আমিনা ক্যাচালিয়া। হতে পারতেন নেলসন ম্যান্ডেলার জীবনসঙ্গী। নিজ মুখে ম্যান্ডেলা তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। গ্রহণ করেননি আমিনা। সবিনয়ে বলে দিয়েছেন, না, ম্যান্ডেলা এ সম্ভব নয়। জগৎজোড়া খ্যাতি যার, যার মাথায় শান্তির নোবেল মুকুট সেই ম্যান্ডেলার বিয়ের প্রস্তাব মুখে মুখে ফিরিয়ে দিলেন আমিনা। কে এই আমিনা? কেন তিনি ফিরিয়ে দিলেন ম্যান্ডেলাকে? প্রথম প্রশ্নের উত্তর হয়তো অনেকেরই জানা। আমিনা ক্যাচালিয়া ছিলেন ম্যান্ডেলার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। যার রান্নাঘর পর্যন্ত প্রবেশ ছিল ম্যান্ডেলার। গভীর ভাবাবেগ নিয়ে আমিনার বাড়ি ছুটে যেতেন তিনি। আমিনার পক্ষেও তাই। কৃতিত্বে, অভিজ্ঞতায় ম্যান্ডেলা মহাসমুদ্র আর আমিনাকে বলা চলে নদী। তবুও সমুদ্র-নদীর মোহনায় শেষ জীবনের বসত গড়তে চেয়েছিলেন ম্যান্ডেলা। আমিনা মোহনায় গাঁটছড়া বাঁধতে চাননি। তিনি ম্যান্ডেলা নামক মহাসমুদ্র জয় করতে চেয়েছেন। তবে অবশ্যই আপন বৈশিষ্ট্য অক্ষুণœ রেখে, ঠাই-ঠিকানার সুতো না ছিঁড়ে।
এসব তথ্যের সত্যতা নিয়ে বিভ্রান্তির সুযোগ আছে বৈকি। কিন্তু আমিনার আÍজীবনী ‘হোয়েন হোপ অ্যান্ড হিস্ট্রি রায়িম’ এ বিভ্রান্তি দূর করে দেয়। আÍজীবনীটি জুন, ২০১৩-এর গোড়ার দিকে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে ম্যান্ডেলার সঙ্গে গভীর সম্পর্কের বিষয়টি অকপটে বলেছেন আমিনা। সম্পর্কের বিষয়ে আরও কিছু বলার আগে আমিনার পরিচয় যথাসম্ভব বলে নেয়া ভালো। আমিনা কিন্তু পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিয়েছেন। বেশি দিন নয় মাস পাঁচেক আগেÑ তারিখ ৩১ জানুয়ারি, ২০১৩। বিদায়বেলায় আমিনার বয়স ছিল ৮২ বছর। এর ঠিক ১৮ বছর আগের ঘটনা। মে ১৯৯৫। আমিনার স্বামী ক্যাচালিয়া মারা যান। আমিনা তার স্বামীর প্রতি যথেষ্ট দায়িত্বশীল ছিলেন বলে জানা যায়। আমিনার ছেলে গালের ক্যাচালিয়া ও মেয়ে কো কো ক্যাচালিয়া তাদের বাবা-মায়ের সুসম্পর্কের কথা বিভিন্ন সময় জানিয়েছেন। স্বামী হারানোর আঘাতে আমিনা যখন শোকের জলে ভাসছেন ম্যান্ডেলা তখন নতুন জীবনের স্বপ্ন নিয়ে দাঁড়ান তার সামনে। এখানে আরেকটু বলা প্রয়োজন, আমিনার স্বামী ক্যাচালিয়া ছিলেন ম্যান্ডেলার রাজনৈতিক সঙ্গী। সেই সুবাদে আমিনার বাড়িতে যাতায়াত ছিল ম্যান্ডেলার। এম অ্যান্ড জি-তে দেয়া সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে আমিনার মেয়ে কো কো বলেছেন, ‘আমরা জানতাম আমাদের মাকে ম্যান্ডেলা ভীষণ পছন্দ করেন। এক্ষেত্রে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।’ কো কোর স্পষ্ট দাবি, তাদের বাড়িটি ছিল ম্যান্ডেলাময়। এমনকি তাদের বাবার মৃত্যুর সময়ও ম্যান্ডেলা সব সময় তাদের পাশে থেকেছেন। কো কো আরও বলেছেন, তার বাবার সঙ্গে নিবিড় রাজনৈতিক সম্পর্ক থাকলেও তার মায়ের সঙ্গে তার চেয়েও বেশি ব্যক্তিক সম্পর্ক ছিল।
আমিনার ছেলে গালেব তার মায়ের আÍজীবনী লিখতে সাহায্য করেছিলেন। সম্প্রতি দ্য মেইল এবং গার্ডিয়ান পত্রিকায় দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, আমিনা ম্যান্ডেলার সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা জানাতে চাইলেও ম্যান্ডেলার দেয়া বিয়ের প্রস্তাব সম্পর্কে কিছুই তার আÍজীবনীতে লিখতে চাননি। তবে তাদের দুই ভাই-বোনকে একদিন তাদের মা ডেকে বলেছিলেন, ‘মাদিবা (ম্যান্ডেলা) তাকে বিয়ে করতে চান।’ সে সময় ধীরচিত্তে আমিনা তার প্রস্তাবে সাড়া দেয়া থেকে বিরত থাকেন। গালেব বলেন, তার মা কখনোই তার অতীতকে, তার অস্তিত্বকে হারাতে চাননি। স্বামীর স্মৃতিটুকু আঁকড়ে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বাঁচতে চেয়েছেন তিনি। তবে ম্যান্ডেলাকে নিয়ে আমিনার ভাবাবেগেরও অন্ত ছিল না। আমিনার স্বামী যখন মারা যান, সে সময় ম্যান্ডেলার দ্বিতীয় স্ত্রী উইনি মাদিকিজেলার সঙ্গে প্রায় ছাড়াছাড়ি অবস্থা। পরের বছরই ম্যান্ডেলা উইনিকে তালাক দেন এবং গ্রাসা ম্যাশেলকে বিয়ে করেন। কিন্তু এত ভালোবাসা জমিয়েছিলেন যার জন্য, সেই আমিনা হননি ম্যান্ডেলার। এতদিন এ নিয়ে আলাপ না হলেও আমিনার আÍজীবনীই বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিল ম্যান্ডেলার গোপন ভালোবাসার কথা। অবশ্য এ নিয়ে ম্যান্ডেলা পরিবার কোন মন্তব্য করেনি।
No comments:
Post a Comment