সাজেদুল হক: অধিকার সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খান সম্পর্কে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুরই ভাল জানবার কথা। যেহেতু তাদের দুই জনেরই আদর্শিক পথ একসময় এক ছিল। অধিকারের কণ্ঠ আর জামায়াত-হেফাজতের কণ্ঠকে এক বলেই ঠাওর করেছেন মাননীয় মন্ত্রী। যদিও শুক্রবারের মানবজমিনের অনলাইন সংস্করণে মিজানুর রহমান নামে এক পাঠকের মন্তব্য কৌতূহলোদ্দীপক। তিনি লিখেছেন, আজকে যারা আদিলুর রহমান খানের কণ্ঠে জামায়াত-হেফাজতের আওয়াজ পান কয়েকদিন পরে তাদের কণ্ঠ আর আদিলুরের কণ্ঠ এক কণ্ঠে মিলে যেতে পারে। আদতে আদিলুরের কণ্ঠ হলো মজলুমের কণ্ঠস্বর। আদতে অধিকারের কণ্ঠ কার পক্ষে সোচ্চার? বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে কি ভূমিকা ছিল অধিকারের? মানবাধিকার সংগঠনটির যাত্রা শুরু অবশ্য এরও আগে ১৯৯৪ সালে। শুরু থেকেই নির্যাতন, সীমান্ত হত্যা, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল সংগঠনটি। ২০০৩ সালে অধিকারের বার্ষিক রিপোর্ট পর্যালোচনা করলেই ‘বিএনপি-জামায়াতের পক্ষে’ সংস্থাটির কথিত ভূমিকা
স্পষ্ট হবে। তখন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পক্ষে অনেকে বাহবা দিচ্ছিলেন। অথচ সেই সময়ও অধিকার তীব্র এবং তীক্ষ্ন বাসায় সমালোচনা করেছিল বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের। ২০০৩ সালে অধিকারের বার্ষিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওই বছর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হত্যাকাণ্ডের শিকার হন মোট ৮১ জন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৪, ফেব্রুয়ারিতে ৩, মার্চে ৫, এপ্রিলে ৯, মে’তে ৪, জুনে ৭, জুলাইয়ে ৬, আগস্টে ৭, সেপ্টেম্বরে ১২, অক্টোবরে ৯ এবং ডিসেম্বরে ৭ জন। ৫৪ ধারায় অনেক গরিব এবং নিরপরাধ মানুষের গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনার বর্ণনা দেয়া হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। এর আগে ২০০১ সালে যে নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসে সে নির্বাচনে সংঘটিত সহিংসতার বিবরণও প্রকাশ করে অধিকার। অধিকারের প্রতিবেদন অনুযায়ীই ওই নির্বাচনে সহিংসতায় ৫২ জন নিহত হন।
আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলের ট্রাম্পকার্ডকালীন সময়েও অধিকারের ভূমিকা আমরা পরীক্ষা করবো। ২০০৪ সালের ৩০শে এপ্রিল সরকার পতনের ডেডলাইন ঘোষণা করেছিলেন আবদুল জলিল। সে সময় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন লুৎফুজ্জামান বাবর। অতিউৎসাহী আর ‘সফল’ ভূমিকা তৎকালীন সরকারে তার প্রভাবও অনেক বাড়িয়ে দিয়েছিল। তার নির্দেশে সেসময় বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম বড় গণগ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটে। অধিকারই সে সময় সাড়ে আট হাজার লোক গ্রেপ্তারের তথ্য প্রকাশ করেছিল। সরকারবিরোধী প্রচারণার অন্যতম হাতিয়ার ছিল সেই রিপোর্ট। অধিকারের ২০০৪ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী সে বছর র্যাবের ক্রসফায়ারে ৭৯ জন, পুলশের হাতে ১২৮ জন নিহত হয়। ওই বছর ৫ জন সাংবাদিক হত্যা আর ১১১ জন নির্যাতিত হওয়ার বিবরণও সে রিপোর্টে রয়েছে।
২০০১ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত মানবাধিকার নিয়ে নিয়মিতই প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে অধিকার। বিএনপির শাসনামল, ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং বর্তমান সরকারের আমলে এসব প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল বেগম খালেদার জিয়ার নেতৃত্বাধীন জোট সরকার। ২০০৭-০৮ সালে ক্ষমতায় ছিল সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আর ২০০৯ সালের শুরু থেকে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। সংস্থাটির প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ১৩ বছরে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ৩৯৪৮ জন। আর আহত হয়েছেন ১ লাখ ৫২ হাজার ১৪৩ জন। এর মধ্যে ২০০১ সালে ৬৫৬, ২০০২ সালে ৪২০, ২০০৩ সালে ৪৩৬, ২০০৪ সালে ৫২৬, ২০০৫ সালে ৩১০, ২০০৬ সালে ৩৭৪, ২০০৭ সালে ৭৯, ২০০৮ সালে ৫০, ২০০৯ সালে ২৫১, ২০১০ সালে ২২০, ২০১১ সালে ১৩৫, ২০১২ সালে ১৬৯ এবং ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত ৩২২ জন নিহত হয়েছেন।
অধিকারের প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ১৩ বছরে বাংলাদেশে ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন ২১৫১ জন। এর মধ্যে ২০০১ সালে ৪৪, ২০০২ সালে ৮৩, ২০০৩ সালে ৮১, ২০০৪ সালে ২৪০, ২০০৫ সালে ৩৯৬, ২০০৬ সালে ৩৫৫, ২০০৭ সালে ১৮৪, ২০০৮ সালে ১৪৯, ২০০৯ সালে ১৫৪, ২০১০ সালে ১২৭, ২০১১ সালে ৮৪, ২০১২ সালে ৭০ এবং ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত ১৮৪ জন নিহত হয়েছেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্যাতনে ২০০১ থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২৯৭ জন। এর মধ্যে ২০০১ সালে ৮, ২০০২ সালে ৫০, ২০০৩ সালে ২৫, ২০০৪ সালে ৪৬, ২০০৫ সালে ২৬, ২০০৬ সালে ২৭, ২০০৭ সালে ৩০, ২০০৮ সালে ১২, ২০০৯ সালে ২১, ২০১০ সালে ২২, ২০১১ সালে ১৭, ২০১২ সালে ৭ এবং ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত ৬ জন নিহত হয়েছেন।
অধিকারের প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ১৩ বছরে মোট ২৫ জন সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ২০০১ সালে ২, ২০০২ সালে ৩, ২০০৪ সালে ৫, ২০০৫ সালে ২, ২০০৬ সালে ১, ২০০৯ সালে ৩, ২০১০ সালে ৪, ২০১২ সালে ৫ জন নিহত হয়েছেন।
শেষ কথা: আদতে স্থান, কাল ভিন্ন হলেও মানবাধিকারের সংজ্ঞা অভিন্ন। যুদ্ধ অথবা শান্তি সবসময় একই ভাষায় কথা বলে মানবাধিকার। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর ভাষাও এক। আওয়ামী লীগ, বিএনপি আর তত্ত্বাবধায়ক সবসময়ই অধিকারের ভাষাও কি অভিন্ন নয়?
স্পষ্ট হবে। তখন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পক্ষে অনেকে বাহবা দিচ্ছিলেন। অথচ সেই সময়ও অধিকার তীব্র এবং তীক্ষ্ন বাসায় সমালোচনা করেছিল বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের। ২০০৩ সালে অধিকারের বার্ষিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওই বছর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হত্যাকাণ্ডের শিকার হন মোট ৮১ জন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৪, ফেব্রুয়ারিতে ৩, মার্চে ৫, এপ্রিলে ৯, মে’তে ৪, জুনে ৭, জুলাইয়ে ৬, আগস্টে ৭, সেপ্টেম্বরে ১২, অক্টোবরে ৯ এবং ডিসেম্বরে ৭ জন। ৫৪ ধারায় অনেক গরিব এবং নিরপরাধ মানুষের গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনার বর্ণনা দেয়া হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। এর আগে ২০০১ সালে যে নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসে সে নির্বাচনে সংঘটিত সহিংসতার বিবরণও প্রকাশ করে অধিকার। অধিকারের প্রতিবেদন অনুযায়ীই ওই নির্বাচনে সহিংসতায় ৫২ জন নিহত হন।
আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলের ট্রাম্পকার্ডকালীন সময়েও অধিকারের ভূমিকা আমরা পরীক্ষা করবো। ২০০৪ সালের ৩০শে এপ্রিল সরকার পতনের ডেডলাইন ঘোষণা করেছিলেন আবদুল জলিল। সে সময় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন লুৎফুজ্জামান বাবর। অতিউৎসাহী আর ‘সফল’ ভূমিকা তৎকালীন সরকারে তার প্রভাবও অনেক বাড়িয়ে দিয়েছিল। তার নির্দেশে সেসময় বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম বড় গণগ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটে। অধিকারই সে সময় সাড়ে আট হাজার লোক গ্রেপ্তারের তথ্য প্রকাশ করেছিল। সরকারবিরোধী প্রচারণার অন্যতম হাতিয়ার ছিল সেই রিপোর্ট। অধিকারের ২০০৪ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী সে বছর র্যাবের ক্রসফায়ারে ৭৯ জন, পুলশের হাতে ১২৮ জন নিহত হয়। ওই বছর ৫ জন সাংবাদিক হত্যা আর ১১১ জন নির্যাতিত হওয়ার বিবরণও সে রিপোর্টে রয়েছে।
২০০১ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত মানবাধিকার নিয়ে নিয়মিতই প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে অধিকার। বিএনপির শাসনামল, ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং বর্তমান সরকারের আমলে এসব প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল বেগম খালেদার জিয়ার নেতৃত্বাধীন জোট সরকার। ২০০৭-০৮ সালে ক্ষমতায় ছিল সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আর ২০০৯ সালের শুরু থেকে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। সংস্থাটির প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ১৩ বছরে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ৩৯৪৮ জন। আর আহত হয়েছেন ১ লাখ ৫২ হাজার ১৪৩ জন। এর মধ্যে ২০০১ সালে ৬৫৬, ২০০২ সালে ৪২০, ২০০৩ সালে ৪৩৬, ২০০৪ সালে ৫২৬, ২০০৫ সালে ৩১০, ২০০৬ সালে ৩৭৪, ২০০৭ সালে ৭৯, ২০০৮ সালে ৫০, ২০০৯ সালে ২৫১, ২০১০ সালে ২২০, ২০১১ সালে ১৩৫, ২০১২ সালে ১৬৯ এবং ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত ৩২২ জন নিহত হয়েছেন।
অধিকারের প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ১৩ বছরে বাংলাদেশে ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন ২১৫১ জন। এর মধ্যে ২০০১ সালে ৪৪, ২০০২ সালে ৮৩, ২০০৩ সালে ৮১, ২০০৪ সালে ২৪০, ২০০৫ সালে ৩৯৬, ২০০৬ সালে ৩৫৫, ২০০৭ সালে ১৮৪, ২০০৮ সালে ১৪৯, ২০০৯ সালে ১৫৪, ২০১০ সালে ১২৭, ২০১১ সালে ৮৪, ২০১২ সালে ৭০ এবং ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত ১৮৪ জন নিহত হয়েছেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্যাতনে ২০০১ থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২৯৭ জন। এর মধ্যে ২০০১ সালে ৮, ২০০২ সালে ৫০, ২০০৩ সালে ২৫, ২০০৪ সালে ৪৬, ২০০৫ সালে ২৬, ২০০৬ সালে ২৭, ২০০৭ সালে ৩০, ২০০৮ সালে ১২, ২০০৯ সালে ২১, ২০১০ সালে ২২, ২০১১ সালে ১৭, ২০১২ সালে ৭ এবং ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত ৬ জন নিহত হয়েছেন।
অধিকারের প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ১৩ বছরে মোট ২৫ জন সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ২০০১ সালে ২, ২০০২ সালে ৩, ২০০৪ সালে ৫, ২০০৫ সালে ২, ২০০৬ সালে ১, ২০০৯ সালে ৩, ২০১০ সালে ৪, ২০১২ সালে ৫ জন নিহত হয়েছেন।
শেষ কথা: আদতে স্থান, কাল ভিন্ন হলেও মানবাধিকারের সংজ্ঞা অভিন্ন। যুদ্ধ অথবা শান্তি সবসময় একই ভাষায় কথা বলে মানবাধিকার। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর ভাষাও এক। আওয়ামী লীগ, বিএনপি আর তত্ত্বাবধায়ক সবসময়ই অধিকারের ভাষাও কি অভিন্ন নয়?
No comments:
Post a Comment