Tuesday 26 November 2013

ধানমণ্ডিতে আড়াইশ কোটি টাকার সরকারি বাড়ি হাতছাড়ার পথে ,ফেঁসে যাচ্ছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমান সচিব


সাবেক গৃহায়ন ও পূর্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান এবং কর্মরত পূর্ত সচিব ড. খোন্দকার শওকত হোসেনের ক্ষমতা অপব্যবহার করার কারণে রাজধানীর ধানমণ্ডির অভিজাত এলাকায় সরকারের প্রায় আড়াইশ’ কোটি টাকা মূল্যের বাড়ি হাতছাড়া হতে বসেছে। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আপত্তি উপেক্ষা করে বাড়িটি সরকারের পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকা থেকে ভুয়া ব্যক্তির অনুকূলে অবমুক্ত করে দেয়া হয়। সরকার ও জনস্বার্থের পরিপন্থী এ সিদ্ধান্ত ফাঁস হয়ে গেলে অবমুক্ত করার সিদ্ধান্ত পরে বাতিল করা হয়। কিন্তু পরে এ সংক্রান্ত নোটশিট ফাইল থেকে গায়েব করে স্থিতাবস্থার সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এ ফাইলটি প্রতিমন্ত্রীর বাসায় পাঁচ মাস ধরে পড়েছিল। এর মধ্যে ফাইলটির একরকম কোনো হদিসই ছিল না। ফাইল মুভমেন্টের রেজিস্টার থেকেও রহস্যজনকভাবে পাতা ছিঁড়ে ফেলা হয়। এমনকি ফাইলে দুজন যুগ্ম সচিবের গুরুত্বপূর্ণ মতামতের নোটশিটও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

এদিকে গুরুতর এসব অনিয়মের বিষয় তদন্ত করতে একজন যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি আজ থেকে কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। ওদিকে পূর্ত সচিব ড. শওকত নিজের ও পরিবারের মধ্যে বরাদ্দ পাওয়া রাজউকের প্লটের আয়তন বৃদ্ধি ও স্থানান্তরের ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।
এদিকে এ বিষয়ে পূর্ত সচিব ড. খোন্দকার শওকত হোসেন আত্মপক্ষ সমর্থন করে যুগান্তরকে বলেন, সংশ্লিষ্ট বাড়ির বিষয়ে তার নিজের কোনো দায় নেই। তিনি বরং শুরু থেকেই বাড়িটি রক্ষার চেষ্টা করেছেন। যা কিছু হস্তক্ষেপ প্রতিমন্ত্রীই করেছেন। ফাইল থেকে যেসব কাগজপত্র, নোটশিট খোয়া গেছে সে জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্লট পাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি এবং তার পরিবারের কেউ কোনো অনিয়ম কিংবা ক্ষমতার অপব্যবহার করেননি।
আলোচিত বাড়িটি : সরকারের পরিত্যক্ত তালিকার এ বাড়িটি (বাড়ি নং ১৩১/এ, রোড নং-১, ঢাকা সিটি কলেজের পাশ দিয়ে জিগাতলার দিকে যেতে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পাশে) ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকায় অবস্থিত। এক বিঘা আয়তনের ২০ কাঠা জমির ওপর একতলা বাড়িতে চার ইউনিটে মোট ১২টি কক্ষ রয়েছে। ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করেন চার সরকারি কর্মকর্তা। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় অবাঙালি নাগরিক বাড়িটি ফেলে চলে যায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাড়ির মালিক দাবিদার কেউ ফিরে না আসায় বাড়িটি সরকারের পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। এরপর মুক্তিযোদ্ধাসহ সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে সরকারি নিয়মানুযায়ী আবাসন পরিদফতর থেকে মাসিক ভাড়া ভিত্তিতে বরাদ্দ দেয়া হয়। অথচ দেশ স্বাধীন হওয়ার ২৪ বছর পর জনৈক এস নেহাল আহমেদ নামে এক ব্যক্তি এই বাড়ির ১০ কাঠা জমির মালিক দাবি করে প্রথম কোর্ট অব সেটেলমেন্টে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ মামলায় সরকারের পক্ষে কেউ লিখিতভাবে কোনো তথ্য দিয়ে ভূমিকা রাখেনি। শক্তভাবে সরকারের তরফ থেকে ভূমিকা না রাখায় রায় চলে যায় বাদীর পক্ষে। এমনকি এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে কোনো আপিলও করা হয়নি। এদিকে কোর্ট অব সেটেলমেন্টের রায় বাস্তবায়ন না করায় নেহাল আহমেদ হাইকোর্টে রিট করেন। এখানেও সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো ভূমিকা না রাখায় সরকারের বিরুদ্ধে রায় হয়। এরপর কোর্ট অব সেটেলমেন্ট ও হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়ন না হওয়ায় বাদী নেহাল আহমেদ সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে সরকারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করেন। এর মধ্যে সরকার আপিল করলে ৯৭৩ দিন বিলম্বে আপিল করায় আদালত তা ডিসমিসড করে দেন। ওদিকে সলিসিটর উইংও তাদের মতামতে জানিয়ে দেয় যে, এতে আপিল করে কোনো সুফল পাওয়া যাবে না। বরং বলা হয়, কোর্ট অব সেটেলমেন্টের রায়ের পর দীর্ঘ ১৫ বছর পার হয়ে গেলেও ওই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে কোনো রিট পিটিশন দেয়া হয়নি।
প্রতিমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ : আদালতের সব রায় যখন নেহাল আহমেদের পক্ষে তখন তিনি গত বছর মার্চ মাসে প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খানের কাছে বাড়ির দখল বুঝে পেতে আবেদন করেন। এরপর ২৯ মার্চ প্রতিমন্ত্রীর মৌখিক নির্দেশে মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলের তৎকালীন উপসচিব মোঃ হেমায়েত হোসেন সংশ্লিষ্ট বাড়ির বিষয়ে তদন্ত শুরু করেন। তিনি ১৩ মে ১৭ পৃষ্ঠার তদন্ত রিপোর্ট জমা দেন। সেখানে তিনি সরকারের স্বার্থের অনেক বিষয় এড়িয়ে গিয়ে নেহালের পক্ষে রিপোর্ট দিয়ে বাড়িটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকা থেকে অবমুক্ত করার সুপারিশ করেন।
যুগ্ম সচিবকে ধমক : তদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর সুপ্রিমকোর্টের রায় অনুযায়ী বাড়িটি নেহাল আহমেদের অনুকূলে ছেড়ে দেয়ার জন্য আদেশ জারির উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু এ বিষয়ে আইনগত মতামত নিতে গেলে মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন আইন কর্মকর্তা ড. মনজুর কাদির বেঁকে বসেন। তিনি পুরো ফাইল স্টাডি করে দেখতে পান, এতে সরকারের পূর্ণ স্বার্থ রয়েছে। প্রভাবশালী একটি চক্র ভুয়া মালিক সাজিয়ে সরকারপক্ষকে মামলা ফেস করা থেকে কৌশলে বিরত রেখে পক্ষে রায় নিয়েছে। এছাড়া এ বাড়ি নিয়ে একাধিক মামলাও রয়েছে। সূত্র জানায়, আইন কর্মকর্তার কঠোর ও নেতিবাচক অবস্থান জানতে পেরে প্রতিমন্ত্রী ড. মনজুর কাদিরকে তার দফতরে ডেকে নিয়ে যান। সেখানে প্রতিমন্ত্রী তার বিশ্রাম কক্ষে মনজুর কাদিরকে নিয়ে সোজাসাফটা বলে দেন, ‘বাড়িটি অবমুক্ত করে দিতে হবে। কোনো কারণ শুনতে চাই না। শুনেছি, আপনি নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করছেন।’ এ সময় আইন কর্মকর্তা আবারও তার শক্ত অবস্থান তুলে ধরে যুক্তি উপস্থাপন করতে গেলে প্রতিমন্ত্রী তাকে ধমক দিয়ে নির্দেশ পালন করতে বলেন।
নোটশিট ও চিঠি গায়েব : সূত্র জানায়, আইন কর্মকর্তা ড. মনজুর কাদির এ বাড়িসহ আরও কয়েকটি বিতর্কিত বাড়ির বিষয়ে তার কঠোর অবস্থানে অনড় থাকেন। আলোচ্য বাড়িটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকা থেকে অবমুক্ত না করার জন্য তিনি ফাইলে বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপন করে শক্ত নোট দেন। এরপর তাকে পূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। এর মধ্যে ধানমণ্ডির এ বাড়িটি অবমুক্ত করে চিঠি ইস্যু করা হয়। চিঠিটি গেজেট আকারে প্রকাশের উদ্যোগ নেয়ার পুরো বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। ভবিষ্যতে এ নিয়ে দুদকে মামলা হওয়ার আশংকায় তিনি অবমুক্তির আদেশ বাতিল করে দেন। কিন্তু ফাইলটি রিলিজ না করে গত ১৮ জুন প্রতিমন্ত্রী ফাইলটি তলব করে তার বাসায় নিয়ে যান। গত প্রায় পাঁচ মাস ধরে এ ফাইলের কোনো হদিস ছিল না। প্রতিমন্ত্রী বিদায় নেয়ার আগে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এ ফাইলের অবস্থান জানার চেষ্টা করেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ফাইলের বিষয়ে দায়দায়িত্ব নির্ধারণ করতে সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে ইও নোট দেয়া হলে সংশ্লিষ্টদের টনক নড়ে। এরপর ১৮ নভেম্বর ফাইলটি প্রতিমন্ত্রীর বাসা থেকে তার পিএসের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু ফাইলের মধ্যে থাকা অবমুক্তির চিঠি, বাতিলের আদেশ এবং যুগ্ম সচিব ড. মনজুর কাদিরের নেতিবাচক মন্তব্যের নোটশিট কিছুই পাওয়া যায়নি। এমনকি এ বিষয়ে যুগ্ম সচিব রাশিদুল হাসান তার যুক্তি তুলে ধরে যে রিপোর্ট দিয়েছিলেন তাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এদিকে দেখা গেছে, শাখা-১০ এ ফাইল গতিবিধির নিবন্ধন রেজিস্টারের ৩১০ পৃষ্ঠাও কে বা কারা ছিঁড়ে সরিয়ে ফেলেছে। এ অবস্থায় পুরো বিষয়টি তদন্তের জন্য গত সপ্তাহে যুগ্ম সচিব রাশিদুল হাসানকে প্রধান করে এক সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অদৃশ্য নেহালের ভুয়া ঠিকানা : ধানমণ্ডির এ বাড়িটির মালিক দাবিদার ব্যক্তির নাম এস নেহাল আহমেদ। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ও তার পক্ষে রয়েছে। এ বিষয়ে গঠিত মন্ত্রণালয়ের একটি তদন্ত কমিটিও তার পক্ষে মতামত দিয়েছে। তার সব কিছুই সঠিক রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা হেমায়েত হোসেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তিনি তার বর্তমান বাসার ঠিকানার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। এত বড় সরকারি স্বার্থের বিষয় যেখানে সম্পৃৃক্ত সেখানে তিনি নেহালের বর্তমান ঠিকানা সরেজমিন যাচাই করা প্রয়োজন মনে করেননি। অথচ যুগান্তরের পক্ষ থেকে সরেজমিন সংশ্লিষ্ট ঠিকানায় গিয়ে নেহাল আহমেদ নামে কাউকে পাওয়া যায়নি। হেমায়েত হোসেনের তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, নেহাল আহমেদের বর্তমান ভাড়া বাসার ঠিকানা মোহাম্মদপুর জান্নাতবাগের বিজলি মহল্লার এফ ব্লকে। এর আগে তিনি থাকতেন একই ব্লকের ২৪/১৫ নম্বরের ভাড়া বাসায়। কিন্তু মঙ্গলবার এ দুটি ঠিকানায় গিয়ে তার নামে কাউকে ভাড়াটিয়া হিসেবে পাওয়া যায়নি। কিংবা এক বছর আগেও এ নামে সেখানে কেউ ছিলেন না বলে জানিয়েছেন ২৪/১৫ বাড়ির কেয়ারটেকার টুলু বেগম। একই কথা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে থাকা এ বাড়ির ভাড়াটিয়া সোহেল খান। আর ২১/১১ নম্বরের বাড়ির মালিকের নাম আতিকুর রহমান এবং এটি একটি মেসবাড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রীর সর্বশেষ অবস্থান : প্রতিমন্ত্রী গত ১৮ নভেম্বর এ বাড়ির ফাইলটি বাসা থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেন। সেখানে ৩৫ অনুচ্ছেদে ৭ লাইনের একটি মন্তব্য লিখে তারিখ ছাড়াই স্বাক্ষর করে দিয়েছেন। এতে মূলত বলা হয়েছে, উচ্চ আদালতে কনটেম্পট মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বাড়িটি পরিত্যক্ত তালিকা থেকে অবমুক্তির জন্য আদেশ জারি করা হয়েছিল। কিন্তু সিনিয়র সহকারী জজ, ১ম আদালত ঢাকার দেওয়ানি মামলায় নালিশি সম্পত্তিতে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। তাই আদালতের নির্দেশমতে স্থিতাবস্থা বজায় রাখা যেতে পারে। একই সঙ্গে আদালতের নির্দেশে নথিভুক্ত করা হল। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, প্রতিমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্তে কৌশলে অবমুক্তির আদেশ বাতিল করার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এর ফলে যখন আদালতের স্থিতাবস্থার নিষেধাজ্ঞা ওঠে যাবে তখন স্বাভাবিকভাবে অবমুক্তির আদেশটি পুনর্বহাল হয়ে যাবে। এতে করে এস নেহাল আহমেদ বাড়ির দখল পেয়ে যাবেন। তারা বলেন, নথিতে সব প্রমাণ না থাকলেও এ বাড়িটি ছেড়ে দিতে প্রতিমন্ত্রী ও সচিব প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সব সময় অযাচিত হস্তক্ষেপ করেন। আসলে নেহাল আহমেদ বলতে বাস্তবে কেউ নেই। সব জালজালিয়াতি করে একজন ভুয়া ব্যক্তিকে মালিক হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে। এর পেছনে রয়েছে প্রভাবশালী একটি ডেভেলপার গ্র“প। যারা এ জমির দখল বুঝে নিয়ে এখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করতে চায়। তারা জানান, এখানে বর্তমানে এক কাঠা জমির দাম ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা। এ হিসাবে ২০ কাঠা জমির দাম ২৪০ থেকে ২৫০ কোটি টাকা। আর মূল্যবান এ জমি হাতিয়ে নিতে প্রভাবশালী মহলটি পর্দার আড়ালে ঘাটে ঘাটে মোটা অংকের ঘুষও বিনিয়োগ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সচিবের প্লট বরাদ্দে পরিবারতন্ত্র : গৃহায়ন ও পূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. খোন্দকার শওকত হোসেন প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে ক্ষমতার চরম অপব্যবহার করেছেন। প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, সচিবের স্ত্রী ড. আয়শা বেগম ২০০৪ সালে (ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ) রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্রথমে ২৩নং সেক্টরে সাড়ে ৭ কাঠার একটি প্লট পান। ড. খোন্দকার শওকত পূর্ত সচিব হওয়ার পর স্ত্রীর সাড়ে ৭ কাঠার প্লটকে ১০ কাঠায় উন্নীত করাসহ একই প্রকল্পের ১৬নং সেক্টরে প্লটটি স্থানান্তর করেন। ২৩নং সেক্টরের চেয়ে ১৬নং সেক্টরের জমির দাম প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় তিনি এহেন উদ্যোগ নেন। শুধু তাই নয়, সচিবের স্ত্রীর প্লটটির দখল নেয়ার পর দেখা যায়, এর মোট আয়তন ১২ দশমিক ৩৭ কাঠা। অর্থাৎ বরাদ্দের তুলনায় ৩ কাঠা বেশি। এ অবস্থায় অবশিষ্ট ৩ কাঠার জন্য দ্বিগুণ মূল্য পরিশোধ করে মোট ১৩ কাঠা জমির টাকা পরিশোধ সাপেক্ষে সচিবের স্ত্রীর নামে রাজউক ইতিমধ্যে লিজ দলিলও করে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজউকের কয়েকজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, সবার প্লটের আয়তন বেশি হয় না। তবে সচিবের স্ত্রী বলে কথা! তাই ১০ কাঠার প্লট বাস্তবে ১৩ কাঠা হয়ে গেছে। আর প্লটের আয়তন বেশি হলে তা দ্বিগুণ মূল্যে দেয়া, না দেয়ার এখতিয়ার একমাত্র রাজউকের। কিন্তু সচিবের স্ত্রী হওয়ায় না চাইতে সব কিছু দ্রুত হয়ে গেছে।
এদিকে সচিব খোন্দকার শওকত নিজের নামে বরাদ্দ পাওয়া প্লট নিয়েও ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। পূর্ত সচিব হওয়ার আগে তিনি উত্তরা তৃতীয় পর্যায়ের প্রকল্পে ১৭নং সেক্টরে ৫ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ পান। কিন্তু সচিব হওয়ার পর এখানকার কম দামের প্লট তার পছন্দ হয়নি। এ জন্য প্রভাব খাটিয়ে তিনি তার প্লট স্থানান্তর করে উত্তরা দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পে ১০নং সেক্টরে নিয়ে আসেন। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তৃতীয় পর্যায়ের প্রকল্প অপেক্ষা দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের প্লটের দাম দু’গুণের বেশি। তবে শওকত হোসেন ইতিমধ্যে এই প্লট থেকে ২ কাঠা বিক্রি করে দিয়েছেন। অবশিষ্ট ৩ কাঠার ওপর ডেভেলপার দিয়ে বাড়ি করার প্রস্তুতি নিয়েছেন।
সূত্র জানিয়েছে, ড. খোন্দকার শওকত মায়ের নামে প্লট নিয়েও কম ক্ষমতা দেখাননি। তার মাতা জনৈক ব্যক্তির কাছ থেকে উত্তরা তৃতীয় পর্যায়ের প্রকল্পে ৫ কাঠার একটি প্লট কেনেন। কেনার পর প্লটদাতার কাছ থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়ে নেন। কিন্তু সচিব তার মায়ের কেনা এ প্লটটিও প্রভাব খাটিয়ে উত্তরা দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পে ১১নং সেক্টরে খাজা গরিব-এ নেওয়াজ এভিনিউয়ে নিয়ে আসেন। এখানে একজন প্রকৌশলীর অনুকূলে বরাদ্দ দেয়া প্লট বাতিল করে তার মায়ের নামে প্লট দেয়া হয়। কিন্তু কাকতালীয়ভাবে তার মায়ের ওই প্লটটিও মাপার সময় আয়তনে সাড়ে ৬ কাঠা হয়ে যায়। পরে অতিরিক্ত দেড় কাঠার জন্য দ্বিগুণ মূল্য পরিশোধ করে লিজ দলিল করে নেয়া হয়।
এদিকে এ বিষয়ে ড. খোন্দকার শওকত হোসেন যুগান্তরকে বলেন, এরশাদ সরকারের সময় তার মা তাদের একজন পূর্ব-পরিচিত ব্যক্তির কাছ থেকে এ প্লট কেনেন। কিন্তু প্লটটি সিভিল এভিয়েশনের বিমান উড্ডয়নের জিরো হাইটের আওতায় পড়ে যাওয়ায় সেখানে বাড়ি নির্মাণের জন্য রাজউক থেকে প্ল্যান পাওয়া যাচ্ছিল না। এ জন্য প্লটটি স্থানান্তর করা হয়েছে। আর প্লটের জমির পরিমাণ নিট ৫ কাঠা। সাড়ে ৬ কাঠার বিষয়টি সত্য নয়।
- See more at: http://www.jugantor.com/first-page/2013/11/27/44593#sthash.epReqAvp.dpuf

No comments:

Post a Comment