প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদপত্র নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ন্যায়বিচার অধরা। ক্ষমতা কাঠামোর মধ্যে অবস্থানকারী কারও বিরুদ্ধে বিচার পাওয়া বিরল ঘটনা। নিবন্ধে বলা হয়, পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীকে চরমভাবে রাজনীতিকীকরণ করা হয়েছে। তারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের লেগাসি বয়ে বেড়াচ্ছে।
গতকাল পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণে ‘জাস্টিস স্টিল ইল্যুসিভ ইন ফ্যাক্টরি ডিজাস্টারস ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে প্রকাশিত নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়।
প্রতিরোধযোগ্য দুর্ঘটনায় বাংলাদেশের শত শত গার্মেন্ট শ্রমিক নিহত হলেও ক্ষমতাধর গার্মেন্ট মালিকদের বিচার না হওয়ার বিষয়টির ওপর আলোকপাত করা হয়েছে নিবন্ধটিতে। এতে বাংলাদেশের গার্মেন্টে সাম্প্রতিক সংঘটিত দুটি ভয়াবহ ট্র্যাজেডি— সাভারের রানা প্লাজা ও তাজরীন ফ্যাশনে শত শত শ্রমিকের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এর মালিকদের আদৌ বিচার হবে না। জিম ইয়ার্ডলির লেখা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২১ নম্বর আদালত কক্ষে (হাইকোর্টের) দেখা গেল তাজরীন ফ্যাশনের মালিক দেলোয়ার হোসেন নীরবে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি সন্দেহভাজন অপরাধী; কিন্তু তাকে নার্ভাস মনে হলো না।
সম্ভবত এর কারণ, তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি এবং হয়তো কখনও হবেও না। তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ডে ১১২ শ্রমিক নিহত হওয়ার পর তিনি একজন ঘৃণিত ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন।
সরকার গঠিত একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটির তদন্তে দেখা গেছে, কারখানাটিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি ছিল এবং তাকে ‘ক্ষমার অযোগ্য অবহেলার’ জন্য দায়ী করা হয়েছে।
নিবন্ধে বলা হয়, ১৯ জুন দেলোয়ার যখন আদালত থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলেন তখন একজন মহিলা তাকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি রাতে ঘুমান কীভাবে?’ এর চেয়েও বেশি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন হতে পারত : বাংলাদেশে যেখানে গার্মেন্টশিল্প অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে এবং রাজনৈতিকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী, সেখানে দেলোয়ারের মতো কারখানার মালিকের বিচার কি সম্ভব?
এখন অনস্বীকার্যভাবে পরীক্ষার পালা। তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ডের পর গত এপ্রিলে রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১২৯ শ্রমিক মারা যায়। এটা ছিল গার্মেন্টশিল্পের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয়। যখন ভবনটির ধ্বংসস্তূপ থেকে ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হচ্ছিল, সেই দৃশ্য দেখে হঠাত্ করেই পশ্চিমাদের ধারণা পাল্টে যায়। গার্মেন্টশিল্পে নিরাপত্তা সমস্যা এবং শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া হিসেবে গত সপ্তাহে ওবামা প্রশাসন বাংলাদেশের বাণিজ্য সুবিধা (জিএসপি) স্থগিত করে দেয়।
বাংলাদেশে গার্মেন্টশিল্পে অহরহই অগ্নিকাণ্ড এবং দুর্ঘটনা ঘটে। একটি হিসাবে দেখা যায়, ১৯৯০ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সময়ে ১ হাজারের বেশি শ্রমিক নিহত হয়েছে। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এ অপরাধে এখন পর্যন্ত একজন মালিকের বিরুদ্ধেও মামলা হয়নি।
নৃবিজ্ঞানী এবং সমাজকর্মী সাদিয়া গুলরুখ বলেন, ‘আমরা একটি আইনি নজির স্থাপন করতে চাই যে কারখানার মালিকরা এভাবে পার পেতে পারেন না।’
একদিক থেকে বলা যায়, দেলোয়ারের বিষয়ে আদালতে যে শুনানি চলছে তা হচ্ছে উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে। আদালতে তার অপরাধের কোনো বিচার হচ্ছে না। গুলরুখ এবং অন্যান্য মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীরা বলছেন, পুলিশি তদন্ত বন্ধ থাকায় তারা হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়েছেন যেন তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়। ইতোমধ্যেই বিচার প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে গেছে এবং এতে আরও কয়েক মাস বা তারও বেশি সময় লাগতে পারে।
নিবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় ক্ষমতা কাঠামোর মধ্যে অবস্থানকারী কারও বিরুদ্ধে বিচার পাওয়া বিরল। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী যুগে প্রণীত আইনি ব্যবস্থা এখনও অটুট আছে। সে সময় এসব আইন করা হয়েছিল জনগণকে (বিদ্রোহ) নিয়ন্ত্রণের জন্য এবং ঔপনিবেশিক ক্ষমতা কাঠামো ধরে রাখার জন্য। অধিকন্তু পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীকে চরমভাবে রাজনীতিকীকরণ করা হয়েছে। তারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের লেগাসি বয়ে বেড়াচ্ছে।
নিবন্ধে বলা হয়, অনেক গার্মেন্ট মালিক এখন শীর্ষ ক্ষমতাধর। অনেকে সংসদ সদস্য। পোশাক রফতানি করে আসে মোট রফতানির ৮০ শতাংশ। এ কারণে গার্মেন্টশিল্পের অর্থনৈতিক ক্ষমতা ব্যাপক। জাতীয় নির্বাচনে গার্মেন্ট মালিকরা নির্বাচনী প্রচারণায় তহবিল জোগান দেন। এর ফলে তাদের রাজনৈতিক প্রভাবও ব্যাপক। যেমন রানা প্লাজা ধসের আগে প্রকৌশলীরা সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে ভবনটি নিরাপদ নয়। কিন্তু তারপরও শ্রমিকদের ভেতরে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। এরপর ভবন মালিক ও আওয়ামী লীগ নেতা সোহেল রানা পালিয়ে যান। ধারণা করা হয়, সরকারি দলের নেতা হওয়ায় তার বিচার হবে না।
তবে ব্যতিক্রম ঘটনা হিসেবে সোহেল রানাকে গ্রেফতার করার আদেশ দেয় হাইকোর্ট।
এ ব্যাপারে ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ‘এটা ছিল অস্বাভাবকি ঘটনা। আমি মনে করি, এটা সম্ভব হয়েছে দেশি-বিদেশি ক্ষোভের কারণে।’
নিবন্ধে বলা হয়, দেলোয়ারের বিরুদ্ধে হত্যামামলা দায়ের করেছিলেন দুর্ঘটনায় বোন হারানো মতিকুল ইসলাম মতিন। এরপর থেকেই তাকে টেলিফোনে হুমকি দেয়া হচ্ছে। এখন তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
ক্ষুব্ধ মতিন বলেন, ‘আমি ন্যায়বিচার চাই। পুরো ব্যবস্থা (রাষ্ট্রযন্ত্র) দেলোয়ারের মতো লোকদের পক্ষে। তিনি একজন ধনী মানুষ। আমাদের কথা যাদের শোনার কথা ছিল, তারা এখন দেলোয়ারকে রক্ষা করে চলছেন।
গতকাল পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণে ‘জাস্টিস স্টিল ইল্যুসিভ ইন ফ্যাক্টরি ডিজাস্টারস ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে প্রকাশিত নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়।
প্রতিরোধযোগ্য দুর্ঘটনায় বাংলাদেশের শত শত গার্মেন্ট শ্রমিক নিহত হলেও ক্ষমতাধর গার্মেন্ট মালিকদের বিচার না হওয়ার বিষয়টির ওপর আলোকপাত করা হয়েছে নিবন্ধটিতে। এতে বাংলাদেশের গার্মেন্টে সাম্প্রতিক সংঘটিত দুটি ভয়াবহ ট্র্যাজেডি— সাভারের রানা প্লাজা ও তাজরীন ফ্যাশনে শত শত শ্রমিকের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এর মালিকদের আদৌ বিচার হবে না। জিম ইয়ার্ডলির লেখা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২১ নম্বর আদালত কক্ষে (হাইকোর্টের) দেখা গেল তাজরীন ফ্যাশনের মালিক দেলোয়ার হোসেন নীরবে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি সন্দেহভাজন অপরাধী; কিন্তু তাকে নার্ভাস মনে হলো না।
সম্ভবত এর কারণ, তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি এবং হয়তো কখনও হবেও না। তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ডে ১১২ শ্রমিক নিহত হওয়ার পর তিনি একজন ঘৃণিত ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন।
সরকার গঠিত একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটির তদন্তে দেখা গেছে, কারখানাটিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি ছিল এবং তাকে ‘ক্ষমার অযোগ্য অবহেলার’ জন্য দায়ী করা হয়েছে।
নিবন্ধে বলা হয়, ১৯ জুন দেলোয়ার যখন আদালত থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলেন তখন একজন মহিলা তাকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি রাতে ঘুমান কীভাবে?’ এর চেয়েও বেশি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন হতে পারত : বাংলাদেশে যেখানে গার্মেন্টশিল্প অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে এবং রাজনৈতিকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী, সেখানে দেলোয়ারের মতো কারখানার মালিকের বিচার কি সম্ভব?
এখন অনস্বীকার্যভাবে পরীক্ষার পালা। তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ডের পর গত এপ্রিলে রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১২৯ শ্রমিক মারা যায়। এটা ছিল গার্মেন্টশিল্পের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয়। যখন ভবনটির ধ্বংসস্তূপ থেকে ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হচ্ছিল, সেই দৃশ্য দেখে হঠাত্ করেই পশ্চিমাদের ধারণা পাল্টে যায়। গার্মেন্টশিল্পে নিরাপত্তা সমস্যা এবং শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া হিসেবে গত সপ্তাহে ওবামা প্রশাসন বাংলাদেশের বাণিজ্য সুবিধা (জিএসপি) স্থগিত করে দেয়।
বাংলাদেশে গার্মেন্টশিল্পে অহরহই অগ্নিকাণ্ড এবং দুর্ঘটনা ঘটে। একটি হিসাবে দেখা যায়, ১৯৯০ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সময়ে ১ হাজারের বেশি শ্রমিক নিহত হয়েছে। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এ অপরাধে এখন পর্যন্ত একজন মালিকের বিরুদ্ধেও মামলা হয়নি।
নৃবিজ্ঞানী এবং সমাজকর্মী সাদিয়া গুলরুখ বলেন, ‘আমরা একটি আইনি নজির স্থাপন করতে চাই যে কারখানার মালিকরা এভাবে পার পেতে পারেন না।’
একদিক থেকে বলা যায়, দেলোয়ারের বিষয়ে আদালতে যে শুনানি চলছে তা হচ্ছে উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে। আদালতে তার অপরাধের কোনো বিচার হচ্ছে না। গুলরুখ এবং অন্যান্য মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীরা বলছেন, পুলিশি তদন্ত বন্ধ থাকায় তারা হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়েছেন যেন তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়। ইতোমধ্যেই বিচার প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে গেছে এবং এতে আরও কয়েক মাস বা তারও বেশি সময় লাগতে পারে।
নিবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় ক্ষমতা কাঠামোর মধ্যে অবস্থানকারী কারও বিরুদ্ধে বিচার পাওয়া বিরল। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী যুগে প্রণীত আইনি ব্যবস্থা এখনও অটুট আছে। সে সময় এসব আইন করা হয়েছিল জনগণকে (বিদ্রোহ) নিয়ন্ত্রণের জন্য এবং ঔপনিবেশিক ক্ষমতা কাঠামো ধরে রাখার জন্য। অধিকন্তু পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীকে চরমভাবে রাজনীতিকীকরণ করা হয়েছে। তারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের লেগাসি বয়ে বেড়াচ্ছে।
নিবন্ধে বলা হয়, অনেক গার্মেন্ট মালিক এখন শীর্ষ ক্ষমতাধর। অনেকে সংসদ সদস্য। পোশাক রফতানি করে আসে মোট রফতানির ৮০ শতাংশ। এ কারণে গার্মেন্টশিল্পের অর্থনৈতিক ক্ষমতা ব্যাপক। জাতীয় নির্বাচনে গার্মেন্ট মালিকরা নির্বাচনী প্রচারণায় তহবিল জোগান দেন। এর ফলে তাদের রাজনৈতিক প্রভাবও ব্যাপক। যেমন রানা প্লাজা ধসের আগে প্রকৌশলীরা সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে ভবনটি নিরাপদ নয়। কিন্তু তারপরও শ্রমিকদের ভেতরে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। এরপর ভবন মালিক ও আওয়ামী লীগ নেতা সোহেল রানা পালিয়ে যান। ধারণা করা হয়, সরকারি দলের নেতা হওয়ায় তার বিচার হবে না।
তবে ব্যতিক্রম ঘটনা হিসেবে সোহেল রানাকে গ্রেফতার করার আদেশ দেয় হাইকোর্ট।
এ ব্যাপারে ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ‘এটা ছিল অস্বাভাবকি ঘটনা। আমি মনে করি, এটা সম্ভব হয়েছে দেশি-বিদেশি ক্ষোভের কারণে।’
নিবন্ধে বলা হয়, দেলোয়ারের বিরুদ্ধে হত্যামামলা দায়ের করেছিলেন দুর্ঘটনায় বোন হারানো মতিকুল ইসলাম মতিন। এরপর থেকেই তাকে টেলিফোনে হুমকি দেয়া হচ্ছে। এখন তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
ক্ষুব্ধ মতিন বলেন, ‘আমি ন্যায়বিচার চাই। পুরো ব্যবস্থা (রাষ্ট্রযন্ত্র) দেলোয়ারের মতো লোকদের পক্ষে। তিনি একজন ধনী মানুষ। আমাদের কথা যাদের শোনার কথা ছিল, তারা এখন দেলোয়ারকে রক্ষা করে চলছেন।