Wednesday 20 November 2013

ভারতে অর্ধেকেরও বেশি মানুষ শৌচাগার ব্যবহার করে না

odপ্রায় সোয়াশ’ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতে অর্ধেকেরও বেশি মানুষ শৌচাগার ব্যবহার করেন না, তাদের মূত্র বা মলত্যাগের মতো কাজগুলো সারতে হয় খোলা আকাশের নিচেই। মঙ্গলবার বিশ্ব শৌচাগার দিবসে এ তথ্য জানিয়েছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক। ভারতের অর্থনীতি যেখানে বিগত দুই দশকে প্রভূত উন্নতি করেছে, সেখানে কেন এখনও দেশের এত মানুষকে খোলা আকাশের নিচেই শৌচাগারের কাজ সারতে হচ্ছে? ভারতে শৌচাগারের ব্যবহার নিয়ে বিশ্ব ব্যাঙ্ক যে তথ্য দিয়েছে, তা রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো। গোটা দুনিয়ায় আড়াইশ’ কোটিরও বেশি মানুষের কোনও শৌচাগার নেই – আর তার মধ্যে একশ’ কোটিকেই মলত্যাগ করতে হয় চার দেওয়ালের বাইরে। এদের মধ্যে অন্তত ষাট কোটিই ভারতে, যেটা এ দেশের জনসংখ্যার ৫৩ শতাংশ। শৌচাগারের অভাবে বাইরে মলত্যাগ করতে যেতে হচ্ছে, আর তা মৃত্যু ডেকে আনছে অসংখ্য শিশুর। কিন্তু মুশকিল হল – স্বাস্থ্যসম্মত একটা শৌচাগারের অভাব যে একটা সমস্যা ও বিরাট স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি, বহু ভারতীয়র মধ্যে এখনও এই সচেতনতাই তৈরি হয়নি। শৌচাগার ব্যবহারের অভ্যাস নিয়ে গবেষণা করেছেন সুস্নাত চৌধুরী। তিনি বলছেন ভারতে ধনী-দরিদ্র, শহর-গ্রাম নির্বিশেষে অনেকেই এই একই মানসিকতার শরিক। শুধু গ্রামে নয়, মুম্বাই শহরেও একটু ভেতরের দিকেই খোলা রাস্তায় বা সমুদ্রের ধারেও লোককে মলত্যাগ করতে দেখা যায়।
সুস্নাত চৌধুরী বলেন, জরিমানার ভয় দেখিয়ে বা দেবদেবীর ছবিওলা টাইলস লাগিয়ে ভারতে মানুষকে প্রকাশ্য স্থানে মূত্রত্যাগ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করতে হয়। এর থেকে বোঝা যায়, ভয়ে বা ভক্তিতেই মানুষকে এ কাজ থেকে আটকানোর চেষ্টা করতে হয় – কিন্তু খোলা আকাশের নিচে মল-মূত্রত্যাগ করার ব্যাপারটা আসলে তার ভেতরেই আছে। অর্থাৎ কোটি কোটি ভারতীয়র মধ্যে এই ধারণাটা এখনও মজ্জায় মজ্জায় ঢুকে আছে যে মলত্যাগ বা মূত্রত্যাগ বাইরে করলে সমস্যা কিছু নেই। সামাজিক লজ্জা সংকোচ তো অনেক দূরের কথা, এই অভ্যাসের জন্য যে জল দূষিত হচ্ছে, ডায়রিয়া বা আরও অন্যান্য রোগ উন্নয়নশীল বিশ্বে প্রতি বিশ সেকেন্ডে একটি শিশুর মৃত্যু ডেকে আনছে, সেটাও তারা জানেন না। আসলে ভারতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে গরিব মানুষেরও আর্থিক স্বাচ্ছল্য হয়তো বেড়েছে, কিন্তু শৌচাগার তৈরি করাটা তাদের অগ্রাধিকারেই পড়ে না। সুস্নাত চৌধুরী বলেন, দেশের প্রত্যন্ত এক জেলার চাষীর হাতে ফসল বেচে কিছু টাকা এলে তিনি হয়তো বাড়িতে শৌচাগার বানানোর আগে একটা রঙিন টিভি কেনার কথাই ভাববেন। তার কারণ আর কিছুই নয়, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাইরে যাওয়াটাই এসব মানুষের অভ্যাস আর বহু বছরের সেই অভ্যাসটা পাল্টানো খুব কঠিন। বিশ্ব ব্যাঙ্কসহ সরকারি ও বেসরকারি বহু সংস্থা ভারতে এখন ঠিক এই কঠিন চ্যালেঞ্জটারই মোকাবিলার চেষ্টা করছে, আর দেশের রাজনীতিতেও বিতর্ক চলছে শৌচালয় না দেবালয় – কোনটা বেশি জরুরি। আর এই আবহেই আস্তে আস্তে আরও বহু ভারতীয় তাদের আজন্মলালিত অভ্যাস পাল্টাচ্ছেন, চার দেওয়ালের ঘেরাটোপে আর ছাদের নিচে তারা মূত্র বা মলত্যাগ করতে শিখছেন ধীরে ধীরে। তথ্য সূত্র: বিবিসি

No comments:

Post a Comment