Friday, 23 August 2013

বগুড়ায় জঙ্গি সংগঠন ‘বিইএম’র আস্তানাটি আ.লীগ নেতার বাড়ি : অভিযানের পর থেকে মালিক পলাতক

বগুড়ায় উগ্রবাদী জঙ্গি সংগঠন ‘বিইএম’ যে বাড়িটি আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করত, সেটি এক স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার। বৃহস্পতিবার ওই বাড়ি থেকে বিপুল অস্ত্রসহ নতুন এ জঙ্গি সংগঠনের তিন সদস্যকে আটক করে র্যাব।
র্যাব সদস্যরা বগুড়া শহরের যে বাড়ি থেকে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের আস্তানার সন্ধান পেয়েছেন, সেই বাড়ির মালিক স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দুলাল হোসেন। এর আগে বগুড়ার কাহালু উপজেলার যোগারপাড়ার যে বাড়ি থেকে ট্রাকভর্তি গুলি উদ্ধার হয়েছিল, সেই বাড়ির মালিকও ছিলেন আওয়ামী কৃষক লীগ নেতা। আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি থেকে একের পর এক জঙ্গি গ্রেফতার এবং আস্তানার সন্ধান পাওয়ার ঘটনায় জনমনে ব্যাপক কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে।
বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়ার জবানী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে যে বাড়ি থেকে র্যাব সদস্যরা আধুনিক যুদ্ধাস্ত্রসহ তিন জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে, সে বাড়ির মালিক দুলাল হোসেন ১২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক। এছাড়া তিনি জেলা যুবলীগের এক শীর্ষ নেতার ব্যবসায়িক পার্টনার। দুলালের ভগ্নিপতি সেই যুবলীগ নেতার প্রাইভেট সেক্রেটারি হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরেই ওই বাড়িটিতে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চলে আসছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এর আগে র্যাব সদস্যরা সেখান থেকে অবৈধ ভিওআইপি সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে। ঘটনার পর বাড়ির মালিকের সন্ধানে নিরাপত্তা বাহিনী কয়েক দফা অভিযান চালালেও তাকে ধরতে পারেনি। জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়ার পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার বগুড়া থেকে অস্ত্র উদ্ধার ও ৩ জঙ্গি সদস্যকে গ্রেফতারের ঘটনা নিয়ে দেশের কিছু মিডিয়া বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ করেছে। দৈনিক প্রথম আলো তাদের অনলাইনে রিপোর্ট করে ‘বগুড়ায় শিবিরের মেস থেকে অস্ত্র উদ্ধার’ শিরোনামে। তখন অভিযান পরিচালনাকারী র্যাব কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোনো কিছু না বললেও দৈনিকটি র্যাব কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে সংবাদটি প্রচার করে। তবে পরে রাতে সংবাদটি সংশোধন করে পুনরায় প্রকাশ করে তারা।
এর আগে কোনো জঙ্গি সংগঠনের সদস্য কোথাও থেকে গ্রেফতারের পর সেই বাড়ির মালিকের পরিচয় ফলাও করে প্রচার করেছে মিডিয়া। কিন্তু বগুড়ায় বৃহস্পতিবার নতুন একটি জঙ্গি সংগঠনের আস্তানা পাওয়ার পরও বাড়িওয়ালা আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়ে কোথাও কোনো সংবাদ না আসায় অবাক হয়েছে এলাকাবাসী।
‘বিইএম’ নামের নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের আস্তানা আবিষ্কারের আগে জেএমবি নেতা বাংলাভাই এবং জেএমবির সামরিক কমান্ডার আতাউর রহমান সানি শহরের ঠনঠনিয়া এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন আত্মগোপন করেছিলেন। শহরের অনেক জনাকীর্ণ এলাকা ছেড়ে জঙ্গিরা ঠনঠনিয়া এলাকায় কেন আশ্রয় নেয়—তা নিরাপত্তা বাহিনীকে ভাবিয়ে তুলেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এ এলাকার বেশিরভাগ বাসাবাড়ির ধরন ভিন্ন। এসব বাড়ির চতুর্দিকেই রাস্তা রয়েছে। ফলে জরুরি মুহূর্তে নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়া সম্ভব। জঙ্গি সংগঠনের নেতাকর্মীরা নিজেদের পালানোর সহজ পথ থাকায় এ এলাকাকে তাদের নিরাপদ আস্তানা মনে করে থাকে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এর আগে ২০০৩ সালের ২৭ জুন রাতে বগুড়ার কাহালু উপজেলার যোগারপাড়া গ্রামে আওয়ামী কৃষক লীগ নেতা আখলাকুর রহমান পিন্টুর বাড়ি থেকে ট্রাকভর্তি রাইফেলের গুলি ও বিস্ফোরক উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনার পর থেকে পিন্টু পলাতক রয়েছে।
এদিকে গতকাল প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক এটিএম হাবিবুর রহমান জানান, র্যাব-১২ বগুড়া কোম্পানির কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার মিরান হোসেন ও এএসপি আবু সাঈদ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শহরের ঠনঠনিয়া জবানী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন দুলালের মেসে অভিযান চালিয়ে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সন্ধান পান। র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে ১৫ জঙ্গি পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও গ্রেফতার করা হয় ৩ জনকে। বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে শুক্রবার ভোর রাত পর্যন্ত এখান থেকে সাব-মেশিনগান, জার্মানির তৈরি একটি এলএমজি, আমেরিকার তৈরি একটি পিস্তল, একটি এমোনিশন ড্রাম, তিনটি ম্যাগাজিন, ৮০ রাউন্ড গুলি, ধারালো অস্ত্র, জেহাদি বই, কোন দেশে কি অস্ত্র পাওয়া যায়—তার একটি ক্যাটালগ ও জঙ্গি প্রশিক্ষণের শিডিউল উদ্ধার করা হয়। অভিযানে গ্রেফতার করা ব্যক্তিরা হলো—দিনাজপুরের ফিরোজ আলম (৩৫), ঢাকার কমলাপুরের মোহাম্মদ নাহিদ (২০) ও গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের বারহান শেখ বাবা (২০)। অভিযান চলাকালে র্যাবের এনডিএডি আলিম, করপোরাল মতিয়ার, জীবন ও এএসআই বিজিত আহত হন। এ ব্যাপারে সদর থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। গ্রেফতার করা ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব নিশ্চিত হয়েছে জেএমবির লোকেরাই ‘বিইএম’ নামের নতুন এই জঙ্গি সংগঠন তৈরি করে দেশে তাদের তত্পরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

No comments:

Post a Comment