স্বাক্ষর করা। সরকার যাতে এ আইন বাস্তবায়নে বাধ্য হয় তার জন্য জনমত গড়ে তোলা। এক্ষেত্রে অধিকারের নেতৃত্বে দেশে গণমানুষকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করা উচিত বলে তিনি মনে করেন। অধিকারের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে তিনি বলেন, গুম সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদে বাংলাদেশ যাতে স্বাক্ষর করে সে ব্যাপারে তিনি ভূমিকা পালন করবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দেন।
    অপর বিশেষ অতিথি খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, গুম আইনবহির্ভূত কাজ। এটি বন্ধ হওয়া উচিত। এটি মানবাধিকার লঙ্ঘন। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এটি মোকাবিলা করা উচিত। গুম সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদে বাংলাদেশ যাতে স্বাক্ষর করে সে ব্যাপারে তিনি পার্লামেন্টে কথা বলার অঙ্গীকার করে বলেন, যারা মানুষকে হত্যা করে সেটাও মানবাধিকার লঙ্ঘন। ফলে মানবাধিকার কর্মীদের উচিত উভয় বিষয়ে তদারকি করা।
    অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নাগরিক নেতা অ্যাডভোকেট ফিরোজ আহমেদ, কাউন্সিলর হাফিজুর রহমান, কাউন্সিলর হাফিজুর রহমান মনি, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ মাজহারুল হান্নান, খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোল্যা মাসুম রশিদ, খুলনা থেকে গুম হওয়া কুষ্টিয়ার জাসদ নেতা মোহাম্মদ আলী মহব্বতের স্ত্রী ময়না খাতুন, ভিকটিম পরিবার নেটওর্য়াক-এর সমন্বয়কারী কোরবান আলী, পোলট্রি ফিস ফিড মালিক সমিতির সেক্রেটারি জেনারেল এসএম সোহরাব হোসেন, দৈনিক সময়ের খবর-এর যুগ্ম সম্পাদক গাজী আলাউদ্দীন আহমেদ, মহানগর আ.লীগের উপ-দফতর সম্পাদক মাহবুব আলম সোহাগ, কমিউনিস্ট পার্টির নগর সম্পাদক মিজানুর রহমান বাবু, মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি রেহেনা আক্তার, আমার দেশ-এর খুলনা ব্যুরো চিফ এহতেশামুল হক শাওন, ব্লাস্ট খুলনার কো-অর্ডিনেটর অশোক কুমার সাহা ও সাংবাদিক মাহবুবুর রহমান মুন্না।
    সভায় বক্তারা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ সরকারের গুম সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর ও অনুস্বাক্ষর করতে সরকারের কাছে দাবি এবং এর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন দাবি করেন। একই সঙ্গে গুম হওয়া থেকে সবার সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সনদ অনুমোদনের বিষয়ে ব্যাপকভাবে প্রচারের পাশাপাশি এর বাস্তবায়ন এবং গুমজনিত অপরাধ বন্ধে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানানো হয়।

    Friday 28 June 2013

    খুন গুম মিডিয়া দলনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘন : আন্তর্জাতিক আদালতে শেখ হাসিনাসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল


    বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে হেগে আন্তর্জাতিক ক্রিমিনাল কোর্টে (আইসিসি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভলেপমেন্ট ফর বাংলাদেশ’ এবং গ্রেটার ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশী আমেরিকানরা। এ দু’সংগঠনের পক্ষ থেকে ওয়াশিংটনের ‘মারটিন এফ ম্যাকমহন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস’ ২৭ জুন বৃহস্পতিবার অভিযোগ দায়ের করে। ‘নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, দিগন্ত ও ইসলামিক টিভি এবং আমার দেশ পত্রিকার ওপরও সরকার আক্রমণ চালিয়েছে’ বলে ওই অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় মোট ২৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ কোর্টে যারা জামায়াত ও বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট প্রদান করেছেন অথবা তদন্ত করেছেন তাদের নামও রয়েছে এ অভিযোগনামায়। গত বছর ২৮৯ সাংবাদিকের ওপর সরকারের হামলা এবং ৫ জন নিহত হওয়ার তথ্যও উপস্থাপিত হয়েছে ওই অভিযোগপত্রে। দায়ের করা অভিযোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর জন্য একই দিন বিকালে ওয়াশিংটন ডিসি ন্যাশনাল প্রেস ক্লাবে অ্যাটর্নি মারটিন এফ ম্যাকমহন সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় অ্যাটর্নিকে সহযোগিতা করেন ওলিভার টডিল ও মুয়াজ রহমান।
    সাংবাদিক সম্মেলনে অ্যাটর্নি মারটিন এফ ম্যাকহাম সরাসরি মানবাধিকার লঙ্ঘনে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে আন্তর্জাতিক আদালতে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন বলে জানান। তবে সরাসরি মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি’ হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদসহ ৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার, র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেসুর রহমান ও বিজিবির মহাপরিচালক আজিজ আহমেদ। বাকিরা হলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ, চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার ওসি প্রদ্বীপ কুমার, ডিএমপি মতিঝিল জোনের এসি মেহদী হাসান, ডিএমপি লালবাগ বিভাগের ডিসি হারুন অর রশিদ, মিরপুর মডেল থানার ওসি সালাউদ্দিন, গোয়েন্দা বিভাগের এডিসি মশিউর রহমান, দারুস সালাম থানার ওসি খলিলুর রহমান, কাফরুল থানার ওসি আবদুল লতিফ, কাফরুল থানার সাব ইন্সপেক্টর আশিক, যাত্রাবাড়ী থানার ওসি রফিকুল ইসলাম, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নূর, শহিদুল ইসলাম, এম এম মোস্তাফিজুর রহমান ও হারুন রশিদ, পাবলিক প্রসিকিউটর সাজ্জাদুল হক শিহাব ও আসলাম।
    সংবাদ সম্মেলনে অ্যাটর্নি মারটিন উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই দেশে মানবাধিকর লঙ্ঘন করে আসছে। বাংলাদেশে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে মারটিন বলেন, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ বাংলাদেশী মিডিয়াসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, বিভিন্ন মানবাধিকার ও এনজিও সংস্থার রিপোর্টে রয়েছে। অ্যাটর্নি মারটিন বলেন, অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে রাষ্ট্রের চাপে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দিক দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্র হুমকির মুখে আছে। গত কয়েক মাস ধরে রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূত বেসামরিক মানুষ হত্যা, হয়রানি এবং গ্রেফতার ও অত্যাচার করা হচ্ছে। অভিযোগপত্রে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী ও ৫-৬ মে’র হত্যাকাণ্ডসহ আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে নির্যাতন, হেফাজতে ইসলামের নেতা আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ও ছাত্রনেতা দেলোয়ার হোসেনকে গ্রেফতার ও নির্যাতন, বিরোধীদলীয় নেতা ইলিয়াস আলী গুম, শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম হত্যা, ছাত্রনেতা মোহাম্মদ ফিরোজ খান ও আনোয়ারুল ইসলাম মাসুম পুলিশ কর্তৃক নির্যাতনের শিকার এবং জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাক্ষী সুখরঞ্জন বালী নিখোঁজ ও কলকাতায় আটক থাকার ঘটনা তুলে ধরেন।
    অ্যাটর্নি মারটিন দাবি করেন, বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী, র্যাব, বিজিবি ও ডিজিএফআইসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন করে আসছে। অভিযোগপত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে অ্যাটর্নি মারটিন উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে ২০০৯ সালে বিচারবহির্ভূত হত্যা ১৫৪ জন, ১০ সালে ১২৭ জন, ১১ সালে ৮৪ জন ও ১২ সালে ৭০ জন। ২০০৯ সালে বন্দি অবস্থায় মৃত্য ৫০ জন, ২০১০ সালে ৬০ জন, ১১ সালে ১০৫ জন, ১২ সালে ৬৩ জন। ২০০৯ সালে গুম হয়েছেন ৩ জন, ১০ সালে ১৮ জন, ১১ সালে ৩০ জন, ১২ সালে ২৪ জন। ২০০৯ সালে নির্যাতনে আহত ও নিহত হয়েছেন ৮৯ জন, ১০ সালে ৬৭, ১১ সালে ৪৬, ১২ সালে ৭২ জন। সাংবাদিক নির্যাতনের স্বীকার ২০০৯ সালে ২২১ জন, ১০ সালে ২৩১ জন, ১১ সালে ২৫৯ জন, ১২ সালে ২৮৯ জন।
    রাজনৈতিক হত্যার শিকার ২০০৯ সালে ২৫১ জন, ১০ সালে ২২০ জন, ১১ সালে ১৩৫ জন ও ১২ সালে ১৬৯ জন।
    সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি মারটিন বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতে আমরা অভিযোগটি দাখিল করেছি। আমরা আশা করছি, আইসিসি অভিযোগগুলো তদন্ত করে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে চূড়ান্তভাবে মামলাটি গ্রহণ করে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।
    সংবাদ সম্মেলনে অন্তত ত্রিশজন প্রবাসী উপস্থিত ছিলেন। ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের গুরুত্বপূর্ণ একজন কর্মকর্তা সেখানে ছিলেন গোটা পরিস্থিতি অবলোকনের জন্য।

    ভয়ঙ্কর ছাত্রলীগ


    বেপরোয়া ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরতে পারছে না সরকার। সরকারি দল সমর্থিত এ সংগঠনটির নামের সঙ্গে খুন, সন্ত্রাস, সহিংসতা, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, দখল, এসিড নিক্ষেপ, শিক্ষক-ছাত্রী লাঞ্ছিতের ঘটনা জড়িয়ে যাওয়ায় ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটির নাম শুনলে মানুষ আঁতকে উঠে। প্রায়ই খবরের শিরোনাম হচ্ছে সংগঠনটি। বর্তমান সরকারের ৫৪ মাসে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের সহিংসতায় নিহত হয়েছে অন্তত ২২ জন। অভ্যন্তরীণ কোন্দল, টেন্ডারবাজী, দখলদারিত্ব এবং প্রাধান্য বিস্তারে অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে অন্তত পাঁচ শতাধিক। আহত হয়েছেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মী, সাংবাদিক, পুলিশসহ প্রায় ৪ হাজার। লাঞ্ছিত করা হয়েছে শতাধিক শিক্ষক ও ছাত্রীকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের গায়ে এসিড নিক্ষেপের মতো ভয়ঙ্কর অপরাধের মতো ঘটনাও ঘটিয়েছে সংগঠটির নেতারা। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো এসব ঘটনার কোন বিচার হয় না। ছাত্রলীগের এক সময়ের নেতা ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না মনে করেন বর্তমান সরকারের যা কিছু অর্জন, তার সবই বিসর্জন দিয়েছে ছাত্রলীগ। তবে সহিংসতার ঘটনায় ছাত্রলীগের কেউ জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন ছাত্রলীগের সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ।

    মহাজোট সরকারের সাড়ে চার বছরের পুরো সময় জুড়েই বেসামাল ছাত্রলীগ। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সময় উদ্যোগ নিয়েও নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি তাদের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের। সংগঠনটির নেতাকর্মীদের ভয়ঙ্কর কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংগঠনটির ‘সাংগঠনিক নেত্রীর পদ’ থেকে পদত্যাগ করেন। তারপরও থামানো যায়নি দেশব্যাপী সংগঠনটির তা-ব। মানুষ খুন, চাঁদাবাজী-টেন্ডারবাজী, ক্যাম্পাস দখল, শিক্ষক-ছাত্রী লাঞ্ছিতসহ এমন কোন অপকর্ম নেই যেখানে জড়ায়নি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীরা বেপরোয়া রূপে আর্বিভূত হলেও রাশ টেনে ধরতে পারছে না সরকার। বরং প্রকাশ্যে দিনেদুপুরে বিশ্বজিৎ হত্যার নৃশংসতার সচিত্র খবর সারাবিশ্বের মিডিয়ায় আলোড়ন তুললেও সরকার ছাত্রলীগকে আড়াল করতে চেষ্টা করেছে। গত সাড়ে চার বছর ছাত্রলীগ যে সব অপকর্ম করেছে তারা কোনোটির বিচার হয়নি এখনো।
    সাধারণ মানুষের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য সাময়িকভাবে কখনও কখনও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করলেও ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসেন কিছু দিন পরই। আর ছাত্রলীগের লাগামহীন তা-বের কারণে ক্ষমতসীন দলের নেতাসহ অন্যরা বলে থাকেন ‘যা কিছু অর্জন, তার সবই বিসর্জন দিয়েছে ছাত্রলীগ’। দেশের প্রবীন আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক ছাত্রলীগ-যুবলীগের ভয়ঙ্কর তা-বলীলায় অতিষ্ঠ হয়ে সংগঠন দুটির নাম দিয়েছেন টেন্ডারলীগ। একই মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। বর্তমান সরকারের গত সাড়ে চার বছরে ছাত্রলীগের কর্মকা- বিশ্লেষণ করে ও বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত সহিংসতায় দেখা যায় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনের রাত থেকেই শুরু। ওই দিন নির্বাচনের ফল ঘোষণার সাথে সাথে চর দখলের মতো দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাস দখলে মেতে ওঠে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। যার ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ ঘটলো গত ২৫ জুন চট্টগ্রামে দুই খুনের ঘটনা।
    অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই সরকারের সাড়ে চার বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর, বুয়েট, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জগন্নাথ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালি, নোয়াখালী, হাজী দানেশ, যশোর বিজ্ঞান ও পযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শহরে অন্তত পাঁচ শতাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ২২ জন ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, শিবির নেতাকর্মী, সাধারণ শিক্ষার্থী ও মানুষ। প্রতিবারই এই সহিংসতার পেছনে কাজ করে কখনো চাঁদাবাজী-টেন্ডারবাজী, কখনও আধিপত্য বিস্তার- ভর্তি বাণিজ্য, কিংবা দলীয় কোন্দল, পদ না পাওয়া, খাবার টোকেন ও নারী। ছাত্রলীগ তা-বের সর্বশেষ বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে গত ২৫ জুন চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম রেলের দরপত্র নিয়ে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের গোলাগুলিতে শিশুসহ দুজন নিহত হয়। বর্তমান ছাত্রলীগের একাধিক নেতা মনে করেন নেতাকর্মীরা এখন নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ প্রায় শেষ এবং সরকারের মেয়াদও শেষের দিকে তাই সময় যতই যাবে ততই এখন ছাত্রলীগ আরও ভয়ংকর রূপ ধারণ করতে পারে। এজন্য তারা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের দুর্বলতাকে দায়ী করেছেন।
    নাগরিক ঐক্য’র আহ্বায়ক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, যা কিছু অর্জন, তার সবই বিসর্জন দিয়েছে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের অব্যাহত তা-বের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, জাতীয় রাজনীতির প্রভাবে এধরনের ঘটনা বাড়ছে। জাতীয় নেতারা তাদের নিজের কাজে ব্যবহার করছে। ছাত্র নেতারা দেখছে জাতীয় নেতারা অবৈধ পথে অর্থ কামাচ্ছে এজন্য তারাও অবৈধ পথ বেছে নেয়। এ থেকে উত্তরণের জন্য তিনি ছাত্র সংগঠনগুলোর লেজুড়বৃত্তি পরিহার করা এবং ডাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা করার কথা বলেন।
    আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক ছাত্রনেতা ডা. মোঃ মোখলেস-উজ-জামান হিরো বলেন, ছাত্রলীগের বর্তমান কর্মকা- দেখলে মনে হয় তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু যে আদর্শ নিয়ে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলো তা থেকে এখন তারা দুরে সরে গেছে। ছাত্রলীগের সহিংস কর্মকান্ডের কারণে বর্তমান সরকারের সাফল্য ও গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ব্যহত হচ্ছে। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এখন নিজেকে প্রতিষ্ঠার জন্য বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
    সহিংসতার ঘটনায় ছাত্রলীগের কেউ জড়িত নয় দাবি করে ছাত্রলীগ সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, ছাত্রলীগ নামধারী কতিপয় ব্যক্তি এধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। এর সাথে ছাত্রলীগের কোন সম্পর্ক নেই। ছাত্রলীগের কেউ সম্পৃক্ত না। কিন্তু ঘটনার পর ছাত্রলীগ নেতাদের বহিষ্কার করা হচ্ছে তাহলে তারা ছাত্রলীগের কেউ কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, সবাই যেহেতু মানুষ। তাই যে কেউ যে কোন সময় অপরাধ করতে পারে। নৈতিক স্থলন ঘটতে পারে। যদি কেউ অপরাধ করে আমরা তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে তার শাস্তির দাবি জানায়। যেনো আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী তা নির্বিঘে করতে পারে।
    সহিংসতায় নিহত ২২ 
    বর্তমান সরকারের সাড়ে চার বছরে বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত সহিংসতায় ২৩ জন নিহত হয়েছে। চট্টগ্রামে যুবলীগ-ছাত্রলীগের সহিংসতার শিকার হলেন একজন শিশুসহ এক সাধারণ মানুষ। এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি আধিপত্য বিস্তার, টেন্ডারবাজি ও নিয়োগ-বাণিজ্য নিয়ে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের গোলাগুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় পাশের গ্রামের ১০ বছরের শিশু রাব্বি। এ ঘটনায় তৎকালীন ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ২৫ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে মামলা করলেও এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় আলোচিত ঘটনা ঘটে গত বছরের ৯ ডিসেম্বর। বিরোধী দলের ডাকা অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে ওইদিন রাজধানীর পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে নির্মমভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেন বিশ্বজিৎ দাসকে। শিবির কর্মী বলে শকুনের মতো ঝাপিয়ে পড়ার পর বিশ্বজিৎ দাস নিজেকে হিন্দু দাবি করেও নিজেকে রক্ষা করতে পারেন নি। এমনকি নিজের গোপনাঙ্গ প্রকাশ করেও নিজে হিন্দু হিসেবে প্রমাণ করার শেষ চেষ্টাও সেদিন ব্যর্থ হয় ছাত্রলীগের রক্ত পিপাসুদের কাছে। ওই ঘটনা দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচিত ও সমালোচিত হয়। তবে ঘটনার অভিযুক্ত ২১ আসামির মধ্যে ১২ জনকে এখনো ধরতে পারেনি পুলিশ। গত বছরের ১৫ জুলাই পদ্মা সেতুর টাকা উত্তোলনের পর ভাগাভাগি নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন ছাত্রলীগ কর্মী আব্দুল্লাহ আল হাসান সোহেল। পরদিন ১৬ জুলাই মারা যায় ছাত্রলীগের এই কর্মী। গত বছরের ৯ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলায় নিহত হন ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ। অনার্স শেষ বর্ষের পরীক্ষা শেষ করে বের হয়ে আসার পথে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আক্রমণের শিকার হন জোবায়ের। গুরুতর আহতাবস্থায় ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তিনি মারা যান। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কারো কোন শাস্তি হয়নি। গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষে ২ শিবির নেতা মুজাহিদুল ইসলাম ও মাসুদ বিন হাবিব নিহত হয়। ২৯ নভেম্বর লক্ষ্মীপুরে মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে যুবলীগ কর্মী ওয়াজেদ চৌধুরীকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগ কর্মীরা। ২১ জানুয়ারি পাবনা টেক্সটাইল কলেজের ছাত্রলীগ কর্মী মোস্তফা কামাল শান্ত নিহত হয়। ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের একক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নিহত হয় ছাত্রদল-কর্মী আবিদুর রহমান ওরফে আবিদ। আবিদসহ কয়েকজন ছাত্রদলের কমিটি করতে চাওয়ায় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বেদম মারধরের শিকার হন। এর দুই দিন পর ২১ অক্টোবর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আবিদ। ১৪ সেপ্টেম্বর তেজগাঁওয়ের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে লতিফ ছাত্রবাসের ডাইনিং-এ বসাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুগ্রুপের সংঘর্ষ হয়। এতে রাইসুল ইসলাম রশিদ নামে এক ছাত্র নিহত হয়।
    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে নির্মমভাবে খুন হন ইসলামের ইতিহাস বিভাগের মেধাবী ছাত্র আবু বকর সিদ্দিক। মৃত্যুর পর তার রেজাল্ট প্রকাশ হলে তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন। এই ঘটনায় করা মামলার আসামীরা সকলেই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ৭ জানুয়ারি ছাত্রলীগের হামলায় রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রমৈত্রীর সহ-সভাপতি রেজওয়ানুল ইসলাম চৌধুরী মারা যান। ৯ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষে বলির শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ছাত্র ফারুক হোসেন। ফারুক নিহত হওয়ার দুদিন পরেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র মহিউদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ১৪ মার্চ ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে সংঘর্ষের ঘটনায় যশোর সদর উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রিপন হোসেন দাদা নিহত হন। ২৯ মার্চ চৌধুরী হাট রেল স্টেশনের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং স্টাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র হারুন-অর-রশিদ কায়সারের ক্ষত-বিক্ষত লাশ। ১৩ এপ্রিল রাজধানীর আদাবরে খুন হন স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা রুহিজ। ১৫ এপ্রিল রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেল ক্রসিং এলাকায় আহত হন হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী আসাদুজ্জামান গুরুতর আহত হন। পরদিন ১৬ এপ্রিল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। ১৫ আগস্ট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ঘৃণ্য ঘটনার জন্ম দিয়েছে ছাত্রলীগ। শোক দিবসের ইফতারির টোকেন সংগ্রহকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে সভাপতি আউয়াল কবির জয়ের কর্মীরা সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের কর্মী নাসরুল্লাহ নাসিমকে হাতুড়ি ও রড দিয়ে মারপিট করে দোতলা থেকে নিচে ফেলে দেয়। গুরুতর আহতাবস্থায় টানা ৯ দিন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের বিছানায় শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে শেষ পর্যন্তহার মানেন ইতিহাস বিভাগের মেধাবী ছাত্র ও ছাত্রলীগকর্মী নাসরুল্ল¬াহ নাসিম। ১২ জুলাই সিলেট এমসি কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গণিত বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র উদয়েন্দু সিংহ পলাশ নিহত হয়।
    ২০০৯ সালের মার্চে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত হন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ রাজীব। একই বছর ১৩ মার্চ ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষে নিহত হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান নোমানী। এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সঞ্জয় দেবনাথ অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিহত হন।
    শিক্ষক লাঞ্ছিত
    এই সরকারে মেয়াদে নজির বিহীন শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি বরিশালের সরকারি ব্রজমোহন কলেজের (বিএম) নবাগত অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. শংকর চন্দ্র দত্তকে রাস্তায় ফেলে মারধর করে ছাত্রলীগ। অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর যোগদান করতে গেলে তিনি এই হামলার শিকার হন। ২০ মে ভর্তি বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে কবি কাজী নজরুল ইসলাম কলেজে ছাত্রলীগের নেতারা শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে।১০ জানুয়ারি রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ওপর হালায় এক নতুন অস্ত্র হাতে তুলে নেয় ছাত্রলীগ। এদিন ভিসি’র অপসারণের দাবিতে অনশনরত শিক্ষকদের উপর এসিড নিক্ষেপ করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এতে আহত হন ১২ শিক্ষকসহ ২৫ জন। ঝলসে গেছে দুই শিক্ষকের মুখ। ২০১২ সালের ১৯ নভেম্বর কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের অনশন কর্মসূচিতে শিক্ষকদের উপর হামলা করে ইবি ছাত্রলীগ। এতে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. ইয়াকুব আলীসহ প্রায় ৩৫ শিক্ষক আহত হয়। একই বছরের ১ সেপ্টেম্বর বুয়েটের ভিসি প্রফেসর এস এম নজরুল ইসলামের দুর্নীতির কারণে তার অপসারণের দাবিতে আন্দোলনতর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ কর্মীরা ভাংচুর ও শিক্ষকদের ওপর হামলা চালিয়ে পরবর্তীতে আবার শিক্ষকদের নামে মামলা করে। ২৯ এপ্রিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তৎকালীন ভিসি প্রফেসর শরীফ এনামুল কবিরের অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে শিক্ষকদের উপর হামলা করে ছাত্রলীগ। গত বছর ১ মে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শাখা ছাত্রলীগের ক্যাডাররা ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক মিন্টু আলী বিশ্বাসসহ ৪ জন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে। ২ জানুয়ারি কুয়েটে শিক্ষার্থীরা বার্ষিক ভোজে নিম্নমানের খাবারের প্রতিবাদ করলে আয়োজক কমিটির সদস্য ছাত্রলীগ নেতারা ক্ষিপ্ত হয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর সশস্ত্র হামলা চালায়। একই সময় ভিসির বাসভবনে হামলা করে ছাত্রলীগ।১৫ ডিসেম্বর খুলনায় হাজী মুহাম্মদ মুহসীন কলেজে ছাত্রলীগের হামলায় অধ্যক্ষসহ ৫ শিক্ষক আহত হন। গত বছর ৮ আগস্ট ময়মনসিংহের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় ২০ জন শিক্ষক আহত হন। খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ২ জন শিক্ষককে মারধর করে ছাত্রলীগ। ঢাকা কলেজে ভর্তিবাণিজ্যকে কেন্দ্র করে কয়েকজন শিক্ষক লাঞ্ছিত হন। ১৩ নভেম্বর বরগুনার আমতলী উপজেলার একটি মাদরাসার একজন শিক্ষককে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।
    ২০১১ সালের ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বিশেষ খাবারের জন্য অতিরিক্ত টোকেন চেয়ে না পেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এফ রহমান হলে ছাত্রলীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি রেজা সেকেন্দার হল প্রভোস্ট প্রফেসর আজিজুর রহমানসহ আবাসিক শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করে। ২০ আগস্ট বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ শিক্ষককে পিটিয়ে আহত করে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। ২৩ নভেম্বর ইউনিফর্ম ছাড়া এক শিক্ষার্থীকে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে না দেয়ায় নোয়াখালী সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক জুলফিকার হায়দারকে ছাত্রলীগ নেতা সোহরাব ইকবাল লাঞ্ছিত করে। ২২ জানুয়ারি মধ্যরাতে স্যার এ এফ রহমান হলের ছাত্রলীগ নেতাদের আবাসিক মেয়াদ শেষ হওয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের হাতে তিন শিক্ষক লাঞ্ছিত হয়। ২২ মার্চ রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার মাছপাড়া ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষসহ তিনজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা।
    ২০১০ সালের ২৫ ডিসেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ ক্যাডাররা লাঞ্ছিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ শিক্ষককে। ১১ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের দুই শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে ছাত্রলীগ কর্মীরা।
    ছাত্রী লাঞ্ছিত 
    আওয়ামী সরকারের সাড়ে চার বছরে দেশের বিভিন্ন স্থানে শতাধিক নারী লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত ৯ জানুয়ারি রংপুর মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৫০-৬০ জন নেতা-কর্মী লাঠিসোঁটা নিয়ে মধ্যরাতে ছাত্রী হোস্টেলে প্রবেশ করে। এ ঘটনায় আহত হন ১০ ছাত্রী ও ইন্টার্নি চিকিৎসক। ১৬ এপ্রিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নববর্ষের অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগ কর্মীর যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন দুই ছাত্রী। ২৩ মে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজতত্ত্ব বিভাগের মাস্টার্সের ও প্রীতিলতা হলের এক ছাত্রী ছাত্রলীগ কর্মীর হাতে যৌন হয়রানির শিকার হন। গত বছরের ৩ জানুয়ারি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষের ৫ হাজার টাকা উন্নয়ন ফি নেয়ার প্রতিবাদে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতাকর্মীরা ব্যাংক অবরোধ করতে গেলে ছাত্রলীগ তাতে হামলা করে। এতে তাদের ৫ ছাত্রী লাঞ্ছিত হয়। ২০১২ সালের ১২ মে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্র ও এক ছাত্রীর মোবাইল ও স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নেয় ছাত্রলীগ। ৪ জুন কুষ্টিয়া ডিগ্রি কলেজের ৬ ছাত্রীর শ্লীলতাহানি ও শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটে। ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রফ্রন্টের অবরোধ কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের হামলায় এক ছাত্রীকে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করা হয়।
    ২০১১ সালের ৪ জানুয়ারি সাতক্ষীরায় ছাত্রলীগের ৬৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এসে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি জুয়েল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক নাজমূল হুদা পলাশের ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক নৃত্যশিল্পী। রাত ১২টার দিকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শেষে ওই নৃত্যশিল্পীকে স্বামীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় ছাত্রলীগ নেতা পলাশ ও জুয়েল হাসান।
    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১০ সালে বৈশাখী অনুষ্ঠান ও থার্টিফার্স্ট নাইটের অনুষ্ঠানে অন্তত ২০ জন নারী ও ছাত্রী লাঞ্ছিত হয়। বরিশাল বিএম কলেজের এক ছাত্রলীগ কর্মী একজন ছাত্রীর নগ্ন দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করায় ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন। ১০ মে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসে হামলা চালিয়ে এক শিক্ষিকাকে লাঞ্ছিত ও ১০ ছাত্রীকে আহত করে ছাত্রলীগ। ২৬ এপ্রিল দিনে-দুপুরে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে এক ছাত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে ছাত্রলীগ কর্মীরা। ২ অক্টোবর বরিশালের মুলাদীতে ছাত্রলীগ কর্মীরা ধর্ষণ করেছে দুই বোনকে।
    ভয়াবহ সংঘর্ষ 
    সরকারের বর্তমান মেয়াদে ছাত্রলীগের লাগামহীন তা-বের কারণে সারাদেশে অন্তত পাঁচ শতাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে বেশ কিছু ভয়াবহ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে নেতাকর্মীরা। গত বছরের ৯ জুলাই সিলেটের ১২০ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজ ছাত্রাবাস আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ-শিবিরের সংঘর্ষের একপর্যায়ে ছাত্রলীগ প্রকাশ্যে ছাত্রাবাসে আগুন দিয়ে উল্লাস করে। ৬ মে পুলিশ ঢাকা কলেজের আবাসিক হলে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কক্ষ থেকে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে। ১৩ মার্চ রাজধানীর নীলক্ষেতে হোটেলে ফাও খাওয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় নীলক্ষেত-নিউমার্কেট এলাকা। সংঘর্ষের সময় ৮-১০ রাউন্ড গুলি ও ১০-১৫টি হাত বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ। ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়কের পিস্তল থেকে ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র। গত ৩ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে গ্রন্থমেলায় দোকান দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আল বেরুনী হলের ৪ তলা থেকে ৭-৮জন ছাত্রকে ফেলে দেয়া হয়। একই বছর ১৪ আগস্ট কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ৩৫ জন আহত হন। একই বছর ২৬ এপ্রিল আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১শ’ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী আহত হয়। অভ্যন্তরিন সংঘাতের পাশাপাশি সারাদেশের সরকারি দফতরের টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ে ওই সংঘর্ষের সূত্রপাত। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ছাত্রীদের অবৈধ কাজে বাধ্য করা এবং ভর্তি বাণিজ্য নিয়ে ইডেন কলেজে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই বছরের ১৮ জানুয়ারি ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠন করার পর কমিটির নেতৃবৃন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সাথে সাক্ষাত করতে গেলে তাদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। ওই হামলায় তৎকালীন ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু গুরুতর আহত হন। ছাত্রলীগ ও অন্যান্য সংগঠনের মধ্যে সংঘর্ষে বন্ধ হয়েছে একের পর এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বুয়েট, জাহাঙ্গীর নগর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জগন্নাথ, কুমিল্লা, বেগম রোকেয়া, নোয়াখালি, হাজী দানেশ, শাহজালাল, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, সলিমুল্লাহ, বগুড়া, চট্টগ্রাম, সোহরাওয়ার্দী, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, রুয়েট, ঢাকা কলেজ, তিতুমীর কলেজ, বগুড়া আজিজুল হক কলেজসহ দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে ছাত্রলীগ। আর তাদের অভ্যন্তরীন সংঘর্ষে এবং প্রতিপক্ষের ওপর হামলায় একাধিকারবার বন্ধ হয়েছে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।



    কেমন আছেন আল্লামা সাঈদী-১


    মতিউর রহমান আকন্দ
    বিশ্ববরেণ্য মুফাস্সিরে কুরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী জীবনযাপন করছেন। ২৮ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত-১ তাকে মিথ্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে। তার রায় ঘোষণার পর বাংলাদেশসহ বিশ্ববাসী প্রতিবাদ ও বিক্ষোভে ফেঁটে পড়ে। মাত্র ৪ ঘণ্টার ব্যবধানে পুলিশের গুলিতে ৭০ জন কুরআন প্রেমিক নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করে। আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে আদালতের প্রদত্ত রায় নিয়ে দেশে-বিদেশে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। যে দুটো অভিযোগে তাকে দণ্ডিত করা হয়েছে তা কতবড় মিথ্যাচার ঐ অভিযোগগুলো আলোচনা করলে তা দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এই মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে দেশের প্রতিটি জনপদে প্রতিবাদের ভাষা উচ্চারিত হয়েছে। নারী, পুরুষ, শিশু, কিশোর, বৃদ্ধ সকলেই এ প্রতিবাদে শামিল হয়েছে। যার কর্ণকুহরে আল্লামা সাঈদীর তাফসিরের বাণী পৌছেছে, মিথ্যা মামলার ষড়যন্ত্রমূলক রায় ঘোষণার পর তিনিই রাস্তায় নেমে এসেছেন।
    মানুষের মনের মণিকোঠায় তার স্থান। দেশের ইসলাম প্রিয় জনতা তাকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে। তাদের এই ভালোবাসা কুরআনের জন্য। কুরআনের একজন মুফাস্সিরের জন্য। এই ভালোবাসা কোন ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত, জুলুম, নিপীড়ন বা হত্যা করে স্তব্ধ করা যাবে না। যার প্রমাণ এদেশের জনগণ দিয়েছে। কাফনের কাপড় পরে, ছোট্ট ছোট্ট শিশু, তরুণ ও যুবকেরা যখন, ‘আমাকে ফাঁসি দাও, সাঈদীকে মুক্তি দাও’ স্লোগান তুলে রাজপথে নামে তখন বুঝতে হবে জনতার এ আন্দোলন ব্যর্থ হতে পারে না।
    আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় প্রদত্ত রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার প্রস্তুতি চলছে। আইন অনুযায়ী ৩০ দিনের মধ্যে অ্যাপিলেট ডিভিশনে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে হবে। মামলার আপিল প্রস্তুতির জন্য আইনি বিষয়ে আল্লামা সাঈদীর নির্দেশনা নেয়ার উদ্দেশ্যে ২৩ মার্চ উনার সাথে সাক্ষাতের সুযোগ হয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষের নিকট আগেই লিখিতভাবে ৩ জন আইনজীবীর সাক্ষাতের জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। তারা হলেন ব্যারিষ্টার আব্দুর রাজ্জাক, তাজুল ইসলাম ও মতিউর রহমান আকন্দ। তখন সকাল ১০.৫০মি.। আমরা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটক দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে কারাগারের এই স্থানটি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে বহু রাজনৈতিক নেতা এ কারাগারে মাসের পর মাস বন্দী জীবন কাটিয়েছেন। ৬৯ এর গণআন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭২-৭৫ এর দুঃশাসনামলে রাজনৈতিক নিপীড়নের এক নির্মম স্বাক্ষী এই কারাগার। ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে বহু রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীকে এখানে বন্দী জীবন কাটাতে হয়েছে। আজও হাজার হাজার বন্দীর আর্তনাদে মুখরিত এই কারাগার।
    এই কারাগারেরই এক নিভৃত কক্ষে বন্দী জীবন যাপন করছেন বিশ্ব বরেণ্য মুফাস্সিরে কুরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। প্রায় ৩ বছর যাবৎ কুরআনের ময়দান থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করে কারাগারে আটকে রেখেছে এ জালেম সরকার। তার বিরুদ্ধে হাজার বছরের নিকৃষ্ট মিথ্যা কল্পকাহিনী রচনা করে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। তথাকথিত মানবতার বিরুদ্ধে অভিযোগের এ মিথ্যা মামলার বিষয়বস্তুকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি বজ্রকঠোর কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা, মিথ্যা এবং মিথ্যা। তিনি আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে যে ভাষণ দিয়েছেন তা যেকোনো বিবেকবান মানুষকেই উদ্বেলিত করে। কিন্তু  সত্য-মিথ্যার পার্থক্য করার ক্ষমতা যাদের লোপ পায়, বিবেক যাদের স্তব্ধ হয়ে যায়, সত্যের চেতনা যাদের অন্তর থেকে মুছে যায় তারা কখনো সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না। মহাগ্রন্থ আল কুরআন স্পষ্ট ভাষায় এ ঘোষণা দিয়েছে।
    তার সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে কারাভ্যন্তরে প্রবেশ করা মাত্রই চোখের পর্দায় অতীতের কয়েকটি স্মৃতি বিজড়িত ঘটনা একের পর এক ভেসে উঠছিল। বিশেষ করে ট্রাইব্যুনালে মামলা চলাকালে তিনি প্রায়ই দেশ, ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠনের অগণিত কর্মীর উপর সরকারের জুলুম নির্যাতনের প্রেক্ষিতে তার অস্থির অন্তরের কথা যে আবেদনময়ী ভাষায় ব্যক্ত করতেন তা বারবার মনে উদয় হতে লাগল। তিনি কারাগারে বন্দী থাকাবস্থায় হারিয়েছেন তার মমতাময়ী মাকে। প্যারোলে মুক্তি পেয়ে মায়ের জানাজায় অংশগ্রহণ করেছেন ঠিকই কিন্তু মা হারানোর বেদনা প্রকাশের জন্য পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সাথে তাকে এতটুকু সময় ব্যয় করার সুযোগ দেয়া হয়নি। বন্দী অবস্থায় তিনি হারিয়েছেন তার জ্যেষ্ঠ পুত্র কুরআনের সৈনিক রাফিক বিন সাঈদীকে। যাকে নিজের উত্তরাধিকারী হিসেবে কুরআনের মুফাস্সির হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। আদালতে আল্লামা সাঈদীর উপর মিথ্যাচারের অপবাদ সহ্য করতে না পেরে প্রিয়তম পুত্র রাফিক বিন সাঈদী হার্ট এর্টাক করে ইন্তিকাল করেন। আল্লামা সাঈদীকে প্যারোলে মুক্তি দেয়া হয়। তিনি জানাজায় শরিক হন। এবারও তাকে পরিবারের সান্নিধ্যে সামান্য সময় কাটানোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়। গর্ভধারিনী মা ও প্রিয়তম পুত্র হারানোর ব্যথা বুকে ধারণ করে কারাগারের নির্জন কুঠরিতে যিনি বন্দী জীবন যাপন করছেন, তিনি কত বড় মজলুম তা সহজেই উপলদ্ধি করা যায়।
    তিনি সর্বদা আদালতের কাঠগড়ায় কুরআন তেলাওয়াতে মত্ত থাকতেন। তার ব্যক্তিগত অবস্থা, পরিবার কিংবা আত্মীয় নিয়ে কখনো উদ্বিগ্ন হননি। তিনি সর্বদা উদ্বিগ্ন ছিলেন ইসলামী আন্দোলন নিয়ে। যেদিন তার মামলার প্রথম পর্যায়ে আরগুমেন্ট শেষ হয় সেদিন তিনি যে আবেগময় ভাষণ আদালতের উদ্দেশ্যে দিয়েছিলেন তা উপস্থিত সাংবাদিক, আইনজীবী ও পর্যবেক্ষকদের মধ্যে এক গভীর চেতনার সৃষ্টি করেছিল। আদালত থেকে বের হওয়ার সময় তিনি বারবার বলছিলেন, ‘আর কোনো দিন দুনিয়ায় আপনাদের সাথে সাক্ষাৎ না হলেও কিয়ামতের ময়দানে আল্লাহর আরশের নিচে আপনাদের সাথে আমার সাক্ষাৎ হবে। আমরা জান্নাতে সবাই একত্রে অবস্থান করব।’
    আদালতের কাঠগড়ায় উনার সাথে সাক্ষাতের সময় প্রসঙ্গত আমার ১৩ বছর পূর্বে ছাত্র জীবনের একটি ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললেন, ‘তোমার কি মনে আছে? ১৯৯৮ সালে পবিত্র মদিনাতুল মুনাওয়ারায় আমার সাথে তোমার সাক্ষাৎ হয়েছিল। আর হয়তো কোনোদিন মদিনায় সাক্ষাৎ হবে না। সাক্ষাৎ হবে জান্নাতুল ফেরদাউসে।’  যিনি জান্নাতের মেহমান হওয়ার অদম্য স্পৃহায় শহীদি চেতনা বুকে ধারণ করে আদালত থেকে কারাগারে ফেরত গেলেন, তাকে কারাগার থেকে আবার আনা হলো আদালতে। তার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ শুনানোর জন্য। তিনি নির্ভীক ও বলিষ্ঠ কণ্ঠে এ মিথ্যাচারের এবং প্রতিহিংসার বিচারের প্রতিবাদ করেছেন। এসব ভাবনার মধ্য দিয়েই আমরা ডেপুটি জেলারের টেবিলের সামনে এসে বসলাম।
    আগেই শুনেছি আল্লামা সাঈদীকে কয়েদির পোশাক পরিয়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদিদের নির্দিষ্ট সেলে রাখা হয়েছে। যিনি সারা জীবন লম্বা পাঞ্জাবী, কোর্তা ও মাথায় টুপি পরে অভ্যস্ত। তাকে কয়েদির পোশাক পরিহিত অবস্থায় কেমন দেখাচ্ছে। কি তার মানসিক প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি ভাবনার মধ্যেই আল্লামা সাঈদী আমাদের সামনে এসে হাজির হলেন। কক্ষে ঢুকেই স্বভাবসুলভ কণ্ঠে আস্সালামু আলাইকুম বলে আমাদের সাথে কোলাকুলি করলেন। জেল খানার পোশাক পরিধানরত অবস্থায় তাকে দেখে অবাক হয়েছি কিন্তু হতবাক হইনি। কারণ বহু আল্লাহ প্রেমিক লোককে এমনিভাবে কারাভ্যন্তরে আটক রেখে কষ্ট দেয়া হয়েছিল। আল্লামা সাঈদী সেই কাতারেরই একজন। তার চেহারার উজ্জলতা তার দৃঢ় ঈমানী বলিষ্ঠতার কথা ব্যক্ত করছিল। আমরা ভেবেছিলাম তিনি হয়ত: দুর্বল হয়ে পড়েছেন! কিন্তু না, তিনি দুর্বল হননি। তার মাঝে কোনো অস্থিরতা নেই। দুশ্চিন্তা, দুর্ভাবনা নেই। আছে প্রত্যয়, আছে শহীদ হবার অদম্য স্পৃহা। কারাগারের পোশাকে আল্লামা সাঈদীকে দেখাচ্ছিল আল্লাহর পথের এক আপোষহীন সৈনিককে, যিনি জীবন দিতে পারেন, রক্ত দিতে পারেন, শহীদ হতে পারেন কিন্তু বাতিলের কাছে যিনি মাথানত করতে পারেন না। তাকে এই পোশাকে দেখে ডিফেন্স টিমের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বললেন, ‘মাওলানা মওদূদিকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসির আদেশ দেয়ার পর এই পোশাক পরানো হয়েছিল।’ আল্লামা সাঈদী বললেন, ‘আমি তো তার তুলনায় কিছুই নই। এক নগন্য গোনাহগার বান্দা মাত্র।’
    আমাদের সাথে কুশল বিনিময় করেই তিনি মামলার আপিল সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলেন। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পর্কে তিনি দিক নির্দেশনা দিলেন এবং আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে বললেন। মামলা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার পর তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বললেন, ‘আমি আল্লাহর মেহেরবানীতে খুব ভালো আছি। আমার শারীরিক অবস্থা যাই হোক আমার মানসিক অবস্থা অনেক ভালো। মৃত্যু প্রতিটি প্রাণীর জন্য অবধারিত। আমি মৃত্যুর পরওয়া করি না। সারা জীবন আমি কুরআনের খেদমত করেছি। দেশ থেকে দেশান্তরে কুরআনের তাফসির করেছি। সেই কুরআন, ইসলাম এবং আমার প্রিয় মাতৃভূমির জন্য আমি হাসিমুখে জীবন দিতে প্রস্তুত আছি। আমি লাখো মানুষের সামনে তাফসির পেশ করাকালে শাহাদাত লাভের জন্য মহান রবের কাছে দোয়া করেছি। আমি চেয়েছিলাম- কুরআনের ভাষা উচ্চারণকালে আমাকে ইসলামের দুশমনরা ব্রাশফায়ার করে আমার মস্তক উড়িয়ে দেবে। আমার শরীর থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হবে। আমি প্রভুর দরবারে গিয়ে উপস্থিত হবো।’
    তিনি আরো বলেন, ‘কুরআনের জন্য, ইসলামের পথে জীবন দিতে পারা এক মহা সৌভাগ্যের ব্যাপার। স্বাভাবিক মৃত্যুর মাঝে কোনো গৌরব নেই। আল্লাহর পথে শাহাদাত মানুষের জীবনকে মহিমান্বিত ও গৌরাবান্বিত করে। আমি শাহাদাতের গৌরবান্বিত মৃত্যু চাই। আল্লাহর কাছে আমার একটিই মিনতি খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের জঘন্যতম মিথ্যা অপবাদ নিয়ে আমার যেন মরতে না হয়।’
    দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বিশেষ করে তার রায় ঘোষণার পর সরকারের পুলিশ বাহিনীর গুলিতে ১ সপ্তাহে ১৫০ জন নিরীহ, নিরপরাধ কুরআন প্রেমিকের মৃত্যুতে তিনি বিচলিত। তিনি বলেন, ‘কুরআন প্রেমিক সাধারণ মানুষ যেভাবে আমার জন্য জীবন দিয়েছে তাদের জন্য আমার হৃদয় খুবই ভারাক্রান্ত। আমি আল্লাহর কাছে দু’হাত তুলে দোয়া করি, আল্লাহ যেন তাদেরকে শহীদ হিসেবে কবুল করেন।
    যে বাবা তার সন্তানকে হারিয়েছে, যে সন্তান তার বাবাকে হারিয়েছে, যে স্ত্রী তার স্বামীকে হারিয়েছে তাদের পরিবারের করুন অবস্থা, এই কারাভ্যন্তরের বন্দী জীবনে বারবার আমার অন্তরকে আহত করছে। এসব পরিবারের জন্য আমি উদ্বিগ্ন, উৎকণ্ঠিত। ঐসব অসহায় পরিবারের আর্তনাদ ও কান্নার আওয়াজ আল্লাহর আরশকে কাঁপিয়ে তুলছে। তাদের পরিবারের ক্ষতি কোনোদিনও পুরণ হবে না। আমি বিশ্বাস করি তাদের প্রতি ফোঁটা রক্ত আল্লাহর দ্বীনকে মজবুত করবে। জান্নাতুল ফেরদাউস হবে তাদের আসল ঠিকানা। সেখানেই তাদের সাথে আমার সাক্ষাৎ হবে।’
    তিনি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘নারী, শিশু, পুরুষ ও নিরীহ মানুষগুলো আজ মোটেই নিরাপদ নয়। দেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামো আজ যে পর্যায়ে পৌছেছে আমি সেটা ভেবেই চিন্তিত। ভবিষ্যত প্রজন্ম কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে!’ তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, ‘সত্যকে কোনোদিন মিথ্যা দিয়ে ঢেকে রাখা যায় না। সত্যের বিজয় অবশ্যম্ভাবী। আল্লাহ যদি সত্যকে বিজয় না করেন তাহলে সত্যের পথে লড়াই করার কোনো লোক পাওয়া যাবে না। আমি বিশ্বাস করি সত্যের বিজয় হবে এবং আল্লাহ আমাকে আবার কুরআনের ময়দানে ফিরে আসার তাওফিক দিবেন ইনশাআল্লাহ।’ তিনি দেশবাসীর কাছে তার সালাম জানান ও দোয়া চান।
    - See more at: http://www.weeklysonarbangla.net/news_details.php?newsid=8928#sthash.vCItjzLD.VwkbUVLQ.dpuf