গত ক’বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রফতানিতে ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ২০০৮ সালের তুলনায় ২০১২ সালে জনশক্তি রফতানি সাড়ে ৩০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে এ সংখ্যা প্রায় ৪৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া গত এক দশকের ব্যবধানে দক্ষ জনশক্তি রফতানি কিছুটা বাড়লেও পেশাজীবীদের বিদেশ গমনের হার প্রায় শূন্য শতাংশে নেমে এসেছে। এছাড়া আধাদক্ষ জনশক্তি রফতানির হারও ১৩ শতাংশ কমে নেমে এসেছে মাত্র ৩ শতাংশে। সরকার ও রাষ্ট্রীয় নীতির দুর্বলতা, কূটনৈতিক সম্পর্কে অবনতি এবং প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয়হীনতার কারণে জনশক্তি রফতানিতে ধস নেমেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরকারের ব্যর্থতা ও নীতিহীনতার কারণে বিদেশে জনশক্তি রফতানি মারাত্মকভাবে কমেছে। মাত্র ৫ বছরের ব্যবধানে জনশক্তি রফতানি কমেছে সাড়ে ৩০ শতাংশ। আর এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ৪৬ শতাংশ। চলতি ২০১৩ সালের মে মাস পর্যন্ত মোট ১ লাখ ৭৪ হাজার ২২৭ জন বিদেশে গেছেন, যা গত বছরের এ সময়ের তুলনায় ৪৬ শতাংশ। গত বছরের এ সময় পর্যন্ত বিদেশগামীর সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ২১ হাজার ৭২৭ জন। ৫ বছর আগে ২০০৮ সালে বিদেশে গেছেন মোট ৮ লাখ ৭৫ হাজার ৫৫ জন, যা ২০১২ সালের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি। এদিকে চলতি বছরে সর্বমোট ৪ লাখের মতো জনশক্তি রফতানি হতে পারে বলে বিএমইটি জানিয়েছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৬ লাখের মতো। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে জনশক্তি রফতানি ২ লাখ কম হবে।
জনশক্তি রফতানি কম হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে ব্যুরো অব ম্যানপাওয়ার এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং (বিএমইটি) মহাপরিচালক (ডিজি) শামছুন নাহার বলেন, গত বছরের তুলনায়
চলতি বছর জনশক্তি রফতানি কম হয়েছে। দক্ষ, অভিবাসনের খরচ কমানো এবং জনশক্তির সামাজিক কল্যাণ—এ তিনটি বিষয়কে নিশ্চিত করে রফতানির প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। যার কারণে জনশক্তি রফতানি কমে যাচ্ছে। চলতি বছরও ৪ লাখ জনশক্তি রফতানি হতে পারে। আগের বছরও এর পরিমাণ ছিল ৬ লাখ। তবে জনশক্তি রফতানি বাড়াতে নতুন নতুন দেশ খোঁজা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত বিগত ১০ বছরের জনশক্তি রফতানির পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০০২ সালে মোট প্রবাসীর সংখ্যা ছিল ২ লাখ ২৫ হাজার ২৫৬ জন। ক্রমান্বয়ে বাড়তে বাড়তে এ সংখ্যা ২০০৮ সালে ৮ লাখ ৭৫ হাজার ৫৫ জনে উন্নীত হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে বিদেশে জনশক্তি রফতানির পরিমাণ কমতে থাকে। ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম বছরে ২০০৯ সালে রফতানির পরিমাণ অর্ধেক কমে যায়। ওই বছরে মোট প্রবাসীর সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৭৮ জন, যা ২০০৮ সালের তুলনায় প্রায় ৪৭ শতাংশ কম। শাসন ক্ষমতার ৪ বছর পর ২০১২ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৬ লাখ ৭ হাজার ৭৯৮ জনে। যা ২০০৮ সালের তুলনায় ২ লাখ ৬৭ হাজার ২৫৭ জন কম। গত বছরে ২০০৮ সালের তুলনায় জনশক্তি রফতানি কমেছে ৩০ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
বিএমইটি থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, চলতি ২০১৩ সালের প্রতি মাসেই গত বছরের একই সময়ের তুলনায় জনশক্তি রফতানি অর্ধেকের কাছাকাছি কম হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে জনশক্তি রফতানি হয়েছে ৩৮ হাজার ৩৩৭ জন। গত বছরের এ সময়ে এ পরিমাণ ছিল ৬৭ হাজার ৭৩৮ জন। অর্থাত্ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম মাসে ২৯ হাজার ৪০১ জন কম। ফেব্রুয়ারি মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৮ হাজার কমে ৩২ হাজার ৫৮৯ জন রফতানি হয়েছে। এছাড়া মার্চে ২১ হাজার ২ জন কমে ৩৭ হাজার ১০০ জন এবং এপ্রিলে ৩০ হাজার ৮৯৪ জন কমে ৩২ হাজার ২৮১ জন রফতানি হয়েছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ৬০ হাজার ৫৪১ জন, মার্চে ৫৮ হাজার ১০২ জন এবং এপ্রিলে ৬৩ হাজার ১৭৫ জনশক্তি রফতানি হয়েছিল।
বহির্বিশ্ব বিশেষ করে মধ্যপ্রাচের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সমস্যা প্রকট হওয়ার কারণে সৌদি আরব, কুয়েত, মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি আমদানি একেবারে বন্ধ করে দেয়। এর বাইরে কোরিয়া, জাপানসহ আরও কয়েকটি দেশ আমদানি চালু রাখলেও তাতে কঠিন শর্তারোপ করে। যার ফলে অদক্ষ ও আধাদক্ষ জনশক্তি রফতানি প্রায় বন্ধের উপক্রম হয়েছে। অর্থনৈতিক সমীক্ষার প্রতিবেদন অনুসারে বিশ্বের কোনো দেশে অদক্ষ জনশক্তি রফতানি করা যাচ্ছে না। ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে আধাদক্ষ জনশক্তি রফতানির হার। ২০০২ সালে প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে আধাদক্ষ জনশক্তির পরিমাণ ছিল ১৬ শতাংশ, ২০১২ সালে তা নেমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩ শতাংশে। ২০০৮ সালে আধাদক্ষ প্রবাসীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৩২ হাজার ৮১০ জন; তার আগের বছর এ সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ছিল। কিন্তু ২০১২ সালে এসে এ সংখ্যা মাত্র ২০ হাজার ৪৯৮ জনে নেমে এসেছে। এছাড়া পেশাজীবী বাংলাদেশীদের চাহিদাও বিদেশে শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। ২০০২ সালে প্রবাসী পেশাজীবীর সংখ্যা ছিল ১৪ হাজার ৪৫০ জন; কিন্তু ২০১২ সালে এসে সে পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মাত্র ৮১২ জনে।
মধ্যপ্রাচ্যে জনশক্তি রফতানি কমে যাওয়ার বিষয়ে ২০১৩ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশ কর্মরত মোট শ্রমিকের ৭০ শতাংশেরও বেশি মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত। সাম্প্রতিক সময়ে এ অঞ্চলের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বাংলাদেশের শ্রমবাজারের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দেশভিত্তিক জনশক্তি রফতানি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরবে ২ লাখ ৪ হাজার ১১২ জনশক্তি কর্মরত ছিল, সম্পর্কের টানাপড়েনের কারণে ৫ বছর ধরে ক্রমে এ সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকে। বিগত ৫ বছরই সৌদি আরব বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি আমদানি বন্ধ রেখেছে। বর্তমানে সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশীদের সংখ্যা ২১ হাজার ২৩২ জন।
বাংলাদেশী জনশক্তির জন্য সহজ স্বপ্নের জায়গা কুয়েত। খুব অল্প খরচে সেখানে সামান্য পরিশ্রম করেই অধিক আয় করা সম্ভব বলে কুয়েত বাংলাদেশীদের সবচেয়ে বেশি পছন্দের দেশ। কিন্তু সেদেশে জনশক্তি রফতানির পরিমাণ ৪৭ হাজার থেকে কমে মাত্র ২ জনে নেমে এসেছে। আরেক সহজলভ্য দেশ মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি ২ লাখ ৭৩ হাজার ২০১ জন থেকে কমে গত বছর মাত্র ৮০৪ জনে নেমে এসেছে। বর্তমান সরকারের মেয়াদে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি সরকারি উদ্যোগে স্বল্পপরিসরে রফতানি শুরু হয়েছে। নতুন নতুন দেশে বাংলাদেশীদের চাহিদা কিছুটা বাড়লেও ২০০৮ সালের তুলনায় ২০১২ সালে পুরনো বাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৫০ শতাংশ কমেছে। তবে বাহরাইন, ওমান ও সিঙ্গাপুরে অতিসামান্য হারে বেড়েছে।
বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স প্রাপ্তির পরিমাণও পুরনো বাজার থেকে অনেক কমেছে। ২০০২-০৩ অর্থবছরের সৌদি আরব থেকে সবচেয়ে বেশি ৪১ শতাংশ রেমিট্যান্স আসত; কিন্তু ২০১২-১৩ অর্থবছরে তা ২৭.৩ শতাংশে নেমে এসেছে। কুয়েত থেকে ১১.১ শতাংশ থেকে কমে ৮ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৫ শতাংশ থেকে কমে ১২.৪ শতাংশে নেমে এসেছে।
এসব বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বিদেশগামীর প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমেছে। কিন্তু মোট প্রবাসীর সংখ্যা কিন্তু ধীরে ধীরে বাড়ছে। কিছু সমস্যার কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রফতানির পরিমাণ কমেছে। সৌদি আরব আমাদের বড় বাজার, সেখানকার সমস্যার সমাধান হয়নি। মালয়েশিয়ার সমস্যা কিছুটা হলেও সমাধান হয়েছে। সমস্যা সমাধানের জন্য কূটনৈতিকভাবে কাজ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, সেন্ট্রাল এশিয়ান কৃষিকাজে শ্রমের স্বল্পতা রয়েছে। এছাড়া পূর্ব ইউরোপে বিভিন্ন দেশেও জনশক্তি রফতানি হতে পারে। জনশক্তি রফতানি বাড়াতে এসব নতুন নতুন দেশে প্রচেষ্টা চালানো উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বেসরকারিভাবে শ্রমিক রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, কয়েক বছরে জনশক্তি রফতানি আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। রাষ্ট্রীয় নীতির দুর্বলতা, কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি, সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ের অভাব এবং বিশ্বব্যাপী আর্থিক মন্দা রফতানি কমে যাওয়ার জন্য দায়ী।
সরকারের ব্যর্থতা ও নীতিহীনতার কারণে বিদেশে জনশক্তি রফতানি মারাত্মকভাবে কমেছে। মাত্র ৫ বছরের ব্যবধানে জনশক্তি রফতানি কমেছে সাড়ে ৩০ শতাংশ। আর এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ৪৬ শতাংশ। চলতি ২০১৩ সালের মে মাস পর্যন্ত মোট ১ লাখ ৭৪ হাজার ২২৭ জন বিদেশে গেছেন, যা গত বছরের এ সময়ের তুলনায় ৪৬ শতাংশ। গত বছরের এ সময় পর্যন্ত বিদেশগামীর সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ২১ হাজার ৭২৭ জন। ৫ বছর আগে ২০০৮ সালে বিদেশে গেছেন মোট ৮ লাখ ৭৫ হাজার ৫৫ জন, যা ২০১২ সালের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি। এদিকে চলতি বছরে সর্বমোট ৪ লাখের মতো জনশক্তি রফতানি হতে পারে বলে বিএমইটি জানিয়েছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৬ লাখের মতো। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে জনশক্তি রফতানি ২ লাখ কম হবে।
জনশক্তি রফতানি কম হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে ব্যুরো অব ম্যানপাওয়ার এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং (বিএমইটি) মহাপরিচালক (ডিজি) শামছুন নাহার বলেন, গত বছরের তুলনায়
চলতি বছর জনশক্তি রফতানি কম হয়েছে। দক্ষ, অভিবাসনের খরচ কমানো এবং জনশক্তির সামাজিক কল্যাণ—এ তিনটি বিষয়কে নিশ্চিত করে রফতানির প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। যার কারণে জনশক্তি রফতানি কমে যাচ্ছে। চলতি বছরও ৪ লাখ জনশক্তি রফতানি হতে পারে। আগের বছরও এর পরিমাণ ছিল ৬ লাখ। তবে জনশক্তি রফতানি বাড়াতে নতুন নতুন দেশ খোঁজা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত বিগত ১০ বছরের জনশক্তি রফতানির পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০০২ সালে মোট প্রবাসীর সংখ্যা ছিল ২ লাখ ২৫ হাজার ২৫৬ জন। ক্রমান্বয়ে বাড়তে বাড়তে এ সংখ্যা ২০০৮ সালে ৮ লাখ ৭৫ হাজার ৫৫ জনে উন্নীত হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে বিদেশে জনশক্তি রফতানির পরিমাণ কমতে থাকে। ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম বছরে ২০০৯ সালে রফতানির পরিমাণ অর্ধেক কমে যায়। ওই বছরে মোট প্রবাসীর সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৭৮ জন, যা ২০০৮ সালের তুলনায় প্রায় ৪৭ শতাংশ কম। শাসন ক্ষমতার ৪ বছর পর ২০১২ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৬ লাখ ৭ হাজার ৭৯৮ জনে। যা ২০০৮ সালের তুলনায় ২ লাখ ৬৭ হাজার ২৫৭ জন কম। গত বছরে ২০০৮ সালের তুলনায় জনশক্তি রফতানি কমেছে ৩০ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
বিএমইটি থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, চলতি ২০১৩ সালের প্রতি মাসেই গত বছরের একই সময়ের তুলনায় জনশক্তি রফতানি অর্ধেকের কাছাকাছি কম হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে জনশক্তি রফতানি হয়েছে ৩৮ হাজার ৩৩৭ জন। গত বছরের এ সময়ে এ পরিমাণ ছিল ৬৭ হাজার ৭৩৮ জন। অর্থাত্ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম মাসে ২৯ হাজার ৪০১ জন কম। ফেব্রুয়ারি মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৮ হাজার কমে ৩২ হাজার ৫৮৯ জন রফতানি হয়েছে। এছাড়া মার্চে ২১ হাজার ২ জন কমে ৩৭ হাজার ১০০ জন এবং এপ্রিলে ৩০ হাজার ৮৯৪ জন কমে ৩২ হাজার ২৮১ জন রফতানি হয়েছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ৬০ হাজার ৫৪১ জন, মার্চে ৫৮ হাজার ১০২ জন এবং এপ্রিলে ৬৩ হাজার ১৭৫ জনশক্তি রফতানি হয়েছিল।
বহির্বিশ্ব বিশেষ করে মধ্যপ্রাচের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সমস্যা প্রকট হওয়ার কারণে সৌদি আরব, কুয়েত, মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি আমদানি একেবারে বন্ধ করে দেয়। এর বাইরে কোরিয়া, জাপানসহ আরও কয়েকটি দেশ আমদানি চালু রাখলেও তাতে কঠিন শর্তারোপ করে। যার ফলে অদক্ষ ও আধাদক্ষ জনশক্তি রফতানি প্রায় বন্ধের উপক্রম হয়েছে। অর্থনৈতিক সমীক্ষার প্রতিবেদন অনুসারে বিশ্বের কোনো দেশে অদক্ষ জনশক্তি রফতানি করা যাচ্ছে না। ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে আধাদক্ষ জনশক্তি রফতানির হার। ২০০২ সালে প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে আধাদক্ষ জনশক্তির পরিমাণ ছিল ১৬ শতাংশ, ২০১২ সালে তা নেমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩ শতাংশে। ২০০৮ সালে আধাদক্ষ প্রবাসীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৩২ হাজার ৮১০ জন; তার আগের বছর এ সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ছিল। কিন্তু ২০১২ সালে এসে এ সংখ্যা মাত্র ২০ হাজার ৪৯৮ জনে নেমে এসেছে। এছাড়া পেশাজীবী বাংলাদেশীদের চাহিদাও বিদেশে শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। ২০০২ সালে প্রবাসী পেশাজীবীর সংখ্যা ছিল ১৪ হাজার ৪৫০ জন; কিন্তু ২০১২ সালে এসে সে পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মাত্র ৮১২ জনে।
মধ্যপ্রাচ্যে জনশক্তি রফতানি কমে যাওয়ার বিষয়ে ২০১৩ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশ কর্মরত মোট শ্রমিকের ৭০ শতাংশেরও বেশি মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত। সাম্প্রতিক সময়ে এ অঞ্চলের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বাংলাদেশের শ্রমবাজারের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দেশভিত্তিক জনশক্তি রফতানি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরবে ২ লাখ ৪ হাজার ১১২ জনশক্তি কর্মরত ছিল, সম্পর্কের টানাপড়েনের কারণে ৫ বছর ধরে ক্রমে এ সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকে। বিগত ৫ বছরই সৌদি আরব বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি আমদানি বন্ধ রেখেছে। বর্তমানে সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশীদের সংখ্যা ২১ হাজার ২৩২ জন।
বাংলাদেশী জনশক্তির জন্য সহজ স্বপ্নের জায়গা কুয়েত। খুব অল্প খরচে সেখানে সামান্য পরিশ্রম করেই অধিক আয় করা সম্ভব বলে কুয়েত বাংলাদেশীদের সবচেয়ে বেশি পছন্দের দেশ। কিন্তু সেদেশে জনশক্তি রফতানির পরিমাণ ৪৭ হাজার থেকে কমে মাত্র ২ জনে নেমে এসেছে। আরেক সহজলভ্য দেশ মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি ২ লাখ ৭৩ হাজার ২০১ জন থেকে কমে গত বছর মাত্র ৮০৪ জনে নেমে এসেছে। বর্তমান সরকারের মেয়াদে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি সরকারি উদ্যোগে স্বল্পপরিসরে রফতানি শুরু হয়েছে। নতুন নতুন দেশে বাংলাদেশীদের চাহিদা কিছুটা বাড়লেও ২০০৮ সালের তুলনায় ২০১২ সালে পুরনো বাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৫০ শতাংশ কমেছে। তবে বাহরাইন, ওমান ও সিঙ্গাপুরে অতিসামান্য হারে বেড়েছে।
বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স প্রাপ্তির পরিমাণও পুরনো বাজার থেকে অনেক কমেছে। ২০০২-০৩ অর্থবছরের সৌদি আরব থেকে সবচেয়ে বেশি ৪১ শতাংশ রেমিট্যান্স আসত; কিন্তু ২০১২-১৩ অর্থবছরে তা ২৭.৩ শতাংশে নেমে এসেছে। কুয়েত থেকে ১১.১ শতাংশ থেকে কমে ৮ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৫ শতাংশ থেকে কমে ১২.৪ শতাংশে নেমে এসেছে।
এসব বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বিদেশগামীর প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমেছে। কিন্তু মোট প্রবাসীর সংখ্যা কিন্তু ধীরে ধীরে বাড়ছে। কিছু সমস্যার কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রফতানির পরিমাণ কমেছে। সৌদি আরব আমাদের বড় বাজার, সেখানকার সমস্যার সমাধান হয়নি। মালয়েশিয়ার সমস্যা কিছুটা হলেও সমাধান হয়েছে। সমস্যা সমাধানের জন্য কূটনৈতিকভাবে কাজ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, সেন্ট্রাল এশিয়ান কৃষিকাজে শ্রমের স্বল্পতা রয়েছে। এছাড়া পূর্ব ইউরোপে বিভিন্ন দেশেও জনশক্তি রফতানি হতে পারে। জনশক্তি রফতানি বাড়াতে এসব নতুন নতুন দেশে প্রচেষ্টা চালানো উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বেসরকারিভাবে শ্রমিক রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, কয়েক বছরে জনশক্তি রফতানি আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। রাষ্ট্রীয় নীতির দুর্বলতা, কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি, সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ের অভাব এবং বিশ্বব্যাপী আর্থিক মন্দা রফতানি কমে যাওয়ার জন্য দায়ী।
No comments:
Post a Comment