মিশরে সম্প্রতি সেনা অভ্যুত্থানে দেশটির প্রথম নির্বাচিত গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র কারো পক্ষ নেয়নি।’
তবে মার্কিন ফেডারেল সরকারের বেশ কিছু নথিতে দেখা গেছে, মিশরে মুরসিবিরোধী নেতাদের অর্থ সহায়তা দিয়েছে ওবামা প্রশাসন।
যেসব কর্মকর্তাকে অর্থ সহায়তা করা হয় তার মধ্যে আছেন একজন নির্বাসিত পুলিশ কর্মকর্তা যিনি সহিংস উপায়ে মুরসি সরকারকে উৎখাতের পরিকল্পনা করেন। আর একজন ইসলাম বিরোধী রাজনীতিককেও অর্থ দেয়া হয় যিনি প্রচারণা চালান যে মসজিদগুলো বন্ধ করে দিয়ে আলেমদের জোর করে বের করে দিতে হবে।
এছাড়া প্রাপ্ত নথিপত্রে দেখা যায়, মিশরের প্রথম গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট মুরসিকে উৎখাতে জড়িত বেশি কিছু রাজনীতিককেও অর্থ সহায়তা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ভিত্তিক অনুষ্ঠান ইউসি বারকেলের বরাত দিয়ে আল-জাজিরা জানায়, মধ্যপ্রাচ্যে গণতন্ত্রের উন্নয়নে স্টেট ডিপার্টমেন্টের ডেমোক্রেসি অ্যাসিসট্যান্ট তহবিলের অধীনে এই অর্থসহায়তা দেওয়া হয়।
সাবেক স্বৈরশাসক হোসনি মোবারককে ক্ষমতাচ্যুত করার পর ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এই অর্থসহায়তা পেয়ে আসছে মুরসিবিরোধী রাজনীতিক ও তাদের অনুগতরা।
ফ্রিডম অব ইনফরমেশন অ্যাক্টের অধীনে প্রাপ্ত তথ্য, সাক্ষাৎকার এবং সরকারি নথিপত্রে দেখা যায় ওয়াশিংটনের এই অর্থ সহায়তা মিশরীয় আইনের লঙ্ঘন। মিশরের আইনে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিদেশি অর্থসহায়তা নেয়া নিষিদ্ধ।
এমনকি এটি যুক্তরাষ্ট্রের আইনেরও লঙ্ঘন। দেশটি আইন অনুসারে বিদেশি রাজনীতিক, নাশতকামূলক কর্মকাণ্ড এবং নির্বাচিত সরকার বিরোধী কোনো কাজে জনগণের করের টাকা খরচ করা যায় না।
মূলত আরব বসন্তের পর মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামপন্থীদের উত্থান ঠেকাতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের অনুগত সেক্যুলারিস্টদের ফের ক্ষমতায় আনার জন্য ‘ডেমোক্রেসি অ্যাসিসট্যান্স’ তহবিলের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র এই অর্থ সহায়তা দেয়।
ইসলামপন্থিরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিনি স্বার্থের বিরোধিতা করে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থসাহায্যপুষ্ট রাজনৈতিক কর্মী, যিনি যুক্তরাষ্ট্রেই নির্বাসিত, ওমর আফিফি সোলিমান একটি পরিকল্পনার কথা লিখেছেন এভাবে- রাস্তায় খেজুর গাছ ফেলে কায়রোমুখি বাসগুলো থামিয়ে দাও, রাস্তা ভিজিয়ে দাও গ্যাস আর ডিজেল দিয়ে। এ অবস্থায় বাসের গতি যখন কমে আসবে তখন আগুন জ্বালিয়ে দাও যাতে ভেতরের সব যাত্রী পুড়ে মারা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডেমোক্রেসি অ্যাসিসট্যান্স প্রোগ্রামের আওতায় একাধিক সংস্থার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে অর্থ সহায়তা করে থাকে। জনগণের করের কোটি কোটি ডলার সরবরাহ করা হয় ব্যুরো অব ডেমোক্রেসি, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লেবার, দ্য মিডল ইস্ট পার্টনারশিপ ইনিশিয়েটিভ, ইউএসএইড এবং ওয়াশিংটন ভিত্তিক আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্রেসির মাধ্যমে।
এসব সংগঠন আবার অন্য সংগঠনের মাধ্যমে মুরসিবিরোধী নেতাদের অর্থ সহায়তা দিয়েছে। এর মধ্যে আছে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট এবং ফ্রিডম হাউস। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের নথিপত্রে দেখা যায়, বেসরকারি সংস্থা বা এনজিও’র নামে এসব সংগঠন মিশরে মুরসিবিরোধী অনেক প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক দলকে অর্থ সহায়তা দিয়েছে।
১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর বুশ প্রশাসন ২০০২ সালে দ্য মিডল ইস্ট পার্টনারশিপ ইনিশিয়েটিভ গড়ে তোলে। এ সংগঠনটি মধ্যপ্রাচ্যে গণতন্ত্রের নামে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০ কোটি ডলার খরচ করেছে। ইউএসএইড মধ্যপ্রাচ্যে বছরে খরচ করে ১৪০ কোটি ডলার। এর মধ্যে গণতন্ত্রায়ণের জন্য খরচ করা হয় ৩৯ কোটি ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার সরাসরি গণতন্ত্র প্রকল্পের জন্য কত অর্থ ব্যয় করে তার হিসাব প্রকাশ করে না। তবে ওয়াশিংটন ভিত্তিক প্রজেক্ট অন মিডল ইস্ট ডেমোক্রেসির নির্বাহী পরিচালক স্টিফেন ম্যাকইনিমির হিসেবে, ২০১১ সালের এজন্য সাড়ে ৬ কোটি ডলার এবং ২০১২ সালে আড়াই কোটি ডলার ব্যয় করা হয়েছে।
মিশরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অর্থ সহায়তার প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি। ২০১১ সালের সংস্থাটির জন্য কংগ্রেসের বরাদ্দ ছিল ১১ কোটি ৮০ লাখ ডলার। সংস্থাটি মিশরের একজন নির্বাসিত পুলিশ কর্মকর্তাকে বছরে ১ লাখ ২০ হাজার ডলার অর্থ দিয়েছে। তার কাজ হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে মিশরে সহিংসতায় উস্কানি দেয়া।
কর্নেল ওমর আফিফি সোলিমান নামের এই পুলিশ কর্মকর্তা মিশরের এলিট পুলিশি তদন্ত বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। এই বাহিনীটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য কুখ্যাত। ২০০৮ সাল থেকে সে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ সহায়তা পেয়ে আসছে। সোলিমান হোসনি মোবারক সরকার, তার বিদায়ের পর সেনা সরকার এবং সর্বশেষ মুরসি সরকারের বিরুদ্ধে সহিংসতায় উস্কানি দিয়েছে।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বাস্তুর মর্যাদা পেয়েছেন। মিশরে তার অনুপস্থিতিতে তাকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। তাকে ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্রেসির ফেলোশিপ দেয়া হয়েছে। এর আওতায় তাকে ২০০৯ সালে ৫০ হাজার ডলার এবং ২০১০ সালে ৬০ হাজার ডলার অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে।
ইউসি বারকেলে’র সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি অর্থ নেয়ার কথা স্বীকার করেন। তবে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই অর্থ যথেষ্ট নয়। এদিকে, এনইডি তার ওয়েবসাইট থেকে মিশরে অর্থ সহায়তার হিসাব তুলে নিয়েছে।
ফেসবুকের ৮৩ হাজার অনুসারী, ইউটিউব ও অন্যান্য সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তিনি ব্রাদারহুড ও মুরসিবিরোধীদের ভয়ঙ্কর সহিংসতার পথ বাতলে দিতেন। জুনে মুরসি আন্দোলনের সময় তার একটি নির্দেশনা ছিল এরকম- প্রথমেই হাটুর হাঁড় গুড়ো করে দিয়ে মুরসি সমর্থকদের অক্ষম করে দাও।
পরে সেভাবেই মুরসি সমর্থকদের ওপর হামলা হয়। মে মাসে সে তার অনুসারিদের নির্দেশ দেয়, তারা যেন বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহ কর্তৃপক্ষের প্রধানদের শিরচ্ছেদ করে।
মিশরের মুরসিবিরোধী অনেক নেতাকেও অর্থ সহায়তা দেয়া হয়। এরা গায়ের জোরে মুরসিকে উৎখাতের পক্ষে প্রচারণা চালায়। এদের মধ্যে মুরসি বিরোধী প্রধান জোট স্যালভেশন ফ্রন্টের নেতারাও রয়েছে। এই জোটের প্রধান বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট আল-বারাদেই।
এদেরই একজন হলেন মুসলিমবিরোধী নেত্রী এরশা আবদেল ফাতাহ। তিনি জোর প্রচারণা চালান যে, মুরসি প্রবর্তিত সংবিধানের পক্ষে যেসব মসজিদ থেকে প্রচারণা চালানো হয়, সেসব মসজিদ বন্ধ করে দিয়ে তার ইমামদের বের করে দিতে হবে। সত্যি সত্যিই তার সমর্থকরা এই কাজ করে বসে। এতে বাধা দেয়া হলে বেশ কয়েকজন মুরসি সমর্থককে হত্যা করা হয়।
আবদেল ফাতাহর এনজিও দ্য ইজিপশিয়ান অ্যাকাডেমিকে ২০১১ সালেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ৭৫ হাজার ডলার অর্থ সহায়তা দেয়। আবদেল ফাতাহ স্যালভেশন ফ্রন্টের নেত্রী। এই দলের প্রধান এল বারাদিই কিছুদিন আগেই ঘোষণা করেন, ৩০ জুন হবে মুরসির শেষ দিন। তার তিন দিন পর মুরসিকে উৎখাত করে সেনাবাহিনী।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ সহায়তা পেয়েছে এমন একজন হচ্ছেন মাইকেল মিউনিয়ার। তিনি প্রায়ই টিভি টকশোতে মুরসিবিরোধী জোরালো বক্তব্য রাখেন। তিনি আল হায়া পার্টিরও প্রধান। সরকারি নথিপত্রে দেখা যায়, ২০০৯ সাল থেকে তার এনজিও হ্যান্ড ইন হ্যান্ড ফর ইজিপ্ট অ্যাসোসিয়েশনকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ১৩ লাখ ডলার অর্থ সহায়তা দিয়েছে। তিনি দেশটির খ্রিস্টানদের মুরসিবিরোধী আন্দোলনে সহায়তা করেছেন।
মুরসিবিরোধী আন্দোলনের আরেক নেতা রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির নেতা মোহাম্মদ এসমাত আল সাদাত শুধু ২০১১ সালে যুক্তরাস্ট্র সরকার থেকে পেয়েছেন ৮৪,৪৪৫ ডলার। এই সাদাত গত সোমবার মুরসি সমর্থকদের ওপর সেনাবাহিনীর গণহত্যার পক্ষেও কথা বলেছেন।
বিদেশি অর্থ সহায়তায় মিশরে অশান্তি সৃষ্টির জন্য গত মাসে ৪৩ জন বিদেশী এনজিও কর্মকর্তাকে কায়রোর একটি আদালত সাজা দিলে এতে উদ্বেগ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ।
মধ্যপ্রাচ্যের অনেক বিশ্লেষক বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র মিশরে যে গণতন্ত্র চায় তার অর্থ হলো দেশটিতে তার প্রভাব বৃদ্ধি। মানবাধিকার এবং সুশাসন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো মাথাব্যথা নেই।
তবে মার্কিন ফেডারেল সরকারের বেশ কিছু নথিতে দেখা গেছে, মিশরে মুরসিবিরোধী নেতাদের অর্থ সহায়তা দিয়েছে ওবামা প্রশাসন।
যেসব কর্মকর্তাকে অর্থ সহায়তা করা হয় তার মধ্যে আছেন একজন নির্বাসিত পুলিশ কর্মকর্তা যিনি সহিংস উপায়ে মুরসি সরকারকে উৎখাতের পরিকল্পনা করেন। আর একজন ইসলাম বিরোধী রাজনীতিককেও অর্থ দেয়া হয় যিনি প্রচারণা চালান যে মসজিদগুলো বন্ধ করে দিয়ে আলেমদের জোর করে বের করে দিতে হবে।
এছাড়া প্রাপ্ত নথিপত্রে দেখা যায়, মিশরের প্রথম গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট মুরসিকে উৎখাতে জড়িত বেশি কিছু রাজনীতিককেও অর্থ সহায়তা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ভিত্তিক অনুষ্ঠান ইউসি বারকেলের বরাত দিয়ে আল-জাজিরা জানায়, মধ্যপ্রাচ্যে গণতন্ত্রের উন্নয়নে স্টেট ডিপার্টমেন্টের ডেমোক্রেসি অ্যাসিসট্যান্ট তহবিলের অধীনে এই অর্থসহায়তা দেওয়া হয়।
সাবেক স্বৈরশাসক হোসনি মোবারককে ক্ষমতাচ্যুত করার পর ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এই অর্থসহায়তা পেয়ে আসছে মুরসিবিরোধী রাজনীতিক ও তাদের অনুগতরা।
ফ্রিডম অব ইনফরমেশন অ্যাক্টের অধীনে প্রাপ্ত তথ্য, সাক্ষাৎকার এবং সরকারি নথিপত্রে দেখা যায় ওয়াশিংটনের এই অর্থ সহায়তা মিশরীয় আইনের লঙ্ঘন। মিশরের আইনে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিদেশি অর্থসহায়তা নেয়া নিষিদ্ধ।
এমনকি এটি যুক্তরাষ্ট্রের আইনেরও লঙ্ঘন। দেশটি আইন অনুসারে বিদেশি রাজনীতিক, নাশতকামূলক কর্মকাণ্ড এবং নির্বাচিত সরকার বিরোধী কোনো কাজে জনগণের করের টাকা খরচ করা যায় না।
মূলত আরব বসন্তের পর মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামপন্থীদের উত্থান ঠেকাতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের অনুগত সেক্যুলারিস্টদের ফের ক্ষমতায় আনার জন্য ‘ডেমোক্রেসি অ্যাসিসট্যান্স’ তহবিলের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র এই অর্থ সহায়তা দেয়।
ইসলামপন্থিরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিনি স্বার্থের বিরোধিতা করে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থসাহায্যপুষ্ট রাজনৈতিক কর্মী, যিনি যুক্তরাষ্ট্রেই নির্বাসিত, ওমর আফিফি সোলিমান একটি পরিকল্পনার কথা লিখেছেন এভাবে- রাস্তায় খেজুর গাছ ফেলে কায়রোমুখি বাসগুলো থামিয়ে দাও, রাস্তা ভিজিয়ে দাও গ্যাস আর ডিজেল দিয়ে। এ অবস্থায় বাসের গতি যখন কমে আসবে তখন আগুন জ্বালিয়ে দাও যাতে ভেতরের সব যাত্রী পুড়ে মারা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডেমোক্রেসি অ্যাসিসট্যান্স প্রোগ্রামের আওতায় একাধিক সংস্থার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে অর্থ সহায়তা করে থাকে। জনগণের করের কোটি কোটি ডলার সরবরাহ করা হয় ব্যুরো অব ডেমোক্রেসি, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লেবার, দ্য মিডল ইস্ট পার্টনারশিপ ইনিশিয়েটিভ, ইউএসএইড এবং ওয়াশিংটন ভিত্তিক আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্রেসির মাধ্যমে।
এসব সংগঠন আবার অন্য সংগঠনের মাধ্যমে মুরসিবিরোধী নেতাদের অর্থ সহায়তা দিয়েছে। এর মধ্যে আছে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট এবং ফ্রিডম হাউস। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের নথিপত্রে দেখা যায়, বেসরকারি সংস্থা বা এনজিও’র নামে এসব সংগঠন মিশরে মুরসিবিরোধী অনেক প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক দলকে অর্থ সহায়তা দিয়েছে।
১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর বুশ প্রশাসন ২০০২ সালে দ্য মিডল ইস্ট পার্টনারশিপ ইনিশিয়েটিভ গড়ে তোলে। এ সংগঠনটি মধ্যপ্রাচ্যে গণতন্ত্রের নামে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০ কোটি ডলার খরচ করেছে। ইউএসএইড মধ্যপ্রাচ্যে বছরে খরচ করে ১৪০ কোটি ডলার। এর মধ্যে গণতন্ত্রায়ণের জন্য খরচ করা হয় ৩৯ কোটি ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার সরাসরি গণতন্ত্র প্রকল্পের জন্য কত অর্থ ব্যয় করে তার হিসাব প্রকাশ করে না। তবে ওয়াশিংটন ভিত্তিক প্রজেক্ট অন মিডল ইস্ট ডেমোক্রেসির নির্বাহী পরিচালক স্টিফেন ম্যাকইনিমির হিসেবে, ২০১১ সালের এজন্য সাড়ে ৬ কোটি ডলার এবং ২০১২ সালে আড়াই কোটি ডলার ব্যয় করা হয়েছে।
মিশরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অর্থ সহায়তার প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি। ২০১১ সালের সংস্থাটির জন্য কংগ্রেসের বরাদ্দ ছিল ১১ কোটি ৮০ লাখ ডলার। সংস্থাটি মিশরের একজন নির্বাসিত পুলিশ কর্মকর্তাকে বছরে ১ লাখ ২০ হাজার ডলার অর্থ দিয়েছে। তার কাজ হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে মিশরে সহিংসতায় উস্কানি দেয়া।
কর্নেল ওমর আফিফি সোলিমান নামের এই পুলিশ কর্মকর্তা মিশরের এলিট পুলিশি তদন্ত বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। এই বাহিনীটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য কুখ্যাত। ২০০৮ সাল থেকে সে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ সহায়তা পেয়ে আসছে। সোলিমান হোসনি মোবারক সরকার, তার বিদায়ের পর সেনা সরকার এবং সর্বশেষ মুরসি সরকারের বিরুদ্ধে সহিংসতায় উস্কানি দিয়েছে।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বাস্তুর মর্যাদা পেয়েছেন। মিশরে তার অনুপস্থিতিতে তাকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। তাকে ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্রেসির ফেলোশিপ দেয়া হয়েছে। এর আওতায় তাকে ২০০৯ সালে ৫০ হাজার ডলার এবং ২০১০ সালে ৬০ হাজার ডলার অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে।
ইউসি বারকেলে’র সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি অর্থ নেয়ার কথা স্বীকার করেন। তবে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই অর্থ যথেষ্ট নয়। এদিকে, এনইডি তার ওয়েবসাইট থেকে মিশরে অর্থ সহায়তার হিসাব তুলে নিয়েছে।
ফেসবুকের ৮৩ হাজার অনুসারী, ইউটিউব ও অন্যান্য সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তিনি ব্রাদারহুড ও মুরসিবিরোধীদের ভয়ঙ্কর সহিংসতার পথ বাতলে দিতেন। জুনে মুরসি আন্দোলনের সময় তার একটি নির্দেশনা ছিল এরকম- প্রথমেই হাটুর হাঁড় গুড়ো করে দিয়ে মুরসি সমর্থকদের অক্ষম করে দাও।
পরে সেভাবেই মুরসি সমর্থকদের ওপর হামলা হয়। মে মাসে সে তার অনুসারিদের নির্দেশ দেয়, তারা যেন বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহ কর্তৃপক্ষের প্রধানদের শিরচ্ছেদ করে।
মিশরের মুরসিবিরোধী অনেক নেতাকেও অর্থ সহায়তা দেয়া হয়। এরা গায়ের জোরে মুরসিকে উৎখাতের পক্ষে প্রচারণা চালায়। এদের মধ্যে মুরসি বিরোধী প্রধান জোট স্যালভেশন ফ্রন্টের নেতারাও রয়েছে। এই জোটের প্রধান বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট আল-বারাদেই।
এদেরই একজন হলেন মুসলিমবিরোধী নেত্রী এরশা আবদেল ফাতাহ। তিনি জোর প্রচারণা চালান যে, মুরসি প্রবর্তিত সংবিধানের পক্ষে যেসব মসজিদ থেকে প্রচারণা চালানো হয়, সেসব মসজিদ বন্ধ করে দিয়ে তার ইমামদের বের করে দিতে হবে। সত্যি সত্যিই তার সমর্থকরা এই কাজ করে বসে। এতে বাধা দেয়া হলে বেশ কয়েকজন মুরসি সমর্থককে হত্যা করা হয়।
আবদেল ফাতাহর এনজিও দ্য ইজিপশিয়ান অ্যাকাডেমিকে ২০১১ সালেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ৭৫ হাজার ডলার অর্থ সহায়তা দেয়। আবদেল ফাতাহ স্যালভেশন ফ্রন্টের নেত্রী। এই দলের প্রধান এল বারাদিই কিছুদিন আগেই ঘোষণা করেন, ৩০ জুন হবে মুরসির শেষ দিন। তার তিন দিন পর মুরসিকে উৎখাত করে সেনাবাহিনী।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ সহায়তা পেয়েছে এমন একজন হচ্ছেন মাইকেল মিউনিয়ার। তিনি প্রায়ই টিভি টকশোতে মুরসিবিরোধী জোরালো বক্তব্য রাখেন। তিনি আল হায়া পার্টিরও প্রধান। সরকারি নথিপত্রে দেখা যায়, ২০০৯ সাল থেকে তার এনজিও হ্যান্ড ইন হ্যান্ড ফর ইজিপ্ট অ্যাসোসিয়েশনকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ১৩ লাখ ডলার অর্থ সহায়তা দিয়েছে। তিনি দেশটির খ্রিস্টানদের মুরসিবিরোধী আন্দোলনে সহায়তা করেছেন।
মুরসিবিরোধী আন্দোলনের আরেক নেতা রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির নেতা মোহাম্মদ এসমাত আল সাদাত শুধু ২০১১ সালে যুক্তরাস্ট্র সরকার থেকে পেয়েছেন ৮৪,৪৪৫ ডলার। এই সাদাত গত সোমবার মুরসি সমর্থকদের ওপর সেনাবাহিনীর গণহত্যার পক্ষেও কথা বলেছেন।
বিদেশি অর্থ সহায়তায় মিশরে অশান্তি সৃষ্টির জন্য গত মাসে ৪৩ জন বিদেশী এনজিও কর্মকর্তাকে কায়রোর একটি আদালত সাজা দিলে এতে উদ্বেগ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ।
মধ্যপ্রাচ্যের অনেক বিশ্লেষক বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র মিশরে যে গণতন্ত্র চায় তার অর্থ হলো দেশটিতে তার প্রভাব বৃদ্ধি। মানবাধিকার এবং সুশাসন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো মাথাব্যথা নেই।
No comments:
Post a Comment