খেমেনী এহসান এর ফেসবুক থেকে : আমি জানিনা বিচারের নামে প্রতিশোধপরায়ণতা চর্চার বিষয়টি কিভাবে শুধু একটি দলের প্রতিবাদের বিষয় হতে পারে। এটা যে কোন বেকুবও বুঝতে পারছে যে আবদুল কাদের মোল্লাকে হত্যা করা হবে। কারণ-
১. আপিল বিভাগ সম্পূর্ণ এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে মোল্লাকে মৃত্যুদ- দিয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে কাউকে মৃত্যুদ- দেয়ার সুযোগ নাই।
২. মৃত্যুদ-ের বিরুদ্ধে আপিল করা অলংঘনীয় মানবাধিকার।
৩. যেসব বিচারকরা মোল্লাকে মৃত্যদ- দিয়েছেন তাদের মধ্যে বিচারপতি এসকে সিনহা ও বিচারপতি মানিক বৈরি বিচারক। স্কাইপ কেলেঙ্কারি মোতাবেক সিনহা জামায়াত নেতাদের হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন। এই ষড়যন্ত্রকে হেফাজত করতে মানিক স্কাইপ ইস্যু সংক্রাšত্ম সুয়োমটো জারি করেছিলেন। তার কারণেই মাহমদুর রহমান জেলে ও আমার দেশ বন্ধ হয়েছে। কাজেই এই দুই বিচারপতির রায় স্পষ্টতই হত্যার ষড়যন্ত্র প্রমাণ করে।
৪. মোল্লাকে হত্যার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে রিভিউর ব্যাপারে আইনমন্ত্রী, অ্যাটর্নি জেনারেল ও প্রসিকিউশনের সমন্বয়কের বক্তব্যে। মোল্লা রিভিউ করতে পারবেন না বলে তারা আসলে ষড়যন্ত্রকে উন্মোচন করেছেন। কারণ রিভিউ না করা গেলে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা থাকে শেষ অপশন। কিন্তু মোল্লার পক্ষে কোনোভাবেই ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ নাই। যদি চানও তাহলে আবদুল হামিদ সাথে সাথেই নাকচ করবেন। যার ফলাফল হলো ওই দিনই মোল্লাকে ফাঁসিতে ঝুলানো।
৫. দেখা যাচ্ছে রিভিউ করতে না দিয়ে মোল্লাকে ঈদুল আযহার আগে হত্যার ষড়যন্ত্র বা¯ত্মবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই তড়িঘড়ি ব্যাপারটাই পরিকল্পিত হত্যাকা-কে পষ্ট করে দিয়েছে।
৬. মোল্লার রায়ের পর ভারতের পক্ষ থেকে দেয়া বক্তব্য প্রমাণ করে এই হত্যার ষড়যন্ত্র একটি বহুজাতিক ষড়যন্ত্র। তারা যুদ্ধাপরাধের বিচার সমর্থন করার কথা বলে আসলে মোল্লাকে হত্যার ষড়যন্ত্র সমর্থন করার কথা বলছে। তবে মনে রাখা দরকার, ভারতের জনগণ এই ষড়যন্ত্র সমর্থন করেনি। তারা গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চে রা¯ত্মায় নেমে প্রতিবাদ করেছে।
৭. মোল্লাকে হত্যার ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইইউসহ পশ্চিমা কোনো শক্তিই বিশ্বাসযোগ্য কোনো প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। মুসলিম দেশগুলোও কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। এতে প্রমাণিত হয়, মোল্লার মানবাধিকার লংঘনকে সবাই অনুমোদন করেছে। যা ইসলামী রাজনীতি বিরোধী ওয়ার অন টেররেরই অংশ।
৮. ষড়যন্ত্র বুঝা গেছে, মোল্লাকে হত্যা করার দাবিতে শাহবাগে কভার্ট অ্যাকশন দৃশ্যমান করার মাধ্যমে। যাকে দেশি-বিদেশি শক্তি সমর্থন করেছে।
এখন গুরুত্বপূর্ন কথা বলতে চাই। আবদুল কাদের মোল্লার বিষয়টি এখন সময়ের ব্যাপার। যা প্রতিহত করার বা¯ত্মবিক কোনো সুযোগই থাকছে না। আল্লাহর খাস কুদরতের ব্যাপারটি যদিও আলাদা। আমি বলবো, মোল্লাকে হত্যার পর আসলে কী ঘটবে। এটা আমি বলতে পারছি এ কারণে যে দুনিয়ার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার ইতিহাস থেকে এই ইংগিতই পাচ্ছি।
১. মোল্লাকে হত্যার পরে সরকার ক্যাম্পেইন করবে, যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যকর করেছে। এটা কেউ বিশ্বাস করবে না। কারণ মানুষ জানে কিভাবে বিচারের নামে মোল্লাকে হত্যা করা হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো গত কয়েক শ’ বছর ধরে কিভাকে ইসলামী আন্দোলনের নেতাদের হত্যা করা হয়েছে তা মানুষ জানে। তাদের হত্যার সময় অনেক মিথ্যা কথা বলা হলেও মানুষ জানে কেন হত্যা করা হয়েছে। যেমন মানুষ জেনেছিল মক্কার মোশরেকরা কিভাবে সাহাবীদের হত্যা করেছিল। সিপাহী বিদ্রোহের সময় বিচার করেই ৫৪ হাজার মুজাহিদকে হত্যা করে রা¯ত্মায় ঝুলিয়ে রেখেছিল ইংরেজরা। মানুষ বিচার মানেনি, হত্যাকে হত্যা জেনেছে। নবাব সিরাজ উদ্দৌলাকে হত্যা করেও তার চরিত্র হনন করা হয়েছ, মানুষ বিশ্বাস করেনি কিছুই।
২. মোল্লাকে হত্যার পর এবং আরো কয়েকজনকে হত্যার পর খুনীরা ৩ বছরের জন্য উল্লাস করতে পারবে। কারণ তাদের হত্যার পর দেশে জরুরি অবস্থা জারি হবে। বর্তমান সংসদ বহাল থাকবে। বিএনপিতে ভাঙন ধরবে। খালেদা জিয়াকে জনগণকে ছেড়ে যাবে। জামায়াতকে মুছে ফেলা হবে। হুজুরদের দমন করা হবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী পেশাজীবীরা এই সময়টাতে পক্ষ ত্যাগ করবে। সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ ও আইনশৃঙ্খলাঅলারা একাজটা বেশি করবে।
৩. এই সময়ের মধ্যে কিছু কাজ হবে। ইউএসএর নিয়ন্ত্রণ জোরদার হবে। ইনডিয়ার সাথে সম্পর্ক আরো জোরদার হবে। টিকফা, ট্রানজিট হবে। নাগরিক অধিকার সঙ্কুচিত হবে। ৩-৪ লাখ মানুষের গুম হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। নিম্ন আদালত আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিপীড়নে মানসিক রোগের মহামারি শুরু হবে। অনেক তরুণ-তরুণী আত্মহত্যা করবে।
৪. বাংলাদেশে ঠিক তিন বছর পরে নাগরিক স্বাধীনতা ও জাতীয় স্বাধীনতার একটা সংগ্রাম শুরু হবে। নতুন বাংলাদেশের এই আন্দোলনে নতুন ইতিহাস ও চেতনা তৈরি হবে। সেই সময়ে জাতীয় বীর হিসেবে ফিরে আসবেন আবদুল কাদের মোল্লা। ফিরে আসবেন নিহতের মিছিলে থাকা অধ্যাপক গোলাম আযম, মাওলানা নিজামী, মাওলানা নিজামী, মাওলানা সাঈদী, আলী আহসান মুজাহিদ, কামারুজ্জামানসহ সবাই। এভাবেই ফিরে আসেন ইসলামী আন্দোলনের মজলুমেরা।
৫. এই লড়াইয়ে বিভীষিকা এই যে বাংলাদেশে বেশ বড়সর কয়েকটি গণহত্যা হবে। মুসলমানদের সংখ্যা অর্ধেকেরও বেশি কমে যেতে পারে। রোহিঙাদের মতো। এরপর যারা বেচে থাকবেন তারাই লড়বেন, দাসত্ব মুক্তির জন্য।
Very realistic article!
ReplyDelete