পিলখানা ট্রাজেডি - বিদ্রোহ না গণহত্যা
অনিকেত শামীম
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর একসঙ্গে এতো সেনা কর্মকর্তা নিহত হওয়ার নজির বিশ্ব ইতিহাসে নেই। আর সেই নজির স্থাপিত হলো ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯। ঘটনার দিন কেউ বুঝতে পারেনি বিডিআর সদর দফতরে এতোবড় ম্যাসাকার হয়ে গেছে। ২৫ ফেব্রুয়ারির পর যতই দিন যাচ্ছে ততই লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘটনার অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ চলছে। বিশ্লেষকরা নানাভাবে বিশ্লেষণের চেষ্টা করছেন, টেলিভিশনের টক শো-তে, বিভিন্ন মিডিয়াতে এ পর্যন্ত প্রায় দু’শজন তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এ সমস্ত আলাপ-আলোচনা, বিশ্লেষণ, তর্ক-বিতর্ক,বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়ার কলামগুলো পর্যালোচনা করলে মাত্র কয়েকটি কমন বক্তব্য পাওয়া যায়। তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে- এটি শুধু বিডিয়ার জওয়ানদের বিদ্রোহ নয়, এটি একটি পরিকল্পিত গণহত্যা এবং এ গণহত্যার পিছনে বাইরের ইন্ধন আছে।
কিন্তু কোনো পক্ষই নির্দিষ্টভাবে এ গণহত্যার পিছনের ইন্ধনদাতাদের সনাক্ত করতে পারছে না। এ পর্যন্ত দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটি সরকারের পক্ষ থেকে অন্যটি সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে। তদন্ত কমিটি সুনির্দিষ্টভাবে ইন্ধনদাতাদের সনাক্ত করতে পারবে কিনা তা অবশ্যই প্রশ্ন সাপেক্ষ। কারণ ইতোঃপূর্বে ঘটে যাওয়া বড় ধরনের নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের কোনো তদন্ত কমিটি শনাক্ত করতে পারেনি। একুশে আগস্টের আওয়ামী লীগ জনসভায় গ্রেনেড হামলা, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান, যশোর উদীচীর জাতীয় সম্মেলনে বোমা হামলা, পহেলা বৈশাখের রমনা বটমূলে বোমা হামলা- এ ধরনের বড় বড় ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসল ও নেপথ্য শক্তিকে আজও পর্যন্ত কোনো তদন্ত কমিটি চিহ্নিত করতে পারেনি কিংবা আদালতের কাঠগড়ায় চিহ্নিত ব্যক্তিদের দাঁড় করানো যায়নি। জনগণ আজও পর্যন্ত জানতে পারে নি সেই সমস্ত ঘটনার আসল দুষ্কৃতকারী কারা। সুতরায়, স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে পিলখানা ট্র্যাজেডির নেপথ্য কারিগর কারা, তাদের পরিচয় কী আমরা জানতে পারবো। পনের হাজার বিডিয়ার জওয়ানের মধ্যে কয়েকশ’ জওয়ান হত্যাকান্ডে অংশগ্রহণ করেছে এটা তো দশ বছরের একজন শিশুও বলে দিতে পারবে। কিন্তু কাদের প্ররোচনায় এ নৃশংস হত্যাকান্ড সংঘটিত হলো তার সদুত্তর এখন পর্যন্ত কেউ দিতে পারেনি- না সরকার, না বিরোধীদল, না গোয়েন্দা বিভাগ, না কোনো বিশ্লেষক।
কিন্তু কোনো পক্ষই নির্দিষ্টভাবে এ গণহত্যার পিছনের ইন্ধনদাতাদের সনাক্ত করতে পারছে না। এ পর্যন্ত দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটি সরকারের পক্ষ থেকে অন্যটি সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে। তদন্ত কমিটি সুনির্দিষ্টভাবে ইন্ধনদাতাদের সনাক্ত করতে পারবে কিনা তা অবশ্যই প্রশ্ন সাপেক্ষ। কারণ ইতোঃপূর্বে ঘটে যাওয়া বড় ধরনের নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের কোনো তদন্ত কমিটি শনাক্ত করতে পারেনি। একুশে আগস্টের আওয়ামী লীগ জনসভায় গ্রেনেড হামলা, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান, যশোর উদীচীর জাতীয় সম্মেলনে বোমা হামলা, পহেলা বৈশাখের রমনা বটমূলে বোমা হামলা- এ ধরনের বড় বড় ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসল ও নেপথ্য শক্তিকে আজও পর্যন্ত কোনো তদন্ত কমিটি চিহ্নিত করতে পারেনি কিংবা আদালতের কাঠগড়ায় চিহ্নিত ব্যক্তিদের দাঁড় করানো যায়নি। জনগণ আজও পর্যন্ত জানতে পারে নি সেই সমস্ত ঘটনার আসল দুষ্কৃতকারী কারা। সুতরায়, স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে পিলখানা ট্র্যাজেডির নেপথ্য কারিগর কারা, তাদের পরিচয় কী আমরা জানতে পারবো। পনের হাজার বিডিয়ার জওয়ানের মধ্যে কয়েকশ’ জওয়ান হত্যাকান্ডে অংশগ্রহণ করেছে এটা তো দশ বছরের একজন শিশুও বলে দিতে পারবে। কিন্তু কাদের প্ররোচনায় এ নৃশংস হত্যাকান্ড সংঘটিত হলো তার সদুত্তর এখন পর্যন্ত কেউ দিতে পারেনি- না সরকার, না বিরোধীদল, না গোয়েন্দা বিভাগ, না কোনো বিশ্লেষক।
ঘটনার প্রাথমিক ধারণা: এটা বিডিআর বিদ্রোহ-
২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে নয়টা/দশটার মধ্যে জানাজানি হয়ে যায় যে, বিডিআর সদর দফতরে গোলাগুলি চলছে। এ গোলাগুলির কারণ সম্পর্কে বাইরে থেকে যেটুকু জানা যায় তা হচ্ছে দীর্ঘদিন থেকে বিডিয়ার জওয়ানরা তাদের নিয়ন্ত্রণকারী অফিসার (সেনা কর্মকর্তা) কর্তৃক বঞ্চনা-লাঞ্চনার শিকার হচ্ছে, তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তত্তাবধায়ক সরকারের সময় পরিচালিত ডাল-ভাত কর্মসূচি ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক অবদান রাখার পরও তারা তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে- এ সকল কারণে তারা বিদ্রোহ করেছে এবং কয়েকজন সেনা অফিসারকে হত্যা করেছে। সারাদিন এমন কথাবার্তাই ঘুরেফিরে আলোচিত হয়েছে। ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর সদর দফতরের বিভিন্ন গেটে ডাল-ভাত কর্মসূচির দুর্নীতি নিয়ে সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ফুঁসে উঠেছে সংবাদ মাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিনিধির কাছে। তাদের এই ক্ষোভকে সাধারণ মানুষ সহানুভূতির চোখে দেখতে শুরু করে এবং অনেকেই এই ক্ষোভের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করে ফেলেন। তখনও ভেতরের বীভৎস হত্যাযজ্ঞের খবর সাধারণের কাছে পৌঁছেনি। বিডিআর সদস্যদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনা, সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগকে উড়িয়ে না দিয়েও একটি বিষয় নিশ্চিত করে বলা যায়- বিশৃঙ্খলা যারা ঘটিয়েছে তারা সাধারণ মানুষের সহানুভূতি আদায় এবং মূল পরিকল্পনাকে আড়াল করার কৌশল হিসেবেই ডাল-ভাত কর্মসূচির দুর্নীতিকে সামনে নিয়ে এসেছে। আর সেই কৌশলের ফাঁদে সংবাদ মাধ্যমসহ অনেক পক্ষই আটকে গিয়েছিল। কারণ, এটা তো অনস্বীকার্য যে, মিডিয়া যেভাবে জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইবে জনগণ যেভাবেই নিয়ন্ত্রণ হবে। মিডিয়া যদি জনগণকে হাসাতে চায়, জনগণ হাসবে; যদি কাঁদাতে চায়, কাঁদবে;যদির স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে রাখতে চায়, জনগণ ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবে- বর্তমান যুগে মিডিয়ার দৌরাত্ব ও দাপট এতটাই ব্যাপক। সুতরাং,মিডিয়ার বদৌলতে এবং পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় সদর দফতরের ভিতরে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বীভৎসতা সাধারণ জনগণ তো দূরের কথা যারা টক শো-তে অংশগ্রহণ করছে সেই অগ্রসর শ্রেণীও আঁচ করতে পারেনি ২৫ তারিখ পর্যন্ত। মনে করেছে সেনা কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে এটা বিডিআর সদস্যদের বিদ্রোহ।
রাজনৈতিকভাবে সমাধান বনাম সামরিক হস্তক্ষেপ
এতবড় ভয়াবহ একটি ঘটনার যেভাবে রাজনৈতিকভাবে সমাধান হয়েছে, স্পর্শকাতর এই ঘটনায় সরকার যে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক থাকলেও বেশিরভাগ মানুষের কাছে এটাই প্রতীয়মান হয়েছে যে এর চেয়ে সফল সমাধান সম্ভব ছিল না। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সেনা অভিযান পরিচালনার মুহূর্মূহু চাপকে নিয়ন্ত্রণ করার সরকারের পদক্ষেপ প্রশংসাযোগ্যই বলতে হবে। যদিও সেনা অভিযান পরিচালনা করতে না দেওয়ায় সরকারের ওপর সেনাবাহিনীর একটি অংশের ক্ষোভ জাগ্রত ছিল এবং লাশের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে এই ক্ষোভ বৃদ্ধি পাওয়াটা স্বাভাবিক এবং ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ যে সেনাবাহিনী প্রশমিত করতে পেরেছে সেজন্য অবশ্যই দেশবাসীর কাছে আমাদের সেনাবাহিনীর মর্যাদা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
____________________________________________________________
No comments:
Post a Comment